সিলেটে সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষে
সিসার মত নীরব ঘাতক শিশুর শারিরীক
মানসিক বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলে
-সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ
‘সিসা দূষণ বন্ধ হলে, বাড়বে শিশু বুদ্ধি বলে’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সিলেটেও আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ (২০-২৬ অক্টোবর) ২০২৪ পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে ইউনিসেফের সহযোগিতায় আজ (২৩ অক্টোবর) সিলেটের সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রাঙ্গন থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি ও র্যালি পরবর্তী পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ র্যালির উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, সিসা একটি নীরব ঘাতক যা শিশুর শারিরীক ও মানসিক বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। সিসার বিষক্রিয়ায় বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ শিশু আক্রান্ত এবং এই দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। তিনি সিসা দূষণ প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহŸান জানান।
উদ্বোধনী পর্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডাঃ নূরে আলম শামীম, সিলেটের সিভিল সার্জন ডাঃ মনিসর চৌধুরী, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ জন্মেজয় দত্ত, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ জাহিদুল ইসলাম, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ, ইউনিসেফ সিলেটের চিফ অফ ফিল্ড অফিস কাজী দিল আফরোজা ইসলাম, ইউনিসেফের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফজলে এলাহী প্রমুখ।
র্যালিতে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস ও জেলা সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ গার্ল গাইডস এসোসিয়েশন সিলেট অঞ্চলের সদস্য, বেসরকারি সংগঠন সুশীলনের সদস্য এবং অন্যান্য বিভিন্ন স্তরের প্রায় দুই শতাধিক অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। র্যালিটি সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ আম্বরখানা- চৌহাট্টা সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
উল্লেখ্য ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের উপর সিসা দূষণের প্রভাব মারাত্মক। সিসা শিশুদের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে,পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যৎ বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গবেষণা অনুযায়ী, সিসার বিষক্রিয়ার ফলে বাংলাদেশের শিশুদের বুদ্ধিমত্তা সূচক (ওছ) উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে এবং প্রায় দুই কোটি আইকিউ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে।
দৈনন্দিন ব্যবহারের অনেক পণ্য যেমন: রং, হলুদ, মরিচ, অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিকের থালা-বাসন, খাবারের পাত্র, বাচ্চাদের খেলনা, আয়ুর্বেদিক ঔষধ, সুরমা, সিঁদুর, প্রসাধনী ইত্যাদিতে সিসার অতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া, সিসাযুক্ত এসিড ব্যাটারির অপরিকল্পিত পুনঃচক্রায়ন কারখানার মাধ্যমেও সিসা আমাদের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশে সিসা দূষণ প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সিসার ব্যবহার সীমিত করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ব্যাটারি পুনঃচক্রায়ন কারখানায় সঠিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা, শিশুদের খেলনা ও প্রসাধনী সামগ্রীতে সিসার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং সিসামুক্ত রং ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে।