সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেছেন,আজাদী আন্দোলন থেকে বাংলাদেশেের স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন ছিল শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে শোষিতের সংগ্রাম। শোষক শ্রেণীর শাসনের নামে শোষণ করে, বৈষম্য করে ও মানুষের অধিকার বঞ্চিত করে তাদের বিরুদ্ধে ছিল এদেশের জনগণের স্বাধিকার আন্দোলন।তিনি বলেন, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, বাষট্টি, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান কিংবা ৭১’র স্বাধীনতা পরবর্তী এ দেশের মানুষের আকাঙ্খা ছিল মানুষ যেন তার অধিকার থেকে থেকে বঞ্চিত না হয়।কিন্তু দুঃখের বিষয় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা হলেও সত্যিকার অর্থে এতো ত্যাগের বিনিময়েও আমরা একটি স্বাধীন দেশ পাই নাই। আমাদের দূর্ভাগ্য হলো আমরা যখনই দ্বায়িত্ব পাই তখনই আমরা আমনত রক্ষা করতে পারি না। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পরপর মানুষের যে আকাঙ্খা ছিলো তা ভাটা পড়ে যায়।বাংলাদেশে প্রথম গুম হয়েছেন জহির রায়হান। যা একটি স্বাধীন দেশের জন্য লজ্জাজনক। তিনি বলেন, বারেবারে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এবং ক্ষমতায় যারা ছিলো তাদের আশে পাশে লুটেরা শ্রেণী তৈরি হয়েছে।ফলে পরে ব্যাংক খালি হয়েছে, সম্পদ লুটপাট করেছে, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে এরা। এই দূর্ভাগ্যের ফসল আমাদের সবাইকে ভোগ করতে হচ্ছে।তিনি বলেন, আজকে ব্যাংকে টাকা নেই, আপনি ব্যাংকে টাকা রেখেছেন ব্যাংক টাকা দিতে পারছেনা।পৃথিবীতে কোন স্বাধীন দেশে ব্যাংকে রাখা টাকা গ্রাহক ফেরত পাবে না, এইটা কোনো স্বাধীন দেশ হতে পারে না। অথচ গ্রামের একটি কৃষক টাকা নিছে থাকে কোমরে দড়ি বেঁধে আমরা নিয়ে আসি।তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি তিনটির অন্যতম কৃষি। অথচ একজন কৃষক মারা গেলে আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু করি না। তিনি বলেন, এই সমাজে যদি মগজের চেয়ে পেশিশক্তির গুরুত্ব বেশি হয় তাহলে এই সমাজে ভালো মানুষ তৈরি হবে না।মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে হবে,মেধাহীনদের নয়।তাহলে ভাল মানুষ ও ভালো সমাজ আমরা পাবো।তিনি বলেন, আমরা যদি একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বৈষম্যহীন রাষ্ট্র তৈরি করতে পারি তাহলে স্বাধীনতার সুফল পাওয়া সম্ভব। সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব-ইকরা ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস বার্ষিক অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলজার আহমদ হেলালের সভাপতিত্বে প্রেসক্লাবের ড. রাগীব আলী মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম. সাইফুর রহমান তালুকদার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেট ইউনিটের সেক্রেটারি মাহবুবুল হক চৌধুরী (ভিপি মাহবুব), বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার এ্যাডহক কমিটির সদস্য মো: মোকাম্মেল হক ও ইকরা ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আব্দুল কাদির। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি ও বার্ষিক অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন উপ কমিটির আহবায়ক জহিরুল ইসলাম মিশু। প্রধান অতিথি আরো বলেন, দেশের কোন জায়গায় রাত ১১টার পরে একটি মেয়ে যদি নিরাপদে রাস্তায় হাটতে না পারে, মেডিকেলে সাধারণ মানুষ যদি সুচিকিৎসার অভাবে থাকে, তার কাছে স্বাধীনতা পাওয়া আর না পাওয়া সমান। যে বৈষম্যের জন্য যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করা হয়েছিল, তা এখনো রয়ে গেছে। সকল বৈষম্য দূর করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবান করতে হবে। সবার সাথে আমার চিন্তা ভাবনা মিলবে একটা কখনো সম্ভব নয়। সব ধরণের মানুষকে নিয়ে সম্মিলিত প্রয়াসে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমি সিলেট নগরীকে একটি যানজট মুক্ত নগরী করতে চাই। একটি বাগানে যদি ফুলের চারা লাগানো হয় সে জায়গায় ফুল হবে, আর যদি আবর্জনা ফেলা হয় ত কি ভাবে সুন্দর থাকবে। তাই এই শহরে যারা বসবাস করেন তারা আমাদের সহযোগিতা করতে হবে ফুলের বাগান তৈরি করতে। আমরা সিলেট নগরীকে হকার মুক্ত করতে লালদীঘির পাড় মার্কেটে তাদের জন্য জায়গা করে দিয়েছি। ইতিমধ্যে বাজার জমতে শুরু করেছে। পরিবহন এর জন্য আমরা জায়গা করছি। নির্দিষ্ট একটি জায়গায় যাত্রী তুলবে ও নামাবে এতে করে নগরী আরও সুন্দর হবে।তিনি বলেন, রাত ৯টায় নগরীর দোকানপাট বন্ধ করার প্রধান লক্ষ হলো যানজট মুক্তি নগরী গড়া, বিদুৎ অপচয় বন্ধ করা,পড়াশোনায় শিক্ষার্থীদের মন দেয়া ইত্যাদি। আমাদের সঠিক সময়ে ঘুম হলে আমাদের মন-মানসিকতা ভালো থাকবে। রাত হলো শরীরকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য। প্রথমে একটু কষ্ট হলেও হবে যারা রাতে আড্ডা দেন তাদের জন্য কিন্তু আস্তে আস্তে অভ্যাস গড়তে পারলে পরে সুফল পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মেডিকেল ভর্তির পরীক্ষায় পাসের হার ৭৬ শতাংশ মেয়ে, ২৪ শতাংশ ছেলে। যদি এমন করে ছেলেরা পিছিয়ে পরে তাহলে এটি হতাশাজনক। এছাড়া আমাদের প্রথম প্রাধান্য শিশুদের খেলার জন্য উনমুক্ত জায়গায় করা। খেলাধুলা করলে শিশুদের মন ও মানসিকতার বিকাশ ঘটে।তিনি বলেন,অনলাইন মিডিয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুততম সময়ে জনগণের কাছে সংবাদ পৌঁছে যায়। আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।তিনি বলেন, আমরা সকল কাজে মিডিয়াকে পাশে পেতে চাই।গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট অনেক তথ্য থাকে যা রাষ্ট্রের কাজে লাগবে।আমাদের সকল কাজে সংবাদকর্মীদের সাক্ষী রাখতে চাই। তিনি বলেন,গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। ফোর্থ স্টেট। দায়িত্বশীলতার সহিত সংবাদ পরিবেশনে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তানভীর হোসাইন সজীব, রেডক্রিসেন্ট স্যোসাইটি সিলেট ইউনিটের সদস্য কামরুজ্জামান দিপু, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সহ সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আহমদ রনি, কোষাধ্যক্ষ তাওহিদুল ইসলাম, কার্যকরী পরিষদের সদস্য মো: আব্দুল হাছিব, সাধারণ সদস্য তাসলিমা খানম বিথী, মো. আলমগীর আলম, জসিম উদ্দিন, দেবব্রত রায় দিপন, তারেক আহমদ খান, মো. মশাহিদ আলী, শাহীন আহমদ, আব্দুল হান্নান, সৈয়দ রাসেল আহমদ, মোজাম্মেল হোসেন রুবেল, মিজান মোহাম্মদ, রেজাউল করিম সোহেল, মো. আবুল হোসেন, মো. ফারুক মিয়া ফারুক, মো. সোহেল মিয়া, মো. রুবেল মিয়া, এম এ রহিম, মো. তাইনুল ইসলাম, জনি কান্ত শর্মা, মাহমুদ পারভেজ খান, মো. ছানার আলী সানোয়ার, শেখ জাবেদ আহমদ ও সহযোগী সদস্য নাহিদ আহমদ প্রমূখ। অনুষ্ঠান শেষে ক্যারেম খেলার মাধ্যমে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব-ইকরা ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস বার্ষিক অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক সহ অতিথিবৃন্দ।