
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও জবাবদিহির অন্যতম প্রধান ভিত্তি। সেই ভিত্তিতেই যেন আঘাত হানা হলো ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানি অনুষ্ঠানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। হাওর অঞ্চলের বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২০২৫–২৬ অর্থবছরের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত ও স্কিম প্রণয়ন নিয়ে আয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ এ গণশুনানিতে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন দায়িত্ব পালনরত এক সংবাদকমীর ওপর প্রকাশ্য বাধার অভিযোগ ওঠে আওয়ামীলীগের দোসরের দু'জনের বিরুদ্ধে। গত শনিবার (২৭ ডিসেম্বর ২০২৫) সকাল ১১টায় আয়োজিত এ গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মিজ ডিপ্লোমেসী চাকমা। তিনি বক্তব্য রাখার সময় সভাস্থলে রিপোর্টিং করছিলেন দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ-এর স্টাফ রিপোর্টার এবং ছাতক উপজেলা অনলাইন প্রেসকাবের সদস্য মোঃ আব্দুস ছালাম। তথ্য সংগ্রহ ও ভিডিও রেকর্ডিং সাংবাদিকতার নিত্যদিনের কাজ করছেন। কিন্তু এ দায়িত্ব পালনের সময় হঠাৎই বাধার মুখে পড়েন সংবাদকমী ছালাম। তার হাত থেকে দুজন আওয়ামীলীগের দোসর মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় চিহিৃত আওয়ামীলীগের চোরাচালানীদের কাছ থেকে চাদাবাজি, বিভিন্ন অফিসে ধান্দাবাজি নামধারি দালাল শাহ মোঃ আখতারুজ্জামান ও ভুয়া ডিবির সোর্স পরিচয়কারি মোঃ ফজল উদ্দিন বাধা দেন এবং এক পর্যায়ে শাহ মোঃ আখতারুজ্জামান ছালামের হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাটি সভাস্থলেই উপস্থিত অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সংবাদকমীদের নিরাপত্তা প্রশ্নে দেশজুড়ে যখন উদ্বেগ বাড়ছে, সেই প্রেক্ষাপটে এই ঘটনা নতুন করে আলোচনার ঝড় তোলে। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই ছাতকের সংবাদকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সাংবাদিকের কাজে বাধা শুধু ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, এটি তথ্যের অধিকার, স্বাধীন মত প্রকাশ ও প্রশাসনিক জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ—এমনই মত প্রকাশ করেন অনেকেই। ছাতক উপজেলা অনলাইন প্রেসকাব আনুষ্ঠানিকভাবে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি তানভীর আহমদ জাকির, সহ-সভাপতি ছফির আহমদ এবং সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম সুমন এক যৌথ বিবৃতিতে এঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন— “একজন সাংবাদিককে গণশুনানির মতো জনস্বার্থমূলক কর্মসূচিতে বাধা প্রদান শুধু অশোভন নয়, তথ্যপ্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার সামিল। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।” বিশ্লেষকদের মতে, গণশুনানির উদ্দেশ্যই হলো জনগণের অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। সেখানে সাংবাদিকের উপস্থিতি কেবল নিয়ম নয়, বরং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এমন অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকের ওপর হামলা বা বাধা দেওয়ার ঘটনা প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার প্রতি জনমানুষের আস্থা নড় বড়ে করে এবং অপরাধ প্রবণতাকে উৎসাহিত করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পর বারবার বলা হয়েছে—দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া এই প্রবণতা রোধ করা সম্ভব নয়। ছাতকের ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল, মাঠ পর্যায়ে সাংবাদিকরা এখনও নিরাপদ নন। তাই প্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় জরুরি হয়ে পড়েছে। গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন—সাংবাদিকতা রুদ্ধ হলে গণতন্ত্র শ্বাসরুদ্ধ হয়। ছাতকের এই ঘটনা শুধুই একজন সাংবাদিকের ওপর হামলা নয়, এটি অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম থামিয়ে দেওয়ার এক ধরনের বার্তা। তারা আরো বলছেন—এ ধরনের হুমকি, ভয়ভীতি কিংবা আক্রমণ সাংবাদিকতার পথ থেকে তাদের সরাতে পারবে না। ছাতকের গণশুনানিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি এখন স্থানীয় প্রশাসন কীভাবে মোকাবিলা করে, সে দিকেই তাকিয়ে আছে সচেতন নাগরিক সমাজ।
সম্পাদকঃ আব্দুল বাতিন ফয়সল
সহ-সম্পাদকঃ আব্দুল মুহিত দিদার
মোবাইলঃ ০১৭৩০১২২০৫১
sylhetexpress.net