
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় তিতারাই হাজি কালা মিয়ার ঘাট থেকে অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন বন্ধ এবং জাফলং, বাংলা বাজার, বালির হাওর, বুদির গাও ইসিএ (ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া) থেকে ডেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবিতে এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকেলে গোয়াইনঘাট উপজেলার শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন গোয়াইনঘাট শাখার উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন গোয়াইনঘাট শাখার আহ্বায়ক আজমল হোসেনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন ইমনের পরিচালনায় আয়োজিত এ সমাবেশে বক্তারা বলেন, আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় সিন্ডিকেট গঠন করে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। পাশাপাশি একটি চক্র চাঁদাবাজির মাধ্যমে ফায়দা লুটছে। এতে বালু ও পাথর উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙ্গন তীব্র হচ্ছে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে এবং পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন, নদী ও পরিবেশ রক্ষার জন্য তাদের সংগঠন নিরলসভাবে কাজ করছে। তারা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার এবং ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। গোয়াইনঘাটকে ধ্বংস করার জন্য ইসিএ এলাকায় নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই নৌযান দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। তারা অভিযোগ করেন, তরেক রহমানের আদেশ অমান্য করে এবং বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নাম ব্যবহার করে এই অবৈধ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, যা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।
সমাবেশে বক্তারা প্রশাসনের প্রতি কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমরা প্রশাসনকে মেনে চলি বলেই তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু আপনারা যদি টাকা খেয়ে গোয়াইনঘাটকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেন, তবে নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের কর্মীরা চুপ করে থাকবে না। এবার প্রতিবাদ নয়, প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।”
এদিকে, পরিবেশ উপদেষ্টা গোয়াইনঘাট সফরকালে নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে তার কাছে লিখিত অভিযোগ পেশ করা হয়। বক্তারা বলেন, “যারা ইজারা বিহীনভাবে ইসিএ সংলগ্ন এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করে এই পর্যটন অঞ্চল ধ্বংস করছে, তারা যে দলেরই হোক না কেন, আমরা তাদের ভয় পাই না।” তারা আরও অভিযোগ করেন, চাঁদাবাজ আজির পরিবেশ উপদেষ্টাকে আক্রমণের চেষ্টা করেছে এবং তার গাড়ি অবরোধ করে ভুয়া স্লোগান দিয়েছে। এই সিন্ডিকেটর নেতৃত্ব দিচ্ছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব জাহিদ খান, সিলেট জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমদ, পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সভাপতি আজির প্রমুখ।
এছাড়া, বালু উত্তোলন করতে গিয়ে পাভেল নামে এক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বক্তারা দাবি করেন। তারা বলেন, “আবু সাঈদ মুগ্ধরা প্রশাসনকে চাঁদাবাজদের গোলামি করার জন্য জীবন দেয়নি। যারা পরিবেশ উপদেষ্টাকে অপমান করার চেষ্টা করেছে, তাদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে।”
বক্তারা ঘোষণা দেন, আগামীকাল থেকে গোয়াইনঘাটের সচেতন জনতার সাথে নিয়ে বাংলাদেশ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনবিহীন কোনো নৌকাকে বড় ব্রিজের উপর উঠতে দেওয়া হবে না। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “এই আন্দোলনে যদি কোনো সাধারণ মানুষ আহত হয়, তাহলে তার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে।”
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক আজমল হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ মুন্না ও সিহাব উদ্দীন সিহাব, যুগ্ম সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন ইমনসহ গোয়াইনঘাটের সর্বস্তরের জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।