রওজা শরীফে প্রথম দিন


ফায়যুর রাহমান :

আলহামদুলিল্লাহ, আরশে আজিমের মালিক আমাকে নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারতের তৌফিক দিলেন। গতকাল আসরের পরে মক্কা থেকে মদিনায় পৌঁছলাম। মসজিদে নববীতে মাগরিবের নামাজ পড়ে “বাবুস-সালাম” দিয়ে রওজা শরীফে গিয়ে প্রাণের আকুতিতে নবীজিকে সালাম দিলাম।

দেশ থেকে আসার সময় ও আসার পরে যারা কাতর কন্ঠে বলেছিলেন- “আমার সালাম কইও দরবারে নবীর”, সবার নাম ধরে ধরে রওজা মোবারকে সালাম দিয়েছি। যারা হালকাভাবে বলেছিলেন, তাদেরকে দ্বিতীয় পর্যায়ে রেখে যেইমাত্র তাদের সালাম দিতে যাব, তখনই পুলিশ এসে “ইয়াল্লা, হাজ্জি” বলে আর দাঁড়াতে দিল না!

যদিও এখানে পুলিশের দোষ নাই, পেছনে হাজার হাজার জিয়ারতকারী, একজন যদি রওজা মোবারকের সামনে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকে, পেছনে হাজারো মানুষের চাপে জিয়ারত-ব্যবস্থাপনা ব্যহত হবে।

আমি চেষ্টা করব পরেরবার রওজা মোবারকে তাদের সালাম পৌঁছে দিতে।

আমার স্পন্সর মাজেদ ভাইর জন্য হৃদয়ের আকুলতা ঢেলে বাইতুল্লাহ ও রওজা মোবারকে দোয়া-খায়ের ও সালাম দিয়েছি।

মাজেদুল ইসলাম চৌধুরী আমার সমন্ধি (স্ত্রীর বড় ভাই)। তার মতো এত বড় আত্মা খুব কম মানুষেরই আছে। নিজে এখনো মক্কা-মদীনা জিয়ারত করতে পারেন নি। ইংল্যান্ডে এখনো পুরা স্থায়ীও হন নি, খুব বেশি রোজগার করছেন, এমনও না। তবুও পাঁচ-পাঁচজন মানুষের ওমরার স্পন্সর করে ফেললেন! পাঁচজন হলেন- মা-বাবা, বোন, ফুফু ও ভগ্নিপতি।

ওই যে বললাম, খুব বেশি রোজগার করছেন, এমন না। তবুও কখনো তিনি “নাই নাই” করেন না। ষখনই কোনো আত্মীয় ও প্রতিবেশী কোনো প্রয়োজনের কথা শোনায়, নিরাশ করেন না। অবশ্য এর নেতিবাচক দিকও আছে। সবাই মনে করে উনি দুই হাতে টাকা কামাচ্ছেন!

মাজেদ ভাইর আত্মা বড় হওয়ার দুটো কারণ আমি পেয়েছি। এক. পারিবারিক একান্নবর্তীতা। দুই. সৈয়দ মবনুর ছহবত।

মাজেদ ভাইদের বাপ-চাচা পাঁচজন। সবাই নাতি-নশা পেয়েছেন। কিন্তু এখনো তারা এক ডেগের ভাত খান। পৃথক হন নি। সরাইখানার মতো বড় ডেকে মা-চাচির হাতের রান্না খেয়ে বড় হয়েছেন। দ্বিতীয় কারণ সৈয়দ মবনুর ছহবত। মাজেদ ভাই পাঠকসংঘ শৈলীর সভাপতি ছিলেন। এই সূত্রে সৈয়দ মবনুর দীর্ঘ ছহবত পেয়ে আলোকিত হয়েছেন। আমার বিয়ের আগে তিনি শৈলীর অর্থ সম্পাদক ছিলেন। প্রতি মাসে একশো’ টাকা এয়ানত নিতে এলে যা ছেঁচড়ামি করতাম!

আমার স্ত্রীও শৈলী নারী শাখার সভাপতি ছিলেন। নারী শাখার কোনো প্রোগ্রামের আগে ইনবক্সে দাওয়াতনামা অথবা চাঁদা চাওয়ার মেসেজ দিতেন। আমি কোনো বাক্যব্যয় না করে একটা বুড়ি আঙ্গুল (🤙) দেখাতাম। এতে তিনি প্রচন্ড অপমানবোধ করতেন। এই লোকের এত অহংকার কিসের! হ্যা?

বিয়ের পর তিনি আমাকে এইসব ‘চেপে রাখা ইতিহাস’ বয়ান করে বললেন, “আমার ধারনা ছিল আপনি বিরাট একটা খাটাশ লোক। আপনার সঙ্গে বিয়ে না হলে সারাজীবন এই ধারনা নিয়ে থাকতে হত! অথচ আপনি কত ব্যতিক্রম!”

রওজা মোবারক জিয়ারতে এসে যে বইটির পাঠ সবচেয়ে বেশি দৃশ্যপটের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে, সেটি মাওলানা মহিউদ্দিন খানের “রওজা শরীফের ইতিকথা”। আজ থেকে অন্তত পনের বছর আগে বইটি পাঠ করে তামাম কায়েনাতের সরদার, সাইয়্যিদুল মুরসালিন, শাফিউল মিজমিবিন, নবীসূর্য হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয় সাল্লামের রওজা ও মদীনাতুন-নবী দেখার তামান্না সৃষ্টি হয়েছিল। আল্লাহ পাক খান হুজুরের দরজা বুলন্দ করুন। আমার মতো নগণ্য বান্দার ওমরাকে কবুল করুন। আমীম।

শেয়ার করুন