
জগন্নাথপুরে নিকটাত্মীয়ের প্রতারণায় এক প্রবাসীর কোটি টাকার জমি ও বাড়িঘর আত্মসাৎ হয়েছে। এই ঘটনায় অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বিশ্বনাথের রামসুন্দর হাইস্কুলের শিক্ষক ও নামকরা ফুটবল খেলোয়াড়, কলকলিয়া ইউনিয়নের হিজলা গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুহিতুর রহমান নুরানী। মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নুরানীর স্ত্রী যুক্তরাজ্য প্রবাসী সুলতানা বেগম চৌধুরী এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিাখিত বক্তব্যে তিনি জানান, তার স্বামী মিরপুর হাইস্কুলেরও প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক। এক সময় তার স্বামী লন্ডন চলে যান এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। দেশের ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে তার সম্পর্কের বিন্দুমাত্র কমতি হয়নি। তার স্বামীর ভাই মৃত ওয়ারিদ উল্যার পুত্র ছবির মিয়াকেও তিনি সবসময় আর্থিক সহযোগিতা করতেন। করোনা মহামারীর আগে ছবির মিয়া তার স্বামীকে দেশে জমিজমা ক্রয় করে সুন্দর একটি বাড়ি করার প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাবে সহজসরল মুহিতুর রহমান নুরানী রাজি হয়ে তাকে জমি দেখতে বলেন। পরবর্তীতে ছবির মিয়া জায়গা পেয়েছে জানায় এবং জমি কেনার জন্যে টাকা দিতে বলে। ছবির মিয়ার কথায় তার স্বামী সরল বিশ্বাসে উত্তরা ব্যাংক জগন্নাথপুর শাখার ০৭৩৭১১১০০১১৮৮৭০ নম্বর এ্যাকাউন্টে বিভিন্ন কিস্তিতে এক কোটি টাকারও বেশি টাকা পাঠান। এরমধ্যে জমি কেনার জন্য ২৩ লাখ টাকা দেন এবং বাসা নির্মাণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজের জন্যে আরও ৬৩ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন। ছবির মিয়া তার স্বামীকে বুঝিয়েছিলেন পাসপোর্টের কপি, ছবিসহ অন্যান্য কাগজপত্র দিলে জমি তার স্বামীর নামে রেজিস্ট্রি হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা বেগম জানান, যেহেতু ছবির মিয়া কষ্ট করবে তাই তার স্বামী এর বিনিময়ে ছবিরকে ওই জমি থেকে ৩ শতক জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে করোনা মহামারি দেখা দেয়ায় মানুষের জীবনযাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। তার স্বামী ছবির মিয়ার কথামতো সকল ডকুমেন্টস পাঠিয়ে দিলেও করোনার কারণে তিনি দেশে আসতে পারেননি। ইতোমধ্যে ছবির মিয়া তার স্বামীর নামে দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে বলে জানান। তার স্বামীও ছবির মিয়ার কথা বিশ্বাস করেন। ২০১৮ সালে ওই জমির ওপর তিনতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একতলা বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শুরু করেন ছবির মিয়া। একতলা বিল্ডিং এর কাজ কমপ্লিট করে ছবির মিয়া এতে বসবাসও শুরু করে দেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয়তলার কাজও সম্পন্ন করা হয়। ২০২২ সালে তার স্বামী দেশে চলে আসেন। তিনি দেশে এসে দেখতে পান, তার টাকায় কেনা জমিতে নির্মিত বাসার নাম “ছবির ভিলা”। এটি দেখে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ছবির জানায়, কিছু টাকা সে অন্যখাতে খরচ করে ফেলেছিল তাই বাড়ির দলিল জমা দিয়ে ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ তুলেছে। তাই এই নাম দিতে হয়েছে। পরে এটা ঠিক করে তার স্বামীর নামে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ছবির। তার সহজ সরল স্বামী সাথে সাথে নগদ ৫ লাখ টাকা ছবির মিয়ার হাতে তুলে দিয়ে ব্যাংক থেকে দলিল আনতে বলেন। ছবির মিয়া দলিল আনবো আনবো করে কালক্ষেপণ করতে থাকে। একসময় তার স্বামী লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন জমি ছবিরের নামে রেজিস্ট্রারি হয়েছে এবং দলিলে তার স্বামীর কোনো নামই নেই। এর সত্যতা নিশ্চিত করতে তার স্বামী সাবরেজিস্ট্রারি অফিসে ছুটে যান এবং দেখেন পুরো জমিটাই কেনা হয়েছে ছবিরের নামে। এ অবস্থায় তিনি সেখানেই অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। পরে সিলেটে ও লন্ডনে এসে চিকিৎসার পরে তিনি কিছুটা সুস্থ হলে তার বড় ছেলেকে নিয়ে তিনি আবারও দেশে আসেন। মুরব্বিদের নিয়ে আলাপ আলোচনা করে ছবির মিয়াকে সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিলে ছবির মিয়া একটি অঙ্গীকারনামা সম্পাদন করেন । যাতে উল্লেখিত সম্পত্তি তার ছেলের নামে ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। ছবির মিয়া প্রাথমিকভাবে করা অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন। কিন্তু চূড়ান্ত অঙ্গীকারনামায় শর্তগুলো লেখার পর যখন স্বাক্ষরের সময় আসে তখন ছবিরকে সুনামগঞ্জ আদালতের বর্তমান পিপি অ্যাডভোকেট মল্লিক মইন উদ্দিন সোহেলের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চতুর ছবির অসুস্থতার বাহানায় পুরো বিষয়টি ভন্ডুল করে দিয়ে আজও স্বাক্ষর করেনি।
সুলতানা বেগম চৌধুরী জানান, একই পরিবারের সদস্য হয়ে ছবিরের এমন প্রতারণা তাদের পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে। এসব ঘটনায় তার স্বামী আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে গত বছরের ৭ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপরেও তারা ছবিরকে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। একজন প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসাবে সম্পত্তি উদ্ধারে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন