সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ



সিলেট মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের ট্রাষ্টি সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু ও তার অনুসারীরা শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ জিউর আখড়ার সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ এবং জবরদখলের পায়তারা করছেন। জেলা প্রশাসন এবং পিবিআই’র তদন্তেও এটি প্রমাণিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ জিউর আখড়ার বাসিন্দা ও ভক্ত জিতেন চন্দ্র নাথের পুত্র রাহুল দেবনাথ।  
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ওই নেতা ২০০৪ সাল থেকে একাধিক বার এ আখড়ার সম্পত্তি বিক্রি ও অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত। অথচ, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থান ঐতিহ্যবাহী এই শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ জিউর আখড়ার সম্পত্তি দেবোত্তর সম্পত্তি, যা ক্রয়-বিক্রয়ের এখতিয়ার কারও নেই। গত ১ নভেম্বর সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পুর নেতৃত্বে একটি দল মন্দির দখলের উদ্দেশ্যে তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় তাদেরকে মন্দিরে তালা দিতে বাধা দিলে মন্দিরের ভক্ত ও স্থায়ী বাসিন্দা স্মৃতি রাণী নাথ ও তার পরিবারের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা আহত হন। যা সিসিটিভি ফুটেজে সংরক্ষিত রয়েছে।
রাহুল চন্দ্র অভিযোগ করে বলেন, হামলার বিষয়ে এদিন তার মা স্মৃতি রাণী নাথ কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে হামলাকারীরা উল্টো থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। পুলিশ মামলা না নেওয়ায় তারা আদালতের দ্বারস্থ হন। পরে আদালতের নির্দেশে দ্রুত বিচার আইনে ভুক্তভোগীদের মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে রুজু হয়। এ পরিস্থিতিতে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই দিনের মধ্যে বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়ে মন্দিরে তালা ঝুলিয়ে দেন। এর পর থেকে আজ পর্যন্ত  এ আখড়ায় তালা ঝুলানো রয়েছে। ফলে, এ নিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।  
সংবাদ সম্মেলনে রাহুল আরো জানান,  পিবিআই’র তদন্তে  আখড়া পরিচালনা কমিটির কথিত নেতারা জালিয়াতির মাধ্যমে এ  মন্দিরের প্রায় ১২ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ভূমি বিক্রি করে আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে। পিবিআই ইতিমধ্যে এ ঘটনায় বিরাজ মাধব চক্রবর্তী, দিবাকর ধররাম, সুধাময় মজুমদার, শান্তনু দত্ত সন্তু, সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু, নিতাই চন্দ্র পাল, সুধাময় মজুমদার, মিহির লাল দে, কিশোর কুমার কর, বিমান দাশ, প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য, শান্তনু দত্ত সন্তু, চন্দন রায়, মলয় পুরকায়স্থ, সুদীপ রঞ্জন দেব, এজাজ উদ্দিন, দলিল লেখক বিরেশ দেবনাথ, রওশন আরা বেগমসহ ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে।
পিবিআই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৫৬ সালে আখড়ার তৎকালীন সম্পাদক বিরজা মোহন দাস পুরকায়স্থ কৌশলে দেবোত্তর সম্পত্তি নিজের স্ত্রীর নামে রেকর্ড করেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে অবৈধ কমিটি মন্দিরের ১১.৪৪ শতাংশ জমি হস্তান্তর করে, যেখানে বর্তমানে ক্যাফে নুরজাহান, সালাম বেবী এন্টারপ্রাইজ, বেবী গ্যালারী, ডায়মন্ড হ্যান্ড নামক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানান, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা নিতাই পাল দল পাল্টে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে হাত মিলান। তিনি এর আগেও প্রভাব খাটিয়ে মন্দিরের জমিতে ভবন নির্মাণের চেষ্টা করেছিলেন। এ ব্যাপারে দায়েরকৃত মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। যা পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদনে বহুতল বিশিষ্ট ভবন রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা প্রদীপ ভট, তপন মিত্র ও দীবাকর ধর রাম, সুদীপ রঞ্জন দেব, বিবাবসু গোস্বামী বাপ্পার সঙ্গে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে তারা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। বাপ্পু মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। এর আগে গত ৮ আগস্ট জনৈক বিএনপি নেতা এজাজ উদ্দিন তার বাহিনী নিয়ে মন্দির দখলে তালা দিলে সেনাবাহিনী এসে তা খুলে দেয় এবং এ সময় এজাজ উদ্দিনসহ  ৬ জন আটক হয়। তিনি এসব ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং প্রধান উপদেষ্টার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জিতেন চন্দ্র নাথ, স্মৃতি রাণী নাথ, দীপক নাথ, শিউলী রাণী দেবী, দিব্য দেবনাথ, রুদ্র দেবনাথ, সুজন দেবনাথ, বন্ধন দেবনাথ, জ্যেতিষ দেবনাথ প্রমুখ।  

শেয়ার করুন