
মাওলানা মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী
√প্রশ্ন– মৃতরা কি দুনিয়ার জীবনে কী করেছেন কী বলেছেন সেসব স্মৃতি বারজাখ জীবনে স্মরণ করতে পারেন? কিংবা নিজ ইচ্ছায় স্বপ্বে এসে কাউকে কোনকিছু বলতে পারেন?
উত্তর–
জ্বিনা । এটা সম্পূর্ণই আলাদা জগতের বিষয় । জাগতিক দুনিয়ার সবকিছু থেকে মৃত ব্যাক্তির পর্দা পড়ে গেছে সেটার নামই বারজাখ । সেই জগতের বিষয় বা রুহের বিচরণ সম্পর্কে কোরআন হাদীস দুনিবাসীকে যা জানিয়েছে এর চাইতে বেশী কিছু কেউ জানেননা।
মৃত ব্যক্তি দুনিয়ার স্মৃতি স্মরণ করবেন বা পেছনের ঘটনা নিয়ে ভাববেন—এমন কোনো ইঙ্গিত কোরআন ও হাদিসে পাওয়া যায় বলে কোন বিদগ্ধ আলেম বলেননি । বরং বলা হয়েছে, মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে মানুষ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। মৃত্যুর পরপরই তাঁরা অনন্ত যাত্রার দিকে ছুটতে থাকেন।
স্বপ্নের গুরুত্ব অপরিসীম তাতে কোন সন্দেহ নেই । নবীরাতো স্বপ্নযোগে ওহীপ্রাপ্ত ও হতেন। স্বপ্নে কোন মৃতব্যক্তি হাজির হয়ে কোন পরামর্শ দেওয়া,পেছনের কোনকিছু স্মরণ করিয়ে দেওয়া কিংবা পৃথিবীর সাম্প্রতিক কোনকিছুর খুঁজ রাখতে পারা এসবকিছু সম্ভবপর নয় । স্বপ্নে যখন কেউ এসে উপস্থিত হন সেটা মৃতব্যক্তি নিজ ইচ্ছা পোষণ করার কারণে স্বপ্নে আসতে পারেন এরকম কোন সুযোগের কথা কোরআন হাদীস জানাচ্ছে না।
অনেক সময় আমাদের পিতা-মাতা,উস্তাদ কিংবা যে কাউকে যখন আমরা স্বপ্নে দেখি সেটা একান্তই নিজের মস্তিস্কের কাজ। যা আল্লাহ তায়ালা ঘুমের মধ্যে সৃষ্টি করে দেন। অনেক ক্ষেত্রে স্বপ্ন মহান আল্লাহর পরামর্শ ও হতে পারে যা কোন মৃত কিংবা জীবিত ব্যাক্তির সূরতে আমরা দেখতে পাই।
স্বপ্নের মাধ্যমে মহান আল্লাহ প্রকৃতপক্ষে অনেক ইশারা দিয়ে থাকেন। (ইবনে শিরীন (রহ) স্বপ্নের ভালো ব্যাখ্যাকার ছিলেন। এসব ব্যাপারে তাঁর ব্যাখ্যা গ্রন্থ আছে।)
এমনকি মৃতব্যক্তি জীবিতদের কর্মকান্ড দেখতে বা তাদের কথাবার্তা শুনতে পায় না। আল্লাহ স্বীয় রাসূল (সা)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মৃতদেরকে শুনাতে পারেন না’ (নামল ৮০, রূম ৫২)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আপনি কবরবাসীদেরকে শুনাতে সক্ষম নন’ (ফাত্বির ২২)।
তবে অনেকে রাসূল (স)-এর একটি হাদীস দ্বারা শুনার উপর দলীল পেশ করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, মানুষ যখন দাফন সেরে চলে আসে, কবরে মৃত ব্যক্তি তাদের সেন্ডেল বা জুতার আওয়াজ শুনতে পায় (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা-১২৬ ‘ঈমান’ অধ্যায় ‘কবর আযাব’ অনুচ্ছেদ)। এর উত্তরে শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, যখন ফেরেশতাগণের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা হয়, সেসময় সে জুতার আওয়াজ শুনতে পায়, অন্য সময়ে নয় (সিলসিলাতুদ দ্বঈফাহ) ।
প্রকৃতপক্ষে বারজাখ জীবনে রুহ ঘুমিয়ে থাকে বলে সূরা ইয়াসীনে উল্লেখ রয়েছে-
-قَالُوا يَا وَيْلَنَا مَن بَعَثَنَا مِن مَّرْقَدِنَا ۜ ۗ هَٰذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمَٰنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُونَ
তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উল্থিত করলো? রহমান আল্লাহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রসূলগণ সত্য বলেছিলেন।( সুরা ইয়া-সীন)
এ আয়াত থেকেও আমরা নিশ্চিত হলাম যে,মৃত আত্না দুনিয়ার কোন স্মৃতি ধারণ করার ফুরসতই পাননা যেহেতু তাঁরা ঘুমিয়ে থাকেন বা ঘুমিয়ে আছেন । সেদিন সবাই উল্থিত হয়ে ক্বিয়ামাতের ময়দানে একত্রিত হবেন । তখন আমলনামা সবকিছুই স্মরণ করিয়ে দিবে ৷
লেখক-কলামিস্ট,ধর্মীয় বিশ্লেষক ও ইসলামী চিন্তাবিদ