জলবায়ু, বন ও পরিবেশ এবং পানি সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের বক্তব্যের আশাহত ও মর্মাহত হয়েছে জনগণ। আবাসিক এলাকায় কেয়ামত পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ প্রদান না করা ও শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান কিংবা পর্যটন শিল্পের দৃশ্যমান উন্নয়ন না করে পাথর কোয়ারি বন্ধ করে দেয়ার বক্তব্যের পরি প্রেক্ষিতে রবিবার (১৫ জুন) সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন।
এসময় বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক এডভোকেট মো. আব্দুল আহাদ, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদের সদস্য সচিব গোলজার আহমদ হেলাল, বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রহিম, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হান্নান।
বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদের নেতৃবৃন্দ দুই উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বৃহত্তর জৈন্তিয়া থেকে প্রথম গ্যাস উৎপাদন হয় ,আর আমরা সেই গ্যাস পাব না এটা মেনে নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। উৎপাদিত অঞ্চলে এসে কেয়ামত পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ হবে না এটা বলা আমাদের জন্য লজ্জাকর এবং বৃহত্তর জৈন্তিয়া তথা সিলেটবাসীর সাথে উপহাস করা হয়েছে বলে তারা মনে করেন। এটি উপদেষ্টার ব্যক্তিগত মত না সরকারের বক্তব্য তা জনগণের সম্মুখে যৌক্তিক ব্যাখ্যা সহ উপস্থাপন করার দাবী জানান।নেতৃবৃন্দ বলেন, সারা বাংলাদেশে না হলেও সিলেটের প্রতিটি ঘরে ঘরে অন্তত গ্যাস দেয়া উচিত, কারণ আমাদের এই গ্যাস দিয়ে সরকার কোটি কোটি টাকা আয় করছে। এছাড়া সিলেটের পাথর কোয়ারি সনাতন পদ্ধতিতে খুলে দিয়ে ইজারা প্রদান করার দাবী জানানো হয়। পরিবেশ উপদেষ্টা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে সিলেটের পাথর কোয়ারী বন্ধের কথা বলাটা শ্রমিক জনতার আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন। বালু, পাথর ও খনিজ সম্পদ কে কাজে লাগিয়ে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে পাথর কোয়ারী খুলে দেয়া বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞান সম্মত বলে তারা দাবী করেন। বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ বিনয়ের সাথে দুই উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখান করে জনবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। সেই সাথে জাফলংয়ে কুচক্রী মহল কর্তৃক উপদেষ্টাদের গাড়ি বহর আটকানোর নিন্দা জানান এবং অবৈধভাবে বালু পাথর লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, পাথর কোয়ারির সাথে একজন শ্রমিক জড়িত নয় তার পুরো পরিবার জড়িত। এমনিতে অবৈধ ভাবে দিনের বেলা ও রাতের বেলা চুরি করে পাথর উত্তোলন করে লুটপাটকারীরা।তাই সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের জন্য ইজারা দিলে সরকার রাজস্ব পাবে এবং শ্রমিকরা তাদের পরিবার নিয়ে চলতে পারবে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, শুধু গ্যাস ও পাথর কোয়ারী নয় বৃহত্তর জৈন্তিয়ার রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন করা এবং পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে গাড়ির ব্যবস্থা করা, পর্যটকদের রাত্রি যাপনের জন্য সরকারের উদ্যোগে হোটেল স্থাপন করতে হবে। রাস্তাঘাটের গোল চত্বর গুলোতে বৃহত্তর জৈন্তাপুরের ইতিহাস ও পর্যটনের নান্দনিক দিকগুলো তোলে ধরার দাবি জানান তারা। এছাড়াও বৃহত্তর জৈন্তিয়ার ছেলে মেয়েদের চাকরি প্রদান করার দাবি জানান গ্যাস ক্ষেত্র সহ জৈন্তিয়ার বিভিন্ন সরকারি অফিসগুলোতে। তারা বৃহত্তর জৈন্তিয়া উন্নয়ন পরিষদের দশ দফা দাবির দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।তারা জানান, ইতোমধ্যে সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর। বৃহত্তর জৈন্তিয়ার দশ লক্ষ জনগণের কথা চিন্তা করতে হবে ।
তারা বৃহত্তর জৈন্তিয়ার পর্যটন স্পট গুলোর রাস্তার উন্নয়ন,বৃহত্তর জৈন্তিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবি জানান । দশ দফা দাবির অন্যতম দাবি বৃহত্তর জৈন্তিয়ার প্রতিটি ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ প্রদান করা। দেশের প্রথম গ্যাসক্ষেত্র জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর। সেখানে ইতোমধ্যে আরো গ্যাস কূপ আবিষ্কৃত হয়েছে। অথচ দীর্ঘ ৬৯ বছরে গ্যাস উৎপাদিত অঞ্চলের জনগণ তা থেকে বঞ্চিত। এর চেয়ে দু:খজনক ও বিমাতাসুলভ ঘটনা পৃথিবীতে আর নেই।
সম্পাদকঃ আব্দুল বাতিন ফয়সল
সহ-সম্পাদকঃ আব্দুল মুহিত দিদার
মোবাইলঃ ০১৭৩০১২২০৫১
sylhetexpress.net