সিলেট ৪ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন সাংবাদিক গোলজার

প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে ভরপুর সিলেটের সীমান্তবর্তী  জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট ৪ আসন। অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন পর্যটনস্পট নিয়ে গঠিত এই তিন উপজেলার খনিজ সম্পদ দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই আসনে কাংখিত উন্নয়ন হয়নি। বরং বার বার বঞ্চিত আর অবহেলিত রয়েছেন এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।পর্যটনস্পট থেকে রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালবার্ট থেকে শুরু করে পর্যাপ্ত উন্নয়ন না হওয়ায় মানুষের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যারাই এই এলাকার সংসদ সদস্য ছিলেন তাদের মধ্যে দুই একজন ছাড়া সবাই এলাকার উন্নয়নের চেয়ে নিজের ও নিজের দলের সমর্থকদের উন্নয়ন নিয়ে বেশী ব্যস্ত ছিলেন। বিশেষ করে ২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত এই অঞ্চলে উন্নয়নের নামে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদকে ধ্বংস করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

এমন অবস্থায় ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ছাত্র-নাগরিক গণঅভ্যূত্থানে ফ্যাসিবাদ পালিয়ে যাওয়ার পর এই তিন উপজেলার সাধারণ মানুষ উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন। তারা একজন্য সুশিক্ষিত, অপেক্ষাকৃত তরুণ ও স্মার্ট নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছেন। এমন অবস্থায় এই অবহেলিত অঞ্চলের জীবনমানের উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকে মাঠে কাজ করে আসা সাংবাদিক ও সমাজসেবক গোলজার আহমদ হেলাল এই এলাকা থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন।

বুধবার নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে তিনি সিলেট ৪ আসনের জনগনের উদ্দেশ্যে দেয়া এক পোস্টে তিনি এই ঘোষণা দেন।

গোলজার আহমদ হেলাল একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক ও সমাজসেবক। জৈন্তাপুর উপজেলার দিগারাইল গ্রামের বাসিন্দা তিনি। স্কুল ও শিক্ষা জীবনে প্রখর মেধার অধিকারী এই তরুণ নেতা গণিত বিষয়ে স্নাতক(সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন শেষে আইন ও বিচার বিভাগে  পড়াশোনা করেন।তিনি প্রথম শ্রেণীতে ব্যাচেলর অব লজ(এলএলবি) ডিগ্রী লাভ করেন।লেখালেখি করেন ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে।

প্রাথমিক শিক্ষাকালে কাজী নজরুল,ফররুখ ও ম্যাক্সিম গোর্কী,শেক্সপীয়রসহ বহু বিখ্যাত মনীষীদের বিভিন্ন গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন।তেরো বছর বয়সে মাধ্যমিক সমাপ্ত করেন।এসএসসি তে স্টার মার্কস ও ডিস্টিংশন  সহ প্রথম বিভাগ,এইচএসসি তে ডিস্টিংশন সহ প্রথম বিভাগ, প্রাইমারি ও জুনিয়রসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি বৃত্তিলাভ করেন। স্কুলজীবনে বরাবর ছিলেন ফার্স্ট বয়।প্রতিটি ক্লাসের প্রতিটি পরীক্ষায় অংক ও বিজ্ঞান সহ বিভিন্ন বিষয়ে  ঈর্ষণীয় নম্বর প্রাপ্তিসহ সর্বোচ্চ রেজাল্ট নিয়ে আসতেন।তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়,অপ্রতিদ্বন্ধি ও অসাধারণ প্রতিভাধর এক কালজয়ী শিক্ষার্থী।

জৈন্তাপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী নিভৃতচারী যুবক গোলজার আহমদ হেলাল  শিক্ষাজীবন শেষ করে সাংবাদিকতায় মনোনিবেশ করেন। তিনি সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি। এছাড়াও তিনি দৈনিক আলোকিত সিলেট সম্পাদনা করছেন।তিনি অসংখ্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত আছেন।তিনি শিক্ষানুরাগী,ক্রীড়ানুরাগী,উন্নয়ন ও সমাজকর্মী।মানবাধিকার,সাহিত্য,স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও সাধারণ মানুষের অধিকার আন্দোলনের একজন সমাজ সচেতন ব্যক্তি।

ছাত্রজীবনে তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্ররাজনীতিতেও অগ্রণী ভুমিকা রেখেছেন। শাবিপ্রবি নামকরণ বিরোধী আন্দোলন,এম সি কলেজ ছাত্রাবাস পুড়িয়ে যাওয়ার পর তা পুন:নির্মাণ আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেন।সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস দমন করতে গিয়ে কারাবরণ করেন,দুষ্কৃতিকারীদের হাত এম সি কলেজ ছাত্রাবাসে তিনি আহত হন। তিনি পর পর তিনবার সিলেট জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।তাঁর এক বর্ণাঢ্য একাডেমিক ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রয়েছে। 

এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন থেকে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানুষের আর্থ সামাজিক  উন্নয়নে নিরলসভাবে নীরবে  কাজ করে যাচ্ছেন।সিলেট-৪ আসনের উন্নয়ন, জনসেবা এবং মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করাই তাঁর জীবনের ব্রত। তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যুব উন্নয়ন, দরিদ্রদের সহায়তা ও আর্ত মানবতার সেবা এবং করোনো,বন্যা,দুর্যোগ,মহামারিসহ সংকট ও দু:সময়ে নি:স্বার্থভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

ফেইসবুকে দেয়া তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

আমাদের প্রাণপ্রিয় সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ) সংসদীয় আসনের সর্বস্তরের নাগরিকবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম/আদাব। আপনাদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, সিলেট-৪ সংসদীয় আসন ঐতিহ্যগতভাবেই নান্দনিক,পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব সমৃদ্ধ এক জনবহুল জনপদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত, অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের আধার এবং প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর এতদঅঞ্চল। অথচ দীর্ঘদিন থেকে নানা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন এই এলাকার সাধারণ জনগণ।

চব্বিশের রক্তস্নাত ছাত্র গণ অভ্যুত্থানের পর জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাধারণ জনগণের জীবনমান উন্নয়ন এবং অবহেলিত, বঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়ন সময়ের অপরিহার্য দাবী। সংসদীয় এলাকার তিন উপজেলাকে মডেল ও স্মার্টরূপে গড়ে তুলতে প্রয়োজন মেধাবী, সৎ, দক্ষ , সাহসী, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল এক স্বপ্নচারী নেতৃত্ব। যেখানে সততা ও যোগ্যতাই হবে নেতা নির্বাচনের মূল কথা।

বাংলাদেশের মৌলিক সমস্যা হচ্ছে সৎ ও দক্ষ জনশক্তির অভাব ও অনুপস্থিতি । The Basic Problems of Bangladesh is the absence of honest and efficient manpower. কিন্তু যোগ্যতার নিরিখে কিংবা বিচারে দায়িত্বশীল পদে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত না হলে জনগণই প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

জনপ্রিয়তা মানেই জনবান্ধব কিংবা জনমত নয়, কিংবা জনপ্রিয় নেতা আর দায়িত্বশীল নেতাও এক নয়। নির্বাচন আসলেই প্রার্থীরা অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, মিষ্টি হাসি দিয়ে মানুষকে তুষ্ট করার চেষ্টা করেন।মানূষের মন জয় করতে নিজের সবকিছু দিয়ে প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রাখেন। এটি আমাদের এদেশীয় প্রচলিত সংস্কৃতি। আমি এটিকে অবজ্ঞা করি না,বরং স্বাগত জানাই। তবে তথাকথিত নির্বাচনী মেনিফেস্টো কিংবা কথার ফুলঝুরিতে আমি বিশ্বাসী নই। আমি কাজে বিশ্বাসী, কর্মে অনুরক্ত।

‘নেতৃত্বে চাই সততা, সাহসিকতা ও বিশ্বস্থতা’-এই শ্লোগান কে ধারণ করে আসুন আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সিলেট-৪ আসনকে সাজিয়ে তুলি। কালো টাকা, কালো গাড়ী কিংবা পেশীশক্তি নয়, জনতাই বড় শক্তি। জনতার জয় হোক, ক্ষমতার নয়।

জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার, জুলাই সনদের আইনগত স্বীকৃতি ও নতুন সংবিধান তৈরী এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান একটি জাতীয় দাবি।দ্রুততম সময়ে এগুলো সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি।জুলাই এর আকাঙ্খা অনুসারে আগামীর রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা হোক,এটা আমরা প্রত্যাশা করি।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জুলাই বিপ্লবে শহীদ আবু সাঈদ,মুগ্ধ সহ দুই হাজারেরও অধিক শহীদ,পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী ব্যক্তিবর্গসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও জনতার ত্যাগ যেন আমরা ভূলে না যাই।মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যারা জীবন দিয়েছেন তাদেরকেও যেন না ভূলি।মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠাই হোক আগামীর রাজনীতি। সাম্য,মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসনই হোক বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার মূলমন্ত্র। 

পবিত্র মহান জাতীয় সংসদে আইনপ্রণয়ন হয়।সুতরাং সৎ ও সৃজনশীল আইনপ্রণেতাগণই জনবান্ধব সুনীতি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে,আমার বিশ্বাস।শুধুমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নয়, নাগরিক সমাজের পেশাজীবি, শিক্ষিত ও সৎ  মানুষদেরকেও জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা আবশ্যক মনে করছি। অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি,জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা  ও নতুন বন্দোবস্তে ইহা খুব প্রয়োজন।মহান আল্লাহ বলেছেন,”তোমরাই সর্বোত্তম জাতি।তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্যই।তোমারা সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।” মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন,”তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদেরকে দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।” এর আলোকে জীবন ও সমাজ গড়ার চিন্তাশীল লোকদের সংসদে যেতে হবে।অসৎ,দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের হাত থেকে এই জনপদকে বাঁচিয়ে রাখতে জাতীয় নির্বাচনে শুধু মার্কা দেখে নয়,সততা ও যোগ্যতা দেখে মানুষ বাছাই করতে হবে। 

আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন,আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামাজিক দায়বদ্ধতা, জন্মমাটির মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, সম্ভাবনাময় প্রাগৈতিহাসিক এই জনপদকে আলোকোজ্জ্বল করা এবং বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় ও অঙ্গীকার নিয়ে আমি জাতীয় সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই ।একাডেমিক ব্রাইট ক্যারিয়ার থাকা সত্ত্বেও সরকারি চাকুরিতে না যাওয়া এবং প্রবাসে যাওয়ার সুযোগকে উপেক্ষা করে দেশের মাটিতে জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার একটি মাত্র কারণ মানুষের জন্য কিছু করে যাওয়া। সেই লক্ষ্যে ছাত্রজীবন থেকেই কাজ করছি।তখন থেকেই  জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানুষের আর্থ সামাজিক  উন্নয়নে নিরলসভাবে নীরবে অব্যাহতভাবে আমি  কাজ করে যাচ্ছি।সিলেট-৪ আসনের উন্নয়ন, জনসেবা এবং মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করাই আমার জীবনের ব্রত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যুব উন্নয়ন, দরিদ্রদের সহায়তা ও আর্ত মানবতার সেবা এবং করোনো,বন্যা,দুর্যোগ,মহামারিসহ সংকট ও দু:সময়ে নি:স্বার্থভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।নির্বাচন আমার মুখ্য নয়।মানবকল্যাণ ও মানবিকতাই আমার ধর্ম।তবে একথা সত্য,যথোপযুক্ত স্থানে যেতে পারলে  জনগণের জন্য অনেক কিছু করা সম্ভব। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যাতে যেকোন পর্যায়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে সেই স্পেস থাকতে হবে।আইন যেন তা বাঁধাগ্রস্ত না করে।টেকসই গণতন্ত্রের জন্য  রাষ্ট্রকে সেটি খেয়াল রাখতে হবে।

আপনাদের সকলের দোয়া/আশির্বাদ, সমর্থন ও সহযোগিতা পেলে আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিতব্য মহান জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনতারই বিজয় হবে, ইনশাআল্লাহ।আমি নয়,জনগণই হবে এই আসনের এমপি।আমার জয় মানে জনতার বিজয়। 

আমি আপনাদেরই সন্তান, আজীবন আপনাদের মাঝেই থাকতে চাই।মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক।আল্লাহ হাফেজ। 

শেয়ার করুন