প্রথমবারের মতো সিলেটে এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আট শিশু হৃদরোগীর দেহে ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে। গত দু’দিনে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় কার্ডিওলজি বিভাগের ক্যাথল্যাবে এ অপারেশন সম্পন্ন হয়।
সফল এই অপারেশনের মধ্য দিয়ে সিলেট ওসমানী হাসপাতাল নতুন এক রেকর্ড তৈরী করলো, যা মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দু’বছর থেকে ১২ বছর বয়সী এসব শিশুর শরীরে সফল অস্ত্রোপচার শেষে ডিভাইস বসানো হয়। ঢাকার বাইরে এই প্রথম কোনো সরকারি হাসপাতালে ডিভাইস স্থাপন করলো ওসমানী হাসপাতাল।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শনিবার তিনজন ও গতকাল রোববার পাঁচজন শিশুর দেহে ডিভাইস বসানো হয়। ওসমানী মেডিক্যালের হৃদরোগ বিভাগ ও শিশু মেডিসিন বিভাগের সহযোগিতায় এই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। প্রতিটি ডিভাইসের দাম দেড় থেকে দু’লাখ টাকার বেশি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ ডা: মো: জিয়াউর রহমান চৌধুরী বলেন, জন্ম নেয়া সব শিশুই নিষ্পাপ। তবে এই নিষ্পাপ শিশুই কোনো কোনো পরিবারের কাছে বেদনার কারণ হয়। যখন দেখা যায় শিশুটির কোনো জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। হার্টের জন্মগত ছিদ্র যাকে এ.এস.ডি (অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট) বা ভি.এস.ডি (ভেন্ট্রিক্যুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট) বলে সেটিও বাচ্চাদের এক ধরণের জন্মগত ত্রুটি। যার জন্য শিশুরা যে কোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারে। তবে আশার কথা, আমাদের দেশেই এর চিকিৎসা রয়েছে।’
এ বিষয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মো: মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘ওসমানী মেডিক্যালের ক্যাথল্যাবে বড় হৃদরোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পাশাপাশি শিশু হৃদরোগীদের জন্য এ ধরনের কার্যক্রম শুধু ওসমানী হাসপাতাল নয়, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
ঢাকাস্থ বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. রিজওয়ানা রিমা বলেন, ঢাকার বাইরে এই প্রথম সিলেট ওসমানী মেডিক্যালে এ ধরণের শিশু হৃদরোগীদের (২ বছর থেকে ১৮ বছর) চিকিৎসা সহায়তা আমরা দিলাম। তিনি বলেন, সিলেট দেশের ওলী-আউলিয়া অধ্যুষিত জনপদ।
তার স্বামী ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উমর রাশেদ মুনিরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ঢাকার বাইরে প্রথম এ ধরণের অপারেশন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, হার্টের জন্মগত অস্বাভাবিক ছিদ্র বন্ধ করা, রক্তনালীর স্বাভাবিকীকরণ তথা অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট (এএসডি), ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট (ভিএসডি) এবং প্যাটেন্ট ডাক্টাস আর্টারিওসাসের (পিডিএ) চিকিৎসার জন্য এ ডিভাইস লাগানো হয়।
সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি লন্ডনের মন্তাদা এইডের অর্থায়নে এবং ঢাকাস্থ বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. রেজওয়ানা রিমাসহ ১০ জন চিকিৎসকের একটি দলের সার্বিক কারিগরি সহায়তায় দু’দিনব্যাপী এ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উমর রাশেদ মুনির বলেন, সরকার সব সময়ই চায় জনগণের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে। তাই আমরাও এ সেবাসহ প্রয়োজনীয় সব ধরণের সেবা দিতে প্রস্তুত। এ ব্যাপারে আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে চাই।