
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মোঃ রেজা-উন নবী বলেছেন, নব্য কিংবা পুরনো যেকোনো ধরনের ফ্যাসিবাদী তৎপরতা প্রতিরোধে দলমত নির্বিশেষে গোটা জাতির সম্মিলিত জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সকল পেশার মানুষের যেভাবে মিলিত হওয়ার মাধ্যমে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জিত হয়েছিল, বর্তমান সময়েও ঠিক তেমনই সংহতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এসময় বিভাগীয় কমিশনার সতর্ক করে দিয়ে বলেন, দেশবিরোধী কিছু চক্র দেশের অভ্যন্তর থেকেই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করার নানা পরিকল্পনা করছে, কিন্তু জনগণকে কখনই এটা মেনে নিতে দেওয়া হবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি জুলাই বিপ্লবে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং উল্লেখ করেন যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দৃষ্টিতে তারা মৃত নন, বরং জীবিত এবং তাঁর কাছ থেকেই তারা রিযিক প্রাপ্ত হন। তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, অতীতে পরাজিত ও পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদী শক্তি বাংলাদেশে ফিরে আসার দুঃস্বপ্ন দেখছে, কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন কখনই বাস্তবায়িত হতে দেওয়া হবে না। একইভাবে, কোনো নব্য ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীও যদি ভিন্ন মোড়কে নানা পোশাকে জাতির ঘাড়ে চেপে বসার ষড়যন্ত্র করে, তাকেও নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে। তিনি সকল দল ও মতের মানুষকে এই সংগ্রামে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।
বিভাগীয় কমিশনার জানান, জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে সরকার আগামী ৫ আগস্টের মধ্যেই স্মৃতিসৌধ স্থাপন করবে। এছাড়া সিলেট বিভাগেও একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে। সর্বোপরি, যেসব স্থানে জুলাই বিপ্লবের বীর শহীদদের সমাহিত করা হয়েছিল, সেসব স্থানে তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে বিশেষ স্মৃতিফলক স্থাপন করা হবে।
খান মো. রেজা-উন-নবী বুধবার দুপুরে জুলাই শহীদ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, সিলেট আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার, সিলেটের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ রানা, সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী,সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ গোলজার আহমদ হেলাল, শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া পাঠানটুলা কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা লুৎফুর রহমান হুমায়দী ,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলা সভাপতি আক্তার হোসেন, জূলাই আহত যোদ্ধা মাহবুবুর রহমান তাসলিম,শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ।
সভায় জেলা পরিষদ, সিলেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সিংহ, সিলেটের স্থানীয় সরকার এর উপপরিচালক সুবর্ণা সরকার, সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আনোয়ার জামান চৌধুরী,সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোশনুর রুবাইয়াত, জেলা শিক্ষা অফিসার এ এস এম আব্দুল ওয়াদুদ, জেলা সমাজসেবা উপপরিচালক রফিকুল হক,সিলেটের এনডিসি কিশোর কুমার পাল, সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগণ,জেলা পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার আরো বলেন, স্বৈরতন্ত্র কোনকালে কখনোই ঠিকে থাকতে পারেনি। জনরোষ তা বরাবর উপড়ে ফেলেছে।পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় গিয়ে দুঃশাসন ও বৈষম্য করেছিল।ছাত্র জনতা তা প্রতিহত করে দেশ স্বাধীন করেছে। স্বাধীনতার পরে এদেশের একদলীয় শাসন কায়েম হয়েছিল, জনগণের কন্ঠরোধ করা হয়েছিল, মানুষের মৌলিক অধিকার ভুলুন্ঠিত করা হয়েছিল। মানুষ তা পরাভূত করেছে। তিনি বলেন, নব্বুই দশক শহিদ নুর হোসেন, ডা: মিলনেরা ঠিক একইভাবে স্বৈরাচারকে হঠিয়েছিল। আমরা তা ভুলিনি। তিনি বলেন, চব্বিশে এসে শহিদ আবু সাঈদেরা আবার দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে স্বৈরাচার রুখতে হয়। শহীদ আবু সাঈদ এক শক্তি, এক প্রেরণা। বিশ্বের ইতিহাসে এমন সাহসিকতা বিরল ঘটনা। যুগ যুগ ধরে অনন্তকাল মানুষ তা স্মরণ করবে। প্রধান অতিথি বলেন, পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট আর ফিরে আসতে পারবে না। মেট্রোরেল দেখতে ফ্যাসিস্ট হাসিনার চোখ মুছাকে বাটফারী আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, দুই হাজারের অধিক মানুষ খুনের ঘটনায় তার বিন্দুমাত্র টনক নড়েনি। তাই ফ্যাসিস্ট কে জনগণ শিক্ষা দিয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, শহীদদের স্মরণে ও স্মৃতি রক্ষার্থে সরকার কাজ করছে। ফ্যাসিবাদ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে ছোটোখাটো ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।