
সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি নিয়মিতকরণ ও ভাতা প্রদানে ভিসিকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। তারা বলছেন, এই সময়ের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহবান করে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারী প্রদান করেন তারা। শনিবার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের পক্ষ থেকে এই আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
পরিষদের পক্ষে প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী মাসুদ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তাদের পরিশ্রমের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সেশন জট তৈরি হয়নি। একদিনের জন্যও তারা কাজ বন্ধ রাখেননি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেন মুকুল আমাদের একাধিকবার চাকরি স্থায়ী করার আশ্বাস দিয়েছেন। এ জন্য ২০২৩ সালের ২৬ জুন শূণ্য পদের বিপরীতে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। ২০২৩ সালের ১৭ জুন আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। কিন্তু আজ অবদি দু‘টি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে স্বৈরশাসক হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক সাবেক ভিসি এনায়েত ও রেজিস্ট্রার ফজলুর রহমান গা ঢাকা দেন। দু‘জনই ছিলেন ফ্যাসিস্টের দোসর। এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যানারে আন্দোলনরতরা ভিসি এনায়েত ও ফজলুর রহমানের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এরই পরিপ্রক্ষিতে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার ফজলুর রহমান পদত্যাগ করেন। প্রায় ৪ মাস পর ভিসি ডা. এনায়েত হোসেন ক্যাম্পাসে ফেরেন। খবর পেয়ে বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্যাম্পাসে এসে তাদের চাকরি স্থায়ী ও বেতন ভাতার বিষয়ে ভিসির কাছে জানতে চান। এক পর্যায়ে ভিসিকে অবরুদ্ধ করেন বেতন বঞ্চিতরা। প্রায় আড়াই ঘন্টা পর আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ও জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ১৫ দিনের মধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণসহ সব দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন ভিসি. এনায়েত। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার মেজর মেহেদী অবরুদ্ধ অবস্থা তুলে নিতে অনুরোধ করলে তারা অবরোধ তুলে নেন।
সংবাদ সম্মেলনে আেেরা জানান, ভিসির আশ্বাসের ১৫ দিনের ডেডলাইনের ১৪ দিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সিন্ডিকেটে ডিন অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামকে সভাপতি করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ইতোপূর্বে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃতদের চাকরি নিয়মিতকরণ ও বেতন-ভাতাদি প্রদান প্রসঙ্গে একটি সুস্পষ্ট প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এছাড়াও সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত সকল সদস্যের আলোচনার প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিশীলতা, আদালতের নির্দেশনা, আর্থিক ও প্রশাসনিক বিধি-বিধান, মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি এর নির্দেশনা পর্যালোচনা করে মানবিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় নিয়োগের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে প্রতিবেদন প্রদানে কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। উদ্ভত পরিস্থিতে অনিয়মিত নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকুরি নিয়মিতকরণের লক্ষ্যে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য্যের অনুমোদনক্রমে দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আবেদন জমা প্রদানের শেষ সময় ছিলো ১৯ ডিসেম্বর। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে তারা আবেদনপত্র জমা দেন। এরপর গত ২০ ডিসেম্বর ভিসি এনায়েত হোসেন পদত্যাগ করলে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারী তারা ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ভাইভা পরীক্ষার বোর্ড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম ছাড়াও বিএমএন্ডডিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম, ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন।
কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানান, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ডা. ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারি। তিনি যোগদানের পর গত ১৬ মার্চ উপাচার্যের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি ২৫ মার্চ পর্যন্ত উমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করবেন বলে লিখিত পত্রের মাধ্যমে ভিসিকে জানানোর পরও তার অনুপস্থিতিতে গত ২৩ মার্চ বর্তমান ভিসি ১২তম সিন্ডিকেট সভা আহবান করেন। কমিটির সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম উপস্থিত না থাকায় নিয়োগ রিপোর্টটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। ওই সিন্ডিকেটের পর থেকে উপাচার্য চৌহাট্টাস্থ কার্যালয়ে অফিস করেন নি। তিনি পূর্বের ভিসির রেখে যাওয়া স্বৈরাচার দোসরের মতালম্বী মানুষ দিয়ে দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে ওসমানী মেডিকেল কলেজে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তাই আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহবান করে উক্ত রিপোর্টের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ।