যুক্তরাষ্ট্রে নানা অজুহাতে মুসলমানদের এফবিআই’র জিজ্ঞাসাবাদ 

ইমা এলিস/বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক: ইসরায়েলের সমালোচনামূলক পোস্ট যারা সামাজিক যোগযোগ প্রকাশ করেছেন তাদেরকে অজুহাতে জিজ্ঞাসাবাদ করছে এফবিআই। গত ৭ অক্টোবর থেকে বিভিন্ন স্টেটে বারবার মুসলিম এবং অন্যদের কাছে গিয়ে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট সম্পর্কে আইনপ্রয়োগ প্রক্রিয়ার অজুহাতে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। যদিও জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া নাগরিকদের মতামত প্রকাশের জন্য তাদের শাস্তি দেওয়ার সমান বলে অভিযোগ উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম মুসলিম নাগরিক অধিকার সংস্থা কেয়ার জানিয়েছে যে, যারা অনলাইনে নিজেদের মতামত প্রকাশ করছে তাদের এফবিআই অবৈধভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। গত ২৯ জুলাই দুইজন এফবিআই এজেন্ট লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদ খানের ন্যাশভিল টেনেসির বাড়িতে যান। খান তখন বাড়িতে না থাকলেও এজেন্টরা তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং জানতে চান তিনি কোথায় আছেন। শেষ কবে বাড়িতে ছিলেন এবং তিনি কবে ফিরে আসবেন। এজেন্টরা দাবি করেন যে তারা খানের সঙ্গে কথা বলতে চায় কারণ এফবিআই তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। এফবিআইয়ের মতে পোস্টগুলো ‘আমেরিকানবিরোধী।’
এফবিআইয়ের এজেন্টরা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদ খানকে তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে আসাদ খান যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন কর্মকর্তাদের গাজায় গণহত্যায় সহায়ক ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তার অনলাইন বক্তব্য ইসরায়েলের সমালোচনা করেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির আহ্বান জানায়। তিনি লেহি আইন লঙ্ঘনের জন্য বিভিন্ন পাবলিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার দাবি করেছেন। এই আইনটি আমেরিকার কর্মকর্তাদের যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত বিদেশি দেশগুলোর কাছে অস্ত্র সরবরাহ নিষিদ্ধ করে, যার মধ্যে ইসরায়েলও অন্তর্ভুক্ত।
গত ১৯ মার্চ তারিখে ওকলাহোমা স্টেটের স্টিলওয়াটারের বাসিন্দা রোলা আবদেলজাওয়াদের বাড়িতে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এজেন্টদের আগমনকে কেন্দ্র করে তার আইনজীবী হাসান শিবলি গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আইনজীবী শিবলি এজেন্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, তারা আবদেলজাওয়াদের বাড়িতে গিয়ে যথাযথ প্রোটোকল অনুসরণ করেনি। বিশেষত এজেন্টরা নিজেদের সঠিকভাবে পরিচয় দেওয়ার ক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্টের দেওয়া গাইডলাইন মানেননি। তিনি আরো আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে এই তথ্যের অভাবে ভবিষ্যতে ঘটনার তদন্তে জটিলতা তৈরি হতে পারে। আবদেলজাওয়াদ এই ঘটনা তার ফোনে রেকর্ড করেন এবং সেই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ভিডিওতে দেখা যায়, একজন এজেন্ট তার পরিচয়পত্র দেখাতে অস্বীকৃতি জানায় কারণ আবদেলজাওয়াদ সেই সময় ভিডিও ধারণ করছিলেন। আবদেলজাওয়াদ এজেন্টদের প্রশ্ন করেন, আপনি কি আপনার পরিচয়পত্র দেখাবেন? এজেন্ট উত্তর দেয়, ‘হ্যাঁ, আমরা ইতিমধ্যে নিজেদের পরিচয় দিয়েছি।’ আবদেলজাওয়াদ তখন জানান যে তিনি সেই পরিচয়পত্র সঠিকভাবে পরীক্ষা করেননি এবং যখন তারা তার বাড়িতে আসেন, তখন তিনি তাদের কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন।
এজেন্টরা আবদেলজাওয়াদের সঙ্গে তার কিছু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট সম্পর্কে কথা বলতে চায়। ঠিক কোন পোস্টগুলো এফবিআইয়ের নজরে পড়েছিল বা কথা বলতে চায় তা এজেন্টরা স্পষ্ট করে ক্যামেরার সামনে বলেনি। তবে তার আইনজীবী জানিয়েছেন, আবদেলজাওয়াদ ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তার এক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘ইসরায়েলি সন্ত্রাসী নোংরা…, ফ্রি প্যালেস্টাইন আল্লাহ সব ঘৃণ্য জায়নিস্ট, তাদের সমর্থক এবং সহায়তাকারীদের ধ্বংস করুন। আমিন।’ ভিডিওতে আরো দেখা যায়, এজেন্টরা আবদেলজাওয়াদকে জানায়, ‘আমরা প্রতিদিন, সারাদিন ধরে মানুষের সঙ্গে এই ধরনের কথা বলি… এটি শুধু সবাইকে সুরক্ষিত রাখার প্রচেষ্টা।’
এজেন্টদের দাবি অনুযায়ী, ফেসবুক তাদের কাছে আবদেলজাওয়াদের অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট সরবরাহ করেছিল। তবে শিবলি এই বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ তার পোস্টের সমালোচনা করলেও তার মতপ্রকাশের অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।’
আইনজীবী হাসান শিবলি আমেরিকান জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে তারা যেন এফবিআইয়ের সঙ্গে আইনজীবী ছাড়া কথা না বলে, কারণ এজেন্টরা মিথ্যা বলতে পারে, কিন্তু সাধারণ নাগরিকরা আইনত মিথ্যা বলতে পারেন না। তিনি আরও জানান যে তিনি এজেন্টদের জবাবদিহিতার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার উপায় খুঁজছেন। শিবলির মতে, ‘যখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি মানুষের রাজনৈতিক মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা লক্ষ্যবস্তু করতে শুরু করে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানকে হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে।’ এফবিআই এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি বিবৃতি দিয়েছে যেখানে তারা জানিয়েছে, ‘প্রতিদিন, এফবিআই জনগণের সঙ্গে তাদের সুরক্ষার জন্য কাজ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষা করে। আমরা শুধু প্রথম সংশোধনীতে সুরক্ষিত কার্যকলাপের ভিত্তিতে কোনো তদন্ত শুরু করতে পারি না। আমাদের সমস্ত কার্যকলাপ আইনগত উদ্দেশ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য পরিচালিত হয়, পাশাপাশি সকল আমেরিকানের সংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেয়।’
কেয়ারের আইনজীবীরা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদ খানের পক্ষ থেকে এফবিআইয়ের কাছে একটি চিঠি প্রেরণ করেছেন। আইনজীবীরা এফবিআইয়ের বেআইনি জিজ্ঞাসাবাদ প্রত্যাখ্যান করেছেন। কেয়ারের অ্যাটর্নি গাদির আব্বাস বলেছেন, ‘সংবিধান এফবিআইকে মানুষের মতামত বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয়নি। যে কোনো মানুষের মতামত বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যদিও সরকারের পছন্দসই না হতে পারে কিন্তু সব নাগরিকের মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। আমরা সব আমেরিকানকে তাদের সংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করতে এবং এফবিআইয়ের রাজনৈতিক মতামত বা ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’

শেয়ার করুন