কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাবেক সহসভাপতি ও কার্যকরী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ বলেছেন, কবিতা আবৃত্তি শিশুদের মন ও সাহিত্যচেতনার আলোকস্তম্ভ। কবিতা আবৃত্তি আমাদের মনকে আলোকিত করে, চিন্তাভাবনাকে সমৃদ্ধ করে এবং সৎ ও উন্নত মানুষ হতে প্রেরণা দেয়। তাই প্রত্যেক শিশুর জন্য কবিতা আবৃত্তি শেখা এবং উপভোগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবৃত্তির মাধ্যমে শিশুরা শুধু সুন্দরভাবে কথা বলতেই শেখে না, বরং সাহিত্যুসংস্কৃতির প্রতি তাদের আগ্রহ আরও গভীর হয়। এ আগ্রহ বইয়ের সঙ্গে একটি আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি করে, যা তাদের ব্যক্তিগত ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ (কেমুসাস)-এর উদ্যোগে ৯ দিনব্যাপী ১৯তম কেমুসাস বইমেলার দ্বিতীয় দিনে কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংসদের কোষাধ্যক্ষ ও বইমেলা উপকমিটির আহ্বায়ক জাহেদুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকালে বইমেলা প্রাঙ্গণে এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
বইমেলা উপকমিটির সদস্য সচিব কামরুল আলমের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংসদের সাধারণ সম্পাদক গল্পকার সেলিম আউয়াল, লাইব্রেরি সম্পাদক কবি নাজমুল আনসারী, বইমেলা উপকমিটির সদস্য মফিক মোহাম্মদ। বইমেলা উপকমিটির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট কবি কামাল তৈয়ব। প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাহিত্য সমালোচক বাছিত ইবনে হাবীব। শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফিজ ওলিউর রহমান।
আবৃত্তি প্রতিযোগিতা পরিচালনা করেন বইমেলা উপকমিটির সদস্য গল্পকার মিনহাজ ফয়সল। বিচারক হিসেবে ছিলেন কবি ও বাচিকশিল্পী সালেহ আহমদ খসরু, কবি বাছিত ইবনে হাবীব, কবি নাজমুল আনসারী, কবি কামাল তৈয়ব ও কবি মাহফুজ জোহা।
প্রতিযোগিতায় সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ‘বিশেষ’ গ্রুপে প্লে থেকে ১ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। তাদের বিষয় ছিল কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমি হব সকাল বেলার পাখি’ অথবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতা। ‘ক’ গ্রুপে ২য় থেকে ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। তাদের বিষয় ছিল আল মাহমুদের ‘পাখির মতো’ কবিতা। ‘গ’ গ্রুপে ৭ম থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। তাদের বিষয় ছিল ফররুখ আহমদের ‘পাঞ্জেরী’ কবিতা। ‘ঘ’ গ্রুপে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা সমমান শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। তাদের বিষয় ছিল আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ’র ‘আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’ অথবা আসাদ বিন হাফিজের একটি অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার কবিতা।
‘বিশেষ’ গ্রুপের বিজয়ীরা হলেন : প্রথম- আদৃতা মজুমদার, দ্বিতীয়- তাকওয়া তাসনিম এবং তৃতীয়- ইয়ানা নুর পারিজা। ‘ক’ গ্রুপের বিজয়ীরা হলেন : প্রথম- আয়ানা জামান, দ্বিতীয়- জুমানা আল নুজাইমা এবং তৃতীয়- সম্পূর্না পাল।
‘খ’ গ্রুপের বিজয়ীরা হলেন : প্রথম- ইয়ামান তাবাসসুম, দ্বিতীয়- আরিফা আহমদ এবং তৃতীয়- সাইদুর রহমান। ‘গ’ গ্রুপের বিজয়ীরা হলেন : প্রথম- রিয়াসা জাহান নুহা, দ্বিতীয়- আফনানুল করিম চৌধুরী এবং তৃতীয়- মাহফুজুর রহমান। ‘ঘ’ গ্রুপের বিজয়ীরা হলেন : প্রথম- মুজাম্মেল আদনান, দ্বিতীয়- ইফাত হাসান আরমান এবং তৃতীয়- মো. সজিবুর রহমান খান।
বইমেলা উপলক্ষে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ১০ ডিসেম্বর (বুধবার): বিকেল ৩টা—চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা; সন্ধ্যা ৬টা—মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভা। ১১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার): বিকেল ৩টা—ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতা; সন্ধ্যা ৬টা—মুক্তমঞ্চে ১২৫৮তম সাহিত্য আসর। ১২ ডিসেম্বর (শুক্রবার): বিকেল ৩টা—ক্বিরাত প্রতিযোগিতা; সন্ধ্যা ৬টা—মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভা। ১৩ ডিসেম্বর (শনিবার): বিকেল ৩টা—গান প্রতিযোগিতা। ১৪ ডিসেম্বর (রবিবার): বিকেল ৩টা—হাতের লেখা ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতা; সন্ধ্যা ৬টা—শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভা। ১৫ ডিসেম্বর (সোমবার): বিকেল ৩টা—আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার): সন্ধ্যা ৬টা—বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, পুরস্কার প্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠান। সাহিত্যপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর এই বইমেলা চলবে ৯ দিনব্যাপী।