
আনোয়ার হোসেন মিছবাহ্ :
শরীরের লোম কূপ প্রভাবিত এমন কয়েকটি শব্দের সাথে ভেজাল শব্দটিও যায়।বিশেষ্যপদের দখলে থাকা শব্দটি যে,মিশ্র-মিথ্যা,মিশাল অশুদ্ধ,জালিয়াতিকেই ইঙ্গিত করে,তা বলার অপেক্ষা রাখে না।ব্যক্তির কাছে যেদিন সততার পরাজয় ঘটে সেদিনই ভেজাল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।মানুষ তখন আর মানুষ থাকে না।সে না হতে পারে সামাজিক না পারিবারিক। সে হোক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেউ,সে হোক আঞ্চলিক ক্ষমতার।কেউ গ্রামপ্রধান,মেম্বার,চেয়ারম্যান,কাউন্সিলর বা নিতান্তই একজন সাধারণ মানুষ। ভেজাল বা Adulteration বা Impurity জিয়নো মানুষ তাদের Adulteration বা Impurity কে নিজস্ব বলয়ে রেখে দিলে হয়তো এতোটা প্রভাব পড়তো না যতোটা না প্রভাব পড়েছে নিত্য
বাজারে।নৈমিত্তিক কেনাকাটায়।ফলে ভেজাল দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে-গ্রাম থেকে শহরে।শহর থেকে বিভাগে আবার সেখান থেকে গোটাসমাজ,অঞ্চল,দেশ,জাতি,
ধর্ম,বর্ণসহ গোটাবিশ্বে।
হয়তো তাই দেশের প্রধান আলোচনা ভেজালে বন্ধী।ভেজাল এখন নিত্যসমস্যা।যখন দেখি;মানুষ অত্যন্ত নিম্নমানের অথবা ক্ষতিকারক,অপ্রয়োজনীয় মিশেল দিয়ে মানুষের জীবন মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়,তখন বিশ্বাসের কাছে পরাজিত হই।না বুঝে প্রতিদিন অ মানুষের সাক্ষাতে দিনাতিপাত করি।ঠকে যাই।জীবনকে হুমকির দিকে মেলে ধরি।এর কারণ হিসেবে বলতে পারি-বেশি বেশি মুনাফা।সুষ্ঠু দেখভালের অভাব।আইন প্রয়োগে শক্তিহীন।নৈতিকতার তলানি পদে-পদে,পথে-
পথে,চাদাবাজি।মধ্যস্বত্বভোগীর অত্যাচার।দাদন দানকারীর পীড়ণ।যথাযথ সংরক্ষণের পর্যাপ্ত অভাব।
আমরা মানছি-মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অর্থের প্রয়োজন,তাই বলে কী- প্রতিদিন মানুষের জীবন নিয়ে দোলনা- দোলনা খেলে যাবো?খাদ্যে ভেজাল মেশানো নিন্দনীয় জেনেও ব্যক্তি,কতিপয় ব্যক্তি।গ্রুপ,কতিপয় গ্রুপ।সিন্ডিকেট বা প্রতিষ্ঠান।চাদা দানে ক্ষমতালোভী।দল-উপদলে ভিড়ে যাওয়া ছায়াভোগী।হঠাৎ বদলে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের বৈরি প্রজন্ম।পুচকে থেকে বড়ো মুনাফালোভী।তারা তা ই করে যাচ্ছেন নিয়ত-প্রতিদিন।এজন্যই ভেজাল বা ফ্যাসাদ আতঙ্কিত শব্দের নাম।আমাদের পাড়া থেকে রাষ্ট্র,রাষ্ট্র থেকে সমাজকে,
আমাদের পত্রিকার পাতায়-পাতায় স্যাটেলাইট,
টেরিস্টেরিয়াল ১২ থেকে ৫২ ইঞ্চি টিভি বা অ তারের বেতারে গম গম করে উঠছে প্রতিদিন।বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি-এমন কোন খাবার নেই,এমন কোন পণ্য নেই,এমন কোন কস্টিউম,কসমেটিক্স,পানীয় নেই,
যেখানে ভেজাল নেই।খাদ্যের ধরণ বোঝে ঔজ্জল্য বাড়াতে কোন খাবারে কৃত্রিম রঙ।ওজন বাড়াতে বালি, বাটখারা দাঁড়িপাল্লার নিত্তিতে শিক,চৌম্বক লাগানো থেকে শুরু করে কালি,কাঁকর,রঙ,পানি মেশানো হয়।সবজি-ফল-মাছ-মাংস তাজা রাখতে মেশানো হয় ফরমালিন।গুঁড়োদুধে মেলামাইন,সিনথেটিক উপাদান।লেডক্রোমেট মেশানো হচ্ছে-হলুদের গুঁড়ােয়।ফল ফলাদিতে আকর্ষণ বাড়াতে কার্বাইড,পচন ঠেকাতে ফরমালিন।মুড়িতে হাইড্রোজ,ইউরিয়া। সবজিকে টাটকা ও সতেজ দেখাতে দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে রখা হয় কপার সালফেট বা তুঁতে মেশানো পানিতে।মচমচে করার জন্য জিলাপি ও চানাচুর ভাজা হচ্ছে-মোটর ওয়ার্কশপ থেকে সংগ্রহ করা গাড়ি বা যানবাহনে ব্যবহৃত পোড়া মবিলে।চাউলের সাথে মেশানো হচ্ছে-সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড,
অ্যারারুট ও পুরনো অথচ নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়দা।আর ওজন বাড়ানোর জন্য গুঁড়ো পাথর,কাঁকর,ইটের গুঁড়ো।
ওজন বাড়ানোর জন্য বাজার থেকে কেনা মোরগ বা মুরগিতে দেওয়া হচ্ছে- হিউম্যান অ্যান্টিবায়োটিক,
মোরগ-মুরগির নিত্য খাবারের সাথে খাওয়ানো হচ্ছে-ভয়াবহ মাত্রার ক্রোমিয়াম।গরুর দুধ বাড়াতে শরীরে পুশ করা হচ্ছে-পিটুইটারি ইনজেকশন।খুব অল্প বয়েসি বা শুকনো গরুকে অল্প দিনে মোটা করে।ফেলতে দেওয়া হচ্ছে-অধিক মাত্রায় স্টেরওয়েড,পরিমাণে বেশি মাত্রায়
ইউরিয়া।অবিক্রিত মাংস ফ্রোজেন করে রেখে টাটকা-বাশি বা পচা মাংস মিলিয়ে গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাকে।গরুর মাংস রেখে গোপনে জবাই করা মহিষের মাংস মিশ্রণ নৈমিত্তিক ব্যাপার।গরু বা খাশির মাংশ বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে কুকুর বেড়ালের মাংশ।চিনির ঘনত্বের জন্য সোডিয়াম সাইক্লামেট ও ঘনচিনির সাথে মেশানো হচ্ছে-ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার।চিনি-হাইড্রোজ-ফিটকিরি এবং চুন মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে-খেজুরের গুড়।মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবারে পাওয়া যাচ্ছে -প্রায় শতভাগ ভেজালমধু,রসগোল্লা,চমচম,ছানার মিষ্টি ও আচারে পাওয়া গেছে-ক্যাডমিয়াম,আর্সেনিক,
শিসা,পারদ,নিকেল,অ্যালোমিনিয়াম,লিথিয়ামের মতো বিষাক্ত বিষ।রাসায়নিকের রসায়নে তৈরি নকল দুধের ছানায় তৈরি হচ্ছে -সবার কাছে লোভনীয় মিষ্টি।আবার মিষ্টির সৌন্দর্য ও মিষ্টতা বাড়াতে দেওয়া,হচ্ছে-ক্যামিকেল মিশ্রিত রঙ ও ক্রিম।আরও আছে-
টিস্যুপেপার দিয়ে ছানা তৈরি বা রসগোল্লার যোগান।আইসক্রিমে-ময়লা নালা,পুকুরের পানির সাথে ওয়াশিং পাউডার।পক্ষাঘাত সৃষ্টিকারী খেসারির ডাল ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে-হোটেল,রেস্তোরাঁর পেঁয়াজু,বড়া,বেগুনি,
আলুনি,পাকুড়ার ব্যাসন।বেকারির রুটি-পাউরুটিতে ব্যবহৃত হচ্ছে -ক্ষতিকর পটাসিয়াম ব্রোমেট,পটাশিয়াম,
আয়োডিন,পিপারমেন্ট,সোডা,ব্যাকিংপাউডার,মবিল।খাদ্যদ্রব্য সতেজ রাখার জন্য ট্যালো,ফ্যাট অ্যাসিড ও ইমুউসাইল্টিং টেক্সটাইল রঙ।রোগি ও বাচ্চাদের অনন্য নিরাপদ হিসেবে পরিচিত তরল দুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে-সয়াবিন তেল,পামওয়েল,হোয়াইট পাউডার,
হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড,মিল্ক পাউডার,গ্লুকোজের রাসায়নিক পানি।এছাড়াও ভাতের মাড় ও চিনি মিশিয়ে আগুনে ফুটিয়ে কাটিংওয়েল ও এসেন্স মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে-সুবাশ।বিস্কুট ও রেস্তোরাঁর গ্রীলে,কাবাবে মেশানো হচ্ছে-টেক্সটাইল ও লেদার ও খাবারে মেটালিক ইয়েলো রঙ।সেমাই ও নুডলস তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে-নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়দা,পামওয়েল,অ্যারাররুট,সাবান তৈরির রাসায়নিক উপাদান তাল্লু ও এক প্রকার রাসায়নিক পাউডার।কৃত্রিম ও গন্ধদ্রব্যের সাথে বণষ্পতি বা ডালডার সাথে পশুর চর্বি যুক্ত করে তৈরি হচ্ছে-খাঁটি ঘি।বস্তা বস্তা করে পচে গলে যাওয়া গুঁড়োদুধ দিয়ে তৈরি হচ্ছে-কনডেন্সড মিল্ক।বুড়ো ও বাচ্চাদের নিত্য খাবারে দেওয়া হচ্ছে- অতিরিক্ত রেডিয়েশন।বাজার কুড়ানো পচে যাওয়া কুমড়ো সংগ্রহ করে তা দিয়ে তৈরি হচ্ছে-বাচ্চাদের জুস।খাল-নদী-পুকুরের পানিকে ফিটকিরি বা ক্লোরিন দ্বারা পরিষ্কার করে ভরে দিয়ে বানানো হচ্ছে-মিনারেল ওয়াটার।তৃষ্ণা নিবারনের কোমল পানীয়ের সাথে মেশানো হচ্ছে-বিষাক্ত কার্বোক্সি মিথাইল,সেলুলোজ,নেষাক্তএ্যালকোহল।বিষাক্ত
ক্যামিকেল ও অবৈজ্ঞানিক লতাপাতার শেকড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে -যৌন উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য শরবত।বিশেষ কায়দায় ডাবের পানি বের করে ভরা হচ্ছে-ময়লা পানি।তরমুজ ফলের ভেতর লাল রঙ বাড়ানোর জন্য সিরিঞ্জ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে-তরল পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট।ফল পাকানোর জন্য-ক্যালসিয়াম কার্বাইড।সরিষার সাথে শিয়ালকাঁটার বীজ মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে-খাঁটি সরিষার তেল।বাদাম তেল বা তুলা বীজ মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে-খাঁটি নারিকেল তেল।সুপারি সাদা করতে অ্যারারুট ও বরিক পাউডার।মরিচের গুঁড়ো তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে-পচা মরিচ বা পটকা।ধানের তুষ,ইটের গুঁড়ো ও লাল রঙ,হলুদ ও মসলার গুঁড়ো তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে-নষ্ট হয়ে যাওয়া হলুদ ও মসলা,পচা চাউলের গুঁড়ো ও রঙ-ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো হচ্ছে-অধিক পুষ্টির যোগানদাতা কলা।আপেলে,আঙ্গুরে,লিচুতে ফরমালিন। আমে-ক্যালসিয়াম কার্বাইড।পেপে,টমেটো,আনারসে-ক্যালসিয়াম কার্বাইড।ফুলকপি সাদাকরণে-ব্লিচিং পাওডারের স্প্রে।সরিষা বীজে-আরগেমেন বীজ।জিরাতে-মৌরি,কয়লা ও ঘাসের বীজ।পটল,ঢ্যাড়স,করলা,মটরশুটি,ব্রুকলি বা অন্য সবজি কাঁচা ও সজিবতার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে-নিষিদ্ধ ম্যালাকাইট।লবনে সাদা বালু।চা পাতায় করাতি ও শুকনো হয়ে যাওয়া পেপে পাতার গুঁড়ো।মসলাতে ভূসি;কাঠ,কালি,ইটের গুঁড়ো।শুটকিতে দেওয়া হচ্ছে-বিষাক্ত ডিডিটি বা আয়োডিন।ইসবগুলের ভূসিতে ইটের গুঁড়ো র মিশ্রণ থেকে শুরু করে ফার্মের মুরগীর ডিমে হালকা বাদামি রঙ দিয়ে দেশি,প্লাস্টিক ও কচ্ছপের ডিম দিয়ে মুরগীর ডিম বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।ব্যাসন রঙের ক্যামিকেল মাখিয়ে দেশি মাগুর বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে-আফ্রিকা বা অস্ট্রেলিয়ান মাগুর মাছ।মাছের কানকো লাল দেখানোর জন্য সিঁদুর,পানের পিক কোরবান হচ্ছে-আড়তে-আড়তে।শুধু তাই নয়-যে মাছ
কে বলা হয় আমিষের রাজা তার মাঝেও ফরমালিন।মানুষের মুখ কবুতরের মুখে লাগিয়ে খাবার ও বাতাস ভরে বাড়ানো হচ্ছে-কাঠাল পাকাতে কিল, লাত্থির কথা রোজ শোনা গেলেও অধিক মোনাফার আশায় অপোক্ত কাঁঠালের মোচা কেটে দেওয়া হচ্ছে সারাদিন আম কাঁঠালের বোটা,মোচা,ডাটা কেটে বা ফলের ট্রে তে সংশ্লিষ্ট ফলের পাতা বা অন্য ফলের পাতা দেখিয়ে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে হরদম।করোণা ভাইরাস কে পুঁজি করে তৈরি হচ্ছে-নকল মাক্স,হেন্ডস্যানিটাইজার,গ্ল্যাভস,
পিপিই।বিশ টাকার সাবানের সাথে ক্ষতিকর ক্যামিকেল মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে-বিদেশি সাবান।গার্মেন্টসে ব্যবহৃত তরল সাবানের সাথে রঙ ও পারফিউম মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে-নামিদামি ব্র্যান্ডের চুলে দেওয়ার শ্যাম্পু।ভাঙ্গারীর দোকান থেকে সংগ্রহ করা খালি কন্টেইনারে সিরিঞ্জ দিয়ে স্পিরিটের সাথে নানা প্রজাতির রঙ মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে-বডি স্প্রে।কারখানার ভেজাল মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে-স্নো,পাউডার,চন্দন,সিঁদুর,মেছতা,দাগ-ব্যথানাশক ক্রিম,
লোসন,টুথপেস্ট,সেভিংক্রিম,নেইলপোলিস,আলতা,পালিস,লিপস্টিক,মেহেদি,তেল,ম্যাকআপ,ক্যাবল,সুইচ,প্লাগ,চার্জার,শককন্ট্রোলিং সার্কিট,মেইনসুইচ,কাটাউট।ভেজাল মালে তৈরি হচ্ছে- অটোমোবাইলের পার্টস,
পাইপ,প্লাস্টিক পণ্য,সিমেন্ট,ভেজাল মাটির ইট,
ইলেকট্রনিক্স জিনিষ।ভাঙারীর দোকান থেকে সংগ্রহ করা পুরাতন পার্টস,মাদারবোর্ড বা সার্কিট দিয়ে তৈরি হচ্ছে-কম্পিউটারের ডিভাইস বা কম্পিউটারের মনিটর।আবার এসব কম্পিউটারের ডিভাইস ব্যবহার করে নামিদামি ব্র্যান্ড লাগিয়ে তৈরি হচ্ছে-ভেজাল টিভি সেট।IMEI নম্বর বা মাদারবোর্ড বদলিয়ে ভেজাল করা হচ্ছে আসল নামের মোবাইল সেট,জরুরি হেড ডিভাইস ও চার্জার।ব্রান্ডের নাম কে সামান্য পাল্টিয়ে বাটাকে বালা এপেক্স কে এপেক করে গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।খারাপ প্রতিক্রিয়ার জন্য চূড়ান্ত দায়ি মাদক; ইয়াবাও তৈরি হচ্ছে-মহিলাদের জন্মনিরোধক বড়ি,ইয়াবা সাইজ ট্যাবলেট বা চক পাউডারের সাথে ক্ষতিকর রঙ মাখিয়ে তৈরি হচ্ছে নেশার ইয়াবা।ভাতের সাথে বিশেষ গাছের শিকড় পচিয়ে,বিষাক্ত স্পিরিট বা প্রশ্রাব মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে-ভেজাল দেশি মদ। ফেনসিডিলের সাথে এনার্জি ড্রিংক মিশিয়ে নরমাল সিরাপ স্পিরিট মিশিয়ে বানানো হচ্ছে-ভেজাল ফেনসিডিল।ওষুধ তৈরির কাঁচামাল এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট এর সাথে ট্যালকম পাউডার মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে-ভেজাল ওষুধ।স্বর্ণে খাদ মিশিয়ে ২২ কে ২০ এবং কে ১৮ বানিয়ে ঠকানো হচ্ছে-দিনকে দিন।
দেশের নানা স্থানে বিখ্যাত বিরিয়ানি,হালিম,দই,মিষ্টি ইত্যাদিও ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করে দেশের অলিগলিতে বিক্রি করা হচ্ছে- ভেজাল খাবার।সিম নিবন্ধনেও প্রতারণার শেষ নেই।আমরা জানি,একজন গ্রাহক ইচ্ছে করলে একই NID দিয়ে নিবন্ধন নিতে পারেন ২০ টি সিম।আর সেই সুযোগটি ই কাজে লাগাচ্ছে প্রতারক চক্র।গ্রাহক একটি সিম নিবন্ধন করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই নিবন্ধন করে আসছেন একাধিক সিম।যা দিয়ে স্থানে -স্থানে হচ্ছে ভেজাল।নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে একটি গাড়ি,অটোরিকশা নিবন্ধন করে নম্বরপ্লেট দেয় বিআরটিএ বা সিটি কর্পোরেশন।কিন্তু একই নিবন্ধন বা নম্বরপ্লেটে চলে একাধিক গাড়ি।দেখা গেছে রমজান মাস এলেই নানা খাবার বা পণ্যের প্রতি লোভাতুর হয়ে ওঠে ভেজাল ব্যবসায়ি।তারা কৌশলে অপকৌশলে পণ্যে পূর্ণ করে তুলে ভেজাল চাউল,ডাল,
আটা,ময়দায় কম ভেজাল পেলেও সম্পূর্ণ ভেজাল থেকে মুক্ত নয়।বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা WHO এর তথ্যানুযায়ি উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজারে যে ওষুধ বিক্রি হয় তার শতকরা ১৫ ভাগ নকল ও নিম্নমানের ভেজালে ভরা।তথ্য জানা থাকলেও দেশে সরকারি লাইসেন্সে প্রতিষ্ঠিত ২৪১ টি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উৎপাদিত প্রায় ৩০ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ তৈরি করলেও সুষ্ঠু তদারকির মধ্যে নেই।ফলে দেশে উৎপাদনের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধের কাঁচামাল জেনেরিক এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট এর চাহিদা থাকলেও আমদানি বাজারে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।আর সুযোগটি নিচ্ছে-ভূঁইফোড় কিছু কোম্পানি। তারা গোপনে এসব কাঁচামাল পৌঁছে দিচ্ছে মিড ফোর্ড এরিয়ার দোকানে দোকানে।এতে সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে নকল ওষুধের খুচরো ভেজাল।এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ এ জীবন রক্ষাকারী ওষুধ কে নতুন মোড়কে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে-ফার্মেসি কিংবা ওষুধের বাজারে।শুধু তাই নয়,নানা উপঢৌকনের লোভে কাতর ডাক্তারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভেজাল ডাক্তার,প্রেসক্রিপশন লিখে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।ফলে যা হবার হচ্ছে,ইন্টার্নি নির্ভর ক্লিনিকে ক্লিনিকে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে দেশের অলিগলি।ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভেজালে নেতিয়ে পড়েছে ডাক্তারখানা।ভেজালে-ভেজালে জড়িয়ে পড়ছেন কোন,কোন ডাক্তার।কোভিড অতিমারির সময় ক্লিনিকে বা ডাক্তার খানায় ভয় দেখিয়ে পেট কাটা উৎসব বন্ধ থাকলেও আবারও শুরু হতে দেরি হয়নি।!শুধু তা ই নয়,ভেজালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে-ইঞ্জিনিয়ারে ভেজাল।মিস্ত্রি তে ভেজাল,ঠিকাদারের ভেজাল।চাকরিতে ভেজাল,দাম্পত্যে ভেজাল,দলিলে ভেজাল,টাকায় ভেজাল।সনদে ভেজাল।সম্পর্কে ভেজাল।প্রেমে ভেজাল।ওয়াজে ভেজাল।বক্তব্যে ভেজাল।ভেজাল চ্যাটিং এবং ফোনেও।আরও আছে-নানান সংবাদ এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে।অর্থাৎ ভেজাল সারা অঙ্গতে।তাই ভেজালকে ঘিরে মাথাব্যথার কমতি নেই।বিষের আতঙ্কে ঘুমহীন মানুষ।ভেজাল নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলো নানা তৎপরতা নিয়ে ওৎ পেতে থাকলেও মানুষরুপী ভেজালের মানুষকে রোধ করা যাচ্ছে না।আইনে ফাইনে কিছুতেই।এইতো কিছুদিন পূর্বেও বাজারে প্রচলিত ৪২ টি পণ্য পরীক্ষা করে আসলো জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি।তাদের পরীক্ষার মাধ্যমে ভয়ানক যে চিত্রটি জনসমক্ষে প্রচার হলো তা রীতিমতো আতংকজনক এবং ভয়াবহ।কিছুমাত্র মানুষের খাবার বা পশুর খাবার ছাড়া বাকি সব খাবারে মাত্রাতিরিক্ত ভেজালের ছড়াছড়ি।মানুষ মিষ্টিকে বেশি ভালোবাসে বলে বিষয়টি আমলে নিয়ে তারা দেখতে পান-মিষ্টিজাতীয় খাবারেই নাকি ভেজালের পরিমাণ শতভাগ।বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষার মাধ্যমে দেখতে পান-এসকল খাবারের মধ্যে মধু,রসগোল্লা,চমচম,ছানার মিষ্টি ও আচারে ভেজালের পরিমান সর্বাধিক। কেননা এ খাবারগুলোতে মাপ অ মাপে বেজায় মেশানো হচ্ছে -ক্যাডমিয়াম,আর্সেনিক,
শিসা,পারদ,নিকেল,অ্যালোমেনিয়াম,লিথিয়াম এর মতো বিষাক্ত উপাদান।এছাড়া এসব উৎপাদনের সময় বাছবিচার ছাড়াই দূষিত পানি,মাটি ও পোকা দমনে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যে আরও বিষাক্ত করে দেওয়া হচ্ছে খাবারে ভেজাল।পরীক্ষাগারে তারা প্রমান পেয়েছেন-“ভেজালের পরিমান ঘি তে ৯৩ শতাংশ,
সেমাইতে ৮৩ শতাংশ।সয়াবিন তেল এ ৭৮ শতাংশ, সরিষার তেল এ ৫৬ শতাংশ।বিস্কুটে ১০ শতাংশ। পামওয়েলে ৩২ শতাংশ। লবনে ৩৬ শতাংশ।ধনে গুঁড়ায় ৫৩ শতাংশ।খেজুরের গুড়ে ২৫ শতাংশ।মুগডালে ৯শতাংশ।সুজিতে ২৭ শতাংশ।ব্যাসনে ৫২ শতাংশ। চাটনিতে ৮৩ শতাংশ। কেক ৭০ শতাংশ। নারিকেল তেলে ২৫ শতাংশ। মিষ্টিতে ৯৮ শতাংশ। আখের গুড়ে ৫৭ শতাংশ। চালে ৫ শতাংশ।ময়দায় ৯ শতাংশ। আচারে ৮৮ শতাংশ। জুস ৫২ শতাংশ ভেজাল দ্রব্য মেশানো হয়েছে।”পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে,এসব ভেজাল গ্রহণকারীদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে-ক্যান্সার,কিডনিরোগ,
ডায়াবেটিস ও নানা জাতীয় চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে-ডায়বেটিস,ক্যান্সার,আথ্রাইটিস,হাঁটুব্যথা,মাজা ব্যথা,ঘাড়ব্যথা,হাড়ব্যথা,ব্যাকপেইন,ব্লাডক্যানসার,বোনক্যান্সার,কোলনক্যান্সার,ব্রেস্ট ক্যান্সার,চেস্টক্যান্সার।ব্লাডপ্রেসার,স্ট্রোক,এ্যাংজাইটি,ভাস্কুলার ডিজিজ,হার্ট এ্যাটাক থেকে শুরু নানা জানা-অজানা রোগব্যাধি। রোগে কাতর হয়ে যাচ্ছে নাগরিক জীবন।বাস্তুভিটা খুইয়ে চড়া দামে চিকিৎসার ভার মিটিয়েও মারা যাচ্ছে মানুষ। অকেজো হয়ে যাচ্ছে-সমাজ,রাষ্ট্র।ফলে যা ক্ষতি হওয়ার হচ্ছে-যেমন;কপার সালফেট বা তুঁতের পানি মিশ্রিত সবজিতে লিভারের ক্ষতি করে।ভেজাল মসলায় ক্ষতি করে পাকস্থলী। ইউরিয়া মেশানো মুড়িতে কিডনি।সুপারির বাহারি ভেজাল তবকে ব্যবহৃত অ্যালোমিনিয়াম এর ব্যবহারে আলঝেইমার।লেডক্রোমেট মেশানো হলুদের গুঁড়ো ব্যবহারে ক্যান্সার।মেটালিক ইয়েলো রঙ মেশানো খাবারে হচ্ছে চোখের সর্বনাশ।খাবারে ব্যবহৃত কীটনাশকে হচ্ছে-এ্যালার্জি,
চোখের ত্বকের ক্ষতি।এছাড়া বেশি মাত্রায় ঘটে যাচ্ছে-পেটনামা,বমির ভাব,চুলকানি রক্তাল্পতা,গর্ভপাত,
বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মদান বা শিশুর এ্যানকেফেলাইটিসে আক্রান্ত হওয়া,বন্ধাত্ব।ফরমালিনযুক্ত খাবারে শরীরের নানান অংশে ক্যান্সার,খাদ্য হজমে অসুবিধা, পাকস্থলির ক্ষতি,যকৃতের অ্যানজাইম নষ্ট।কিডনির কোষ ধ্বংস, পাথর,গ্যাস্টিক আলসার বৃদ্ধি,নারীদের ঋতুচক্রে সমস্যা।সিনথেটিক ও রাক্স ব্যবহৃত আপেলে-পেটের নানা রোগ সহ বদহজম।পানীয়ের মধ্যে বিষাক্ত কার্বোক্সি মিথাইল সেলুলোজের ফলে পেটের পীড়া,শ্বাসকষ্ট,বদহজম,ডায়রিয়া,আলসার।অন্যদিকে ধীরগতির রাসায়নিকদ্রব্যে-মানুষের লিভার,কিডনি,হার্ট এমন কি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও লোপ পাচ্ছে দিন কে দিন।চিকিৎসকরা বলছেন-কৃত্রিম উপায়ে তৈরি দুধে পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও কিডনি,লিভারের ও ক্ষতি হয়।ভেজাল শেম্পু ব্যবহারে মাথার চুল পড়া থেকে শুরু করে মাথার ত্বকে ক্যানসার হয়।সাথে বোনাস হিসেবে খুশকি ও চর্মরোগ।নকল,ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী ব্যবহারে-ত্বকের স্বাভাবিক লাবণ্য বিনষ্ট হয়।এছাড়া ত্বকে ক্যান্সার ও ত্বক ভেদ করে রক্তের মাধ্যমে কিডনিতে গিয়ে সৃষ্টি করতে পারে নানা প্রতিক্রিয়া।সমীক্ষায় দেখা যায়-যেখানে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ডায়বেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো মাত্র ১০ লক্ষ,এখন তা ছাড়িয়ে গেছে কোটির উপরে।হৃদরোগীর সংখ্যা যেখানে ছিলো ২০ থেকে ২২ শতাংশ, সেখানে তা পৌঁছে গেছে ১০ থেকে ১৫ লক্ষে।ক্যান্সার ও কিডনিরোগীর সংখ্যাতো বেড়েই চলেছে দিনকে দিন।
এতোসব ভেজালকে আমরা কি বলবো জানি না।তবে ইংলিশে ক্রাইম আর বাংলাভাষায় কঠিন একটি ভাষা প্রয়োগে অপারগ থাকায় আপাত অপরাধই বলতে পারি।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা স্মরণে আনতে চাই-তারা বলছেন-“খাদ্য নিরাপত্তার চারটি পিলার বা স্তম্ভ আছে-যথা সহজলভ্যতা (availability)প্রবেশাধিকার
(access)উপযোগিতা (Utilization)ও স্থিতিশীলতা
(Stability)বাংলাদেশে শুধু নয়,সারা বিশ্বে নিরাপদ খাদ্য ভোক্তার অধিকার হিসেবে রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।”
কাজেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্মরণে নিয়ে আমরা আইন বিষয়ক বয়ানে চোখ বুলিয়ে নেবার ইচ্ছা প্রকাশ করছিঃদেশের সংবিধানের ১৮(১)অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে-“জনগনের পুষ্টির স্থর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি রাষ্ট্রের প্রাথমিক কর্তব্য বলে গন্য হবে।ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে প্রায় ১৬ টি আইন তৈরি করা হয়েছে। এবং এ আইনের প্রয়োগে বিএসটিআই,ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন,জেলা প্রশাসন,মেট্রোপলিটন পুলিশ,ওষুধ প্রশাসন, আনবিক শক্তি কমিশন,বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এর মতো নানা সংস্থা কে কাজে লাগানো হচ্ছে। বাংলাদেশে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকেই ভেজালের জন্য আইন বলবৎ ছিলো।১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের তৈরি আইনের ২৫(গ)এর ১(ঙ)ধারায় বলা হয়েছে-” খাদ্যে ভেজাল,ওষুধে ভেজাল মেশালে বা ভেজাল খাদ্য বা ওষুধ বিক্রি করলে বা বিক্রির জন্য প্রদর্শন করলে অপরাধী ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা ১৪ বছর কারাদণ্ডে দন্ডনীয় হবেন।”কিন্তু তারপরও লোকবল,মনোবল প্রতিষ্ঠা না পাওয়ায় ভেজাল যখন উচ্চ মাত্রায় বাজারে প্রতিক্রিয়াশীল হতে চললো তখন দিশেহারা জনগনের জন্য সরকার ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন তৈরি করেন।এবং নিরাপদ খাদ্যের জন্য ভেজাল রোধ সংক্রান্ত সকল আইন ও অধ্যাদেশ পর্যালোচনা করে ‘দ্য পিওর ফুড অর্ডিন্যান্স ১৫৫৯’ রহিত করে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩(২০১৩ সালের ৪৩ নং আইন)এর ৯০ টি ধারা,১৩ টি অধ্যায়,৩৩ টি খাদ্য ভেজাল ও খাদ্য সংক্রান্ত বিষয়ক সংজ্ঞা এবং নিরাপদ খাদ্য বিধিমালা ২০১৪ প্রণয়ন করা হয়েছে।…ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এ ভেজাল শব্দটিকে সজ্ঞায় রূপান্তর করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এ বলা হয়েছে-‘ভেজাল অর্থ পিওর ফুড অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯ এর ধারা ৩(১)এ সজ্ঞায়িত Adulteration এবং Spacial power act ১৯৭৪ এর ধারা ২৫ সি বা অন্য কোন আইনে উল্লিখিত Adulteration বা ভেজাল।’ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ভোক্তাকেও চিহ্নিত করে দিয়েছে। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত আইনটিতে বলা হয়েছে-ভোক্তা অর্থ এমন কোনো ব্যক্তি যিনি (ক)পূণঃ বিক্রয় ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ব্যতীত (অ)মূল্য পরিশোধের বা মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে কোনো পণ্য ক্রয় করেণ:(খ)যিনি ক্রেতার সম্মতিতে (ক) এ উল্লেখিত কৃতপণ্য ব্যবহার করেন।ব্যবসায়ীদের যে সব কাজ ভোক্তা অধিকার বিরোধী কাজ হিসেবে গণ্য হবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন। “ভোক্তাকে চিহ্নিত করে ভোক্তার অধিকার বিরোধী কাজকেও চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে-আইনের প্রতি ক্ষমাশীল প্রস্তাবে সংক্ষিপ্তাকারে আলোকপাত করছি।ভোক্তা অধিকারে স্পষ্টতই উল্লেখ আছে “(ক)কোনো আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোনো পণ্য, ওষুধ বা সেবা বিক্রি করা বা করতে প্রস্তাব করা।(খ) জ্ঞাতসারে ভেজাল মিশ্রুত পণ্য বা ওষুধ বিক্রি করা বা প্রস্তাব করা।(গ)মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকারক কোনো দ্রব্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর কোনো দ্রব্য, কোনো খাদ্য পন্যের সাথে যার মিশ্রণ কোনো আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হয়েছে উক্তরূপ দ্রব্য মিশ্রিত কোনো পণ্য বিক্রি করা বা প্রস্তাব করা।…”
নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ অনুযায়ি ভোক্তাদের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের জন্য যে সব বিধি আরোপ করা হয়েছে তাও আইনের প্রতি ক্ষমা প্রার্থনায় সংক্ষিপ্ত রূপে প্রকাশ করছি। “(ক)খাদ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর যে কোনো বিষাক্তদ্রব্যের ব্যবহার না করা।(খ) খাদ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আইনে নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত তেজস্ক্রিয় বা ভারি ধাতু ব্যবহার না করা।(গ) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভেজাল খাদ্য বা খাদ্য উপকরণ,উৎপাদন,আমদানি, বিপনন,ইত্যাদি না করা।(ঘ) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিম্নমানের খাদ্য উৎপাদন না করা।(ঙ)খাদ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত সংযোজন দ্রব্য বা প্রক্রিয়া করণ সহায়ক দ্রব্যের ব্যবহার বা বালাইনাশকের ব্যবহার না করা।(ট)মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিবেচিত প্রক্রিয়ার খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন না করা।(ঠ)রোগাক্রান্ত বা পচা মৎস্য, মাংস,দুগ্ধ বিক্রি না করা।(ড)হোটেল রেস্তোরাঁ বা ভোজনস্থলে নির্ধারিত মানদণ্ডের ব্যত্যয়ে পরিবেশন সেবা প্রদান না করা।(ঢ)ছোঁয়াচে ব্যধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি দিয়ে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত,পরিবেশন বা বিক্রি না করা।(ণ)প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নকল খাদ্য উৎপাদন বা বিক্রি না করা…(য)খাদ্যদ্রব্য বিপনন বা বিক্রির উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপনে অসত্য বা বিভ্রান্তিকর তথ্য না দেয়া।
ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ আইনে ২০০৯ এ যে সব কার্যকলাপকে অপরাধ গণ্য করা হয়েছে তা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ক্ষমা প্রার্থনায় সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করতে চাই।” (ক)আইন ও বিধিদ্বারা নির্ধারিত হওয়া স্বত্বেও পণ্যে মোড়ক ব্যবহার না করা…(গ)সেবার মূল্যের তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা:ধার্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য,ওষুধ বা সেবা বিক্রি করা…(ঙ)খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্য মিশ্রণ করা…(জ)ওজনে কারচুপি করা (ঝ) বাটখারা বা ওজন পরিমাপকযন্ত্রে প্রকৃত ওজন অপেক্ষা অতিরিক্ত ওজন প্রদর্শন করা।(ঞ)পরিমাপে কারচুপি করা…(ড)মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো পন্য বা ওষুধ বিক্রি করা।”
(Jagnews24.com)
নিরাপদ খাদ্য বিরোধি কার্য ও অপরাধীর শাস্তির বিধানাবলীতে বলা হয়েছে-“বিষাক্ত দ্রব্যের ব্যবহার (ধারা২৩):মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অথবা বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী রাসায়নিক দ্রব্য বা এর উপাদান বা বস্তু (যেমন-ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিন,সোডিয়াম সাইক্লামেট),বালাইনাশক(যেমন-ডিডিটি,পিসিবি,তৈল),
খাদ্যের রঞ্জক বা সুগন্ধি বা অন্য কোন বিষাক্ত সংযোজন বা প্রক্রিয়া সহায়ক দ্রব্য মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণে ব্যবহার বা অন্তর্ভুক্ত করা অথবা উক্তরূপ দ্রব্য মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ মজুদ, বিপনন বা বিক্রয় করা।”যদি হয়-তবে-“অনূর্ধ্ব দশ লক্ষ টাকা কিন্তু অন্যূন পাচ লক্ষ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ড প্রদান করা হবে।আবার পূর্ণ অপরাধের দন্ড ও কঠোর-“পাচ বছর কারাদন্ড বা বিশ লক্ষ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ড। “নিম্নমানের খাদ্য উৎপাদন,ইত্যাদি (ধারা২৩):মানুষের আহার্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত মান অপেক্ষা নিম্নমানের কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ বিক্রয় অথবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে উৎপাদন, আমদানি,প্রক্রিয়াকরণ,মজুদ বা সরবরাহ করা।” যদি কেউ করেন তবে তার জন্য শাস্তি হচ্ছে-“অনূর্ধ্ব তিন বছর কিন্তু অন্যূন এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ছয় লক্ষ টাকা কিন্তু অন্যূন তিন লক্ষ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ড। “কিন্তু পুনর্বার সংঘটিত হলে -” তিন বছর কারাদণ্ড বা বার লক্ষ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ড।”তার কপালে বিদ্যমান।বালাইনাশক,অনুজীব ইত্যাদির ব্যবহার (ধারা৩০):”নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত পরিমাণ বালাইনাশক ও পশু বা মৎস্য-রোগের ঔষধের অবশিষ্টাংশ,হরমোন,এন্টিবায়োটিক বা বৃদ্ধি প্রবর্ধক ও দ্রাবকের অবশিষ্টাংশ, ঔষধ-পত্রের সক্রিয় পদার্থ অনুজীব বা পরজীবী কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণে ব্যবহার বা অন্তর্ভুক্ত করা অথবা উক্তরূপ দ্রব্য মিশ্রিত কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ মজুদ,সরবরাহ বা বিক্রয় করা।” এতে দন্ড হিসেবে বলা হয়েছে-“অনূর্ধ্ব তিন বছর কিন্তু অন্যূন একবছর কারাদণ্ড বা অনধিক ছয় লক্ষ টাকা কিন্তু অন্যূন তিন লক্ষ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয়দন্ড।”কিন্তু পূনর্বার সংগঠিত হলে “তিন বছর কারাদণ্ড বা বার লক্ষ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ড।” তার কপালে বিদ্যমান।বালাইনাশক,অণুজীব ইত্যাদির ব্যবহার(ধারা৩০):”নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত পরিমাণ বালাইনাশক ও পশু বা মৎস্য-রোগ পর ঔষধের অবশিষ্টাংশ,ঔষধ-পত্রের সক্রিয় পদার্থ অনুজীব বা পরজীবি কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরনে ব্যবহার বা অন্তর্ভুক্ত করা অথবা উক্তরূপ দ্রব্য মিশ্রিত কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ মজুদ,সরবরাহ বা বিক্রয় করা”এ তে দন্ড হিসেবে বলা হয়েছে “অনূর্ধ্ব তিন বছর কিন্তু অন্যূন এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ছয় লক্ষ টাকা কিন্তু অন্যূন তিন লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয়”। কিন্তু দ্বিতীয়বারের অপরাধে বলা হয়েছে-” তিন বছরের কারাদণ্ড বা বার লক্ষ টাকা বা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ড। “ক্ষতিকর প্রক্রিয়ায় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন,বিক্রয় ইত্যাদি (ধারা:৩৩)” নির্ধারিত স্বাস্থ্যসন্মত পরিবেশ সংরক্ষণ বা প্রক্রিয়া অনুস্মরণের মানদণ্ড ও শর্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এ রূপ কোন প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ উৎপাদন,আমদানি প্রক্রিয়াকরণ বা বিক্রয় করা”।যদি এরকম করা হয় তবে তারজন্য শাস্তির বিধান হচ্ছে-“অনূর্ধ্ব তিন বছর কিন্তু অন্যূন এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ছয় লক্ষ টাকা কিন্তু অন্যূন তিন লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড।”এর বিধান রয়েছে।পচা খাদ্য
(ধারা৩৪):রোগাক্রান্ত বা পচা মৎস্য বা মৎস্যপণ্য অথবা রোগাক্রান্ত বা মৃত পশু-পাখির মাংস,দুগ্ধ ডিম দ্বারা কোন খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ প্রস্তুত,সংরক্ষণ বা বিক্রয় করা।”এতে আইনে বলা হয়েছে-“অন্যূন তিন লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড।”দ্বিতীয়বার এমন জাতীয় কার্য সম্পাদিত হলে বার লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড “।এর বিধান রাখা হয়েছে।
(নিরাপদ খাদ্য আইন২০১৩)বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার থাকলেও সে ব্যবস্থাটি এখন নিরাপত্তার বলয় থেকে যোজন-যোজন থেকে দূরে। মানুষ এখন খাবারের বেলায় নিরাপত্তাহীন।দিশেহারা জনগণ।উপমহাদেশে মানুষ কে আইনের গন্ডিতে আনতে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ আইন স্বাধীনতার পর পর্যন্ত বলবৎ থাকলেও মানুষ মানছে না কোন আইন!কোন ফাইন!
আমরা কোন না কোন সভ্য সমাজে বাস করি।কোন না কোন ধর্মীয় সংস্কার মানি,কিন্তু সমাজের কল্যাণের সাথে মানুষের কল্যাণ জড়িত এটুকু মানি না।মাঝে মধ্যে চোখ বুঝে ভাবতে চাই-আমরা সামাজিক কি না?কেন না সামাজিক হলে সমাজ চিন্তাই সর্বাগ্রে চেতনায় ঘোরপাক খেতো।ধর্মীয় বলয়ে থাকলে সাড়ে তিন হাত গর্ত বা চিতার আগুনের শিখাটাই চোখে ভেসে উঠতো।তা না হয়ে ভেজাল পিপাসু মানুষের মানবিকতাবোধে ক্রমশঃ জাগ্রিত হয়ে উঠতে শুরু করেছে স্বার্থচিন্তা।আর স্বার্থচিন্তাটাই মানুষকে তার নিজস্ব বলয় থেকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।মানুষের জীবনে জঙ্গল থেকে মঙ্গলের দিকে মুক্তি হলেও কেনো জানি অন্তত:কিছু কিছু অপরাধী মনুষ্য শ্রেণি জঙ্গলের বাসিন্দা অবোধ পশুদের তকমা নিয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিচ্ছে।তাইতো তারা বুক ফুলিয়ে বলতে পারে-“দেশের আইনে যে ফাইন আছে-তা ভেজাল মেশানো রোজগারের সামান্য অংশমাত্র।এই সামান্য টাকা আলাদা করে ই আমরা আমাদের কাজ চালাই।আর জেল?তা ও ভয় পাই না! জেল জরিমানা তো পুরুষের জন্যই!আজ ঢুকবো,কাল বেরুবো,ব্যবসা ছাড়লে খাবো কী!”তাহলে কী প্রতিকারটি রাষ্ট্রকে নতুন করে ভাবতে হবে।?তৈরি করে নিতে হবে,এমন কোন আইন যা দিয়ে এদের আস্ফালন এক নিমিশেই বন্ধ করে দেওয়া যায়।এই তো আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাই-সে দেশে ভেজাল মেশানোর শাস্তি যাবজ্জীবন।চীনে মৃত্যুদন্ড।যুক্তরাষ্ট্রে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। তবে একটি কথা না বললেই নয়,আমাদের দেশেও এরূপ আইন আছে,১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দেই বলবৎকৃত আইনে মৃত্যুদন্ড ছিলো।তা হয়তো লোকবল,মনোবল বা সময়বল বা কোন কারণে জাগ্রিত হচ্ছে না।যদি হতো তা হলে ভেজালযুক্ত কতিপয় কোন মানুষ,কোন প্রতিষ্ঠান বা সমাজটাকে দেখানো যেতো এমনতর শাস্তি তাদের পাওনা ছিলো!যে শাস্তি দম্ভকেও শাসন করে।তারপরও আমাদের নাগরিক জীবনে সচেতনতাকে তুমুলভাবে আমলে নিয়ে রাষ্ট্রের কাজ রাষ্ট্রের উপর ছেড়ে দিতে হবে।আমাদের সচেনতা পুঁজি করে আপাতত:ভাবতে হবে,এই অপার ভেজালের বাজার থেকে খাবার কিনে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কতোদূর?কেমন?বিষ থেকে বেঁচে যাওয়ার উপায়গুলো তবে কী?তাই উক্ত লেখার বাকি অংশে ভেজাল চিনে বেঁচে থাকার উপায়গুলো সংক্ষিপ্তাকারে জেনে আসতে চাই।আলোচনাটি মাছকে ঘিরেই শুরু করা যাক।আমরা জানি আমিষের ঘাটতি পুরনে মাছের বিকল্প নেই।কাজেই মাছে ভেজাল আছে,ব্যাপারটি মাথায় রেখে উল্লেখিত ধাপগুলো নজরে নিলেই চলে। প্রথমত:মাছের শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে শক্ত লাগবে।দ্বিতীয়ত:মাছের আঁশ ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ধূসর বর্ণ ধারণ করবে।তৃতীয়ত:মাছের শরীর থেকে পিচ্ছিল ভাব চলে যাবে।চতুর্থত:ফ্যারোমেন না দেওয়া পর্যন্ত মাছের ধারে কাছেও মাছির নাগাল মিলবে না।পঞ্চমত:মাছের শরীরে হালকা করে হাতের আঙ্গুল চালিয়ে দেখে নিতে হবে খসখসে কি না।ষষ্ঠত:মাছের ফুলকোতে খুঁচাে মেরে দেখতে হবে দূর্গন্ধ আছে কি না।সপ্তমত:ফুলকোতে খুঁচো মেরে হাত ডলে দেখতে হবে সিঁদুর মাখানো আছে কি না।যদি উপরোক্ত কয়েকটি লক্ষণকে আমলে নিয়ে মাছ কিনতে পারা যায় তবে ফরমালিন মুক্ত মাছ কেনার সম্ভাবনাই বেশি।
ফল কিনতে গেলে;প্রথম কাজ হচ্ছে- অসময়ে বাজারে আসা ফলকে বয়কট করা।দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে-কিনতে যাওয়া ফলটি নাকে ধরে প্রকৃতিক সুবাস আছে কি না পরীক্ষা করা।তৃতীয়-ফলের বোটার অংশে ঝাঁঝালো গন্ধ আছে কি না। চতুর্থত-ফলের বোটা বার বার ব্লেড দিয়ে কেটে দেওয়া হচ্ছে কি না।পঞ্চমত-ফলের গায়ে কস লাগানো আছে কি না।ষষ্ঠত-মনে রাখতে হবে-ভেজাল মিশ্রিত আপেল ফলে মাছি বসবে না।কাটার পর খন্ডিত অংশ লাল হবে না।আঙ্গুর ফলে মৌমাছি বা মাছি বসবে না।সকাল থেকে বিকেল বা বিকেল থেকে রাত অবধি রাখলেও পচন ধরবে না।লিচু ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ আবার পাকা অবস্থায় ইট রঙ।কিন্তু ক্যামিকেলের মিশ্রণ থাকলে দেখাবে ইট রঙ নয়,ম্যাজেন্ডা রঙ।এছাড়া ক্যামিকেল মিশ্রিত লিচু স্বাদযুক্ত থাকবে না। দাঁতে কাঁমড় দিলে ঠস করে রস পড়বে না।এমন কি এই ম্যাজেন্ডা রঙ এর লিচু নাকে ধরনের ঝাঁঝালো গন্ধে নাকের কষ্ট বাড়বে।আম-পেপে বা টমেটোতে ভেজাল চেনার নমুনা হচ্ছে;প্রথমত-
একসাথে সারা অংশ পাকবে না।
ফলের চেহারা ঔজ্জ্বল্য দেখাবে।দ্বিতীয়ত-ফলে কসের কোন দাগ থাকবে না।তৃতীয়ত-ফলের স্বাদ পানসা,টক বা তেঁতো হয়ে যাবে।চতুর্থত-ফলে কোন সুগন্ধ থাকবে না বা নাকে ধরলে ঝাঁঝালো গন্ধ থাকবে।আনারসের ধর্ম ও আমের মতোই-একসাথে সারা অংশ পেকে হলুদ হবে না।আনারস সারা অংশে না পেকে সবুজ হলুদে পাকবে।যদি দেখা যায়,ফলটি পাকার সময় হলুদ রঙে পেকেছে,বুঝে নিতে হবে এ আনারস খাওয়ার উপযুক্ত নয়,বিষযুক্ত।পাকা আনারসের গায়ে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে বেশি দেবে যাবে না।ওজনে ভারী আনরসই পাকা,পাতলাটি ক্যামিকেল পাকা।পচা আনারসের পাতা খুব সহজেই ছিঁড়ে যাবে।,ভালো আনারসের পাতা সহজেই ছিঁড়া যাবে না।পাকা আনারসের নিচের অংশ হলদেটে থাকবে আর পাতা থাকবে সবুজ,সতেজ।সবজিতে যদি ভেজালের মিশ্রণ থাকে তবে কেনা সবজি বর্ণহীন পরিষ্কার পানিতে ডুবানোর পর যদি দেখা যায় পানির রঙ তুঁতের মতো বর্ণ ধারণ করেছে। তখন বুঝে নিতে হবে সবজির মধ্যে কপারসালফেট মেশানো আছে।অতএব এ সবজি দূষিত।রোজার দিনে মুসলমান সম্প্রদায়ের অনন্য খাবার হচ্ছে মুড়ি।যদি দেখা যায়,
মুড়ি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ফোলা।ঝকঝকে সাদা।এমন কি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো-মুড়িতে কোন ছিদ্র আছে কি না পরীক্ষা করা।যদি এমন দেখা যায় তবে এ মুড়ি খাওয়ার উপযুক্ত নয়।দেখে শুনে অন্তত রোজার মাসে লাল,ময়লাযুক্ত মুড়িকেই গ্রহণ করা উত্তম। চানাচুর বা জিলাপি কড়কড়ে বা মচমচে বেশি কি না পরীক্ষা করলেই চেনা যাবে ওয়ার্কশপ থেকে অল্পদামে কিনে নেওয়া গাড়িতে ব্যবহৃত পোড়া মবিল কি না।যদি দীর্ঘক্ষণ মচমচে থাকে বুঝে নিতে হবে- মবিল খাচ্ছেন।সন্দেহযুক্ত এককাপ সরিষার তেল-২ থেকে ৩ ঘন্টার মতো সময় বের করে রেফ্রিজারেটরে রেখে দিন।বের করার পর যদি দেখা যায়- তেলের উপরে কোন সাদা রঙ ভাসছে বা হাতের তালুতে ঘষে কিছুক্ষণ পর অন্যরকম গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে,তবে বুঝতে হবে এ তেল কোনরূপ খাবার বা ব্যবহার উপযোগি নয়,ভেজাল।অলিভওয়েল ফ্রীজঠান্ডায় প্রায় ২৪ ঘন্টার পরও যদি হিমশীতল না হয় এই তেল খাঁটি নয়।নারিকেল তেল কেও স্বচ্ছ কাছের পাত্রে রেখে আধাঘন্টার মতো ফ্রীজ করে নিলে যদি তেলের ভেতর সাদা স্তর পাওয়া যায় তবে এ তেল খাঁটি নয়,ভেজালে ঠাসা।ঢাকাস্থ সায়েন্স ল্যাবরেটরীতে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন এমন কর্মকর্তা জনাব,সুধীর অধিকারী জানাচ্ছেন -“এক ব্যারেল সয়াবিন তেলের মধ্যে ২৫০ গ্রামের এককৌটা অ্যালাইল আইসো-থায়োসায়ান
ইডের মিশ্রণ করলে ওই তেলের গন্ধ ও ঝাঁঝ খাঁটি সরিষার তেলের সমান হয়ে যায়।পরে টেক্সটাইলের রং মিশ্রণ ঘটিয়ে হুবহু সরিষা তেলের মতো করা হয়।সরিষা তেলের মধ্যে নারকেল তেল মেশালে ক্ষতিকর তেল হয়ে ওঠে।পামতেলের সয়াবিন তেল দিলে কিংবা খনিজ তেল মেশালে মানবদেহে তার ফল হয় মাটাত্মক।সয়াবিন তেল ভেজাল কি না চেনার উপায় হলো-“তাতে থাকবে ঝাঁঝের গন্ধ,তেল চিটচিটে আটাভাব। হবে অথবা তা লাইট ইয়েলো কালার হবে না।”
(কালেরকন্ঠ ৬ জুলাই ২০১৪,অনলাইন প্রিন্ট)।
রোজার দিনে হোটেল-রেস্তোরাঁ-
ফুটপাতে যে মুখরোচক খাবার তৈরি হয়,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক জানাচ্ছেন -“এই তেল দিনের পর দিন উচ্চমাত্রায় থেকে পারঅক্সাইড ও ট্রান্সফ্যাটে রুপান্তরিত হয়।” কাজেই ভেজাল মনে করে থেকে সরে আসলে ভালো হয়।ভেজাল গুড় সাদাটে ও তিতা থাকে।বেশ শক্ত থাকে বলে ভাঙতেও কষ্ট হয়।ঘি বা মাখন পরীক্ষা করতে হলে একচামচ ঘি গলিয়ে স্বচ্ছ কাঁচের বোতলে রেখে একই পরিমাণ মিউরিঅ্যাটিক এ্যাসিড ও অল্প চিনি মিশিয়ে স্বচ্ছ কাঁচের বোতলটি ঝাঁকালেই বোঝা যাবে ঘি বা মাখনেও ভেজাল।কেন না ঝাঁকানোর পর কিছুক্ষণ রেখে দিলে নিচে লাল রঙের আস্তরণ পড়ে যাবে।এছাড়া আরেকটি সহজ পদ্ধতি হলো-গরম ঘি গলে যাবার পর কাঁচের পাত্রে ঢেলে কিছুক্ষণ ফ্রীজ ঠান্ডায় রেখে দিলে যদি দখা যায় আলাদা দুইটি স্তর ভেসে উঠছে,তবে নিজেই বোঝে নেবেন এটি খাঁটি বিজ্ঞাপনের ভেজাল ঘি বা মাখন।দুধ আসল না ভেজাল পরীক্ষার সময়, আসল দুধ ঢালু অথচ মসৃণ পৃষ্টের উপর ফেলে দিলেই হলো।যদি দেখা যায় ফেলে দেওয়া দুধ আটকে গিয়ে আস্তে-আস্তে গড়িয়ে যাচ্ছে,তখন বুঝে নিতে হবে এটি আসল।আর ফোঁটা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে গড়িয়ে গেলে দুধে ভেজাল।আরও সহজ করে বললে-এক ফোঁটা দুধ নিয়ে উল্লম্ব মসৃণ তলে ফেললে যদি সাদা দাগসহ নামে তবে ধরে নেওয়া যায় দুধ খাঁটি আর না হলে ভেজাল।দুধে যদি সিনথেটিক উপাদান থাকে তবে দুধ গরম করলেই ধারণ করবে হলুদ রঙের চামড়ার মতো বস্তু। তখন এ দুধে মুখ লাগানো যাবে না বলেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন।দদি বা দইয়ে যদি ঘন স্বর উপরে পড়ে থাকে, তবে টিস্যুপেপার আছে মনে করে স্বরটি ফেলে দিয়ে খাওয়া যায়।যদিও বুঝে যাওয়া সহজেই সম্ভব নয়।ভেজাল মিষ্টি হলে দেখতে হবে,
প্রথমত-ভেজাল মিষ্টির স্থায়িত্ব কম।খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হবে।দ্বিতীয়ত-আসল মিষ্টির ছামায় গন্ধ পাওয়া গেলেও ভেজাল মিষ্টির ছানাতে গন্ধ হবে অন্যরকম।তৃতীয়ত-আসল ছানার মিষ্টি পাতলা ও ভেজাল মিষ্টির ছানা ওজনে ভারী হবে।যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে আসল ভেজাল চেনা হলো।কেনার সিদ্ধান্ত যার যার।তবে একটি কথা,কেনার আগে পরীক্ষা করে নিন সহজেই।(ক) মিষ্টিতে একটু আয়োডিন ছড়িয়ে দিন যদি দেখা যায় মিষ্টির রঙ কালো হয়ো গেছে,খাবেন না।(খ)দুই আঙ্গুলে মিষ্টিকে হালকা করে ডলে দিন,যদি মসৃন না হয়ে দানা-দানা হয়, খাবেন না।(গ)মিষ্টির রঙ নিয়ে সন্দেহ হলেই-সাদা টিস্যু পেপারে কিছুক্ষণ মুড়িয়ে রাখুন,যদি টিস্যু পেপার অন্য রঙ ধারণ করে,খাবেন না।(ঘ)১০০০গ্রাম ওজনে অন্তত ৬৫ থেকে কম মিষ্টি কম কিনতে না চাইলে ওজনে ভেজাল মনে করে বক্স ছাড়া মিষ্টি নিন।কারণ বক্সের ওজন বাড়িয়ে ভেজাল সৃষ্টি করা হয়েছে।(ঙ)তারপরও মিষ্টি খেতে চাইলে পকেটে রশিদ রেখে খান।এতে সরকার যেমন টেক্স পাবে তেমনি অদেখা অজানা স্থানে প্রস্তুতকৃত কাঁচা মিষ্টিতে কিছু হয়ে গেলে আদালত প্রমাণ চাইতে পারে!(চ)বাচ্চার বার্থডের বাহারি কেকের রঙ পরীক্ষা করে বাচ্চাকে খাওয়ান।টিস্যু পেপারে মুড়িয়ে রঙ পরীক্ষা করে নিন।বনষ্পতির ক্রিম খাওয়াবেন কি না ভেবে দেখুন।খাঁটি মধু তরল হলেও কিন্তু আগুনে জ্বলে। মধুতে দেশলাই কাঠি চুবিয়ে দেশলাইয়ে টোকা দিন।কাঠি জ্বলে উঠলে আসল নতুবা ভেজাল।আবার পানিতে ঢেলে যদি দেখা যায় মধু পানির তলানিতে চলে গেছে তবে বুঝে নিন তা ও কিছুটা আসল কেন না ঝঁকুনিতে পানির সাথে মিশে যাচ্ছে না।তবু মধু নিয়ে একটু গভীরে যাওয়া যায়-তাপ দিলে খাঁটি মধু ক্যারামেলের মতো হয়ে যাবে।ভেজাল মধু ফেটে যাবে এবং বুদবুদ উঠবে।
এবার মসলাপাতিতে নজর নেওয়া যাক-এক টুকরো তুলা পানি বা ভেজিটেবল ওয়েলে ভিজিয়ে কাঁচামরিচের ওপর ঘষে যদি দেখা যায় রঙ মিশে যাচ্ছে,তবে বুঝে নেবেন- কাঁচামরিচে ম্যালাকাইট আছে।অর্থাৎ ভেজাল।মরিচের গুঁড়োয় ভেজাল আছে কি না দেখে নিতে একটি কাঁচের স্বচ্ছ পানিতে সামান্য মরিচের গুঁড়ো দেওয়ার পর যদি দেখা যায় কোন রঙ পানির তলানিতে চলে যাচ্ছে,তবে বুঝে নেবেন-এতে ভেজাল আছে।খাঁটি হলুদ গুঁড়ো গ্লাসের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার প্রাক্ষালিন হালকা হলুদ রঙ ছড়ায়। আর ভেজাল হলুদ গুঁড়ো গ্লাসের পানিতে তলিয়ে যেতে-যেতে গাঢ় হলুদ রঙ ছড়ায়।এক গ্লাস পানিতে টুকরো হলুদ রঙ ছড়াবে না।কিন্তু ভেজাল হলুদের টুকরো অনেক বেশি উজ্জল দেখাবে ও পানিতে দেওয়ার সাথে সাথে রঙ ছড়াবে।অথবা টুকরো হলুদে ঠান্ডা পানি ঢেলে যদি দেখা যায়,রঙ ছড়িয়েছে-তবে ভেজাল,নতুবা নয়।আবার কাঁচা হলুদ কাগজের উপর রেখে ঠান্ডা পানি ঢেলে দিন।যদি সবুজ রঙ ছড়িয়ে যায় তবে ভেজাল।নতুবা আসল বলে মেনে নিতে হবে।এক গ্লাস পানিতে সামান্য গোল মরিচ ঢালার পর যদি দেখা যায়-গোল মরিচ পানির ঠিক নিচের দিকে চলে গেছে,তবে সেটি আসল।ভেজাল গোল মরিচ বা মরিচে মেশানো পেপের বীজ হলে পানির উপরেই ভাসমান থাকবে।আর গোল মরিচে রঙ আছে কি না দেখে নিতে হলে-পানিতে সামান্য ছিটিয়ে দিলে দেখা যাবে,কৃত্রিম রঙ তাৎক্ষণিকভাবে গলে-গলে পানির নিশে চলে যাবে।সরিষা বীজে আরগেমেন বীজ মেশানো আছে কি না পরীক্ষা করতে-কাঁচের প্লেটে সামান্য পরিমাণ সরিষা বীজ নিয়ে ভালোভাবে লক্ষ করলেই পরীক্ষা হয়ে যায় আসল না ভেজাল।কেননা, আরগেমেন বীজ হয় দানাদার রুক্ষ-পৃষ্ঠ ও কালোরঙের।তাই বাছাইয়ে এ বীজ আলাদা হয়ে সরিষাই দেখা যাবে।এমন কি গুঁড়ো করলে ভেতরের সাদা অংশ বেরিয়ে ধরা পড়ে যাবে আসল,না ভেজাল।জিরার বেলায় তিনটি জিরা মুখে নিতে হবে।এবার চিবোলে বোঝা যাবে ঝাঁঝালো গন্ধ।যদি থাকে এই জিরা আসল,নতুবা ভেজাল।অন্য পরীক্ষা আরও সহজ-একটি কাঁচের প্লেটে সামান্য জিরা নিয়ে নাড়াচাড়া করলেই ধরে নেওয়া যায় জিরা আসল না কি ভেজাল।ধনে বা ধনিয়া গুঁড়ো চিনতে হলে এক গ্লাস পানিতে এক চামচ ধনে গুঁড়ো মেশালেই পরিষ্কার হয়ে ওঠবে ভাজাল না কি খাঁটি। যদি ধনে গুঁড়ো পানিতে ভাসে তবে ভেজাল আর ডুবে গেলে খাঁটি। দারুচিনির একটি অংশ ভেঙে দিয়ে রঙ লাগলে ভেজাল নতুবা খাঁটি বুঝে নেবেন।চিনিকে চিনতে হলে এক গ্লাস পানিতে চিনি ফেলার পর যদি সরাসরি চিনি তলানিতে চলে যায় তবে খাঁটি আর ভাসলেই ভেজাল।ব্লটিং পেপারের উপর চা পাতা ছিটিয়ে দিলে পেপার হলুদ,কমলা বা লাল হয়ে গেলে এই চা য়ে কৃত্রিম রঙ মেশানো।যদি ভেসে ওঠে তবে করাতি বা পেপের শুকনো পাতার গুঁড়ো মেশানো।অর্থাৎ চা পাডায় ভেজাল।কফির বেলায় এক গ্লাস পানিতে সামান্য কফির গুঁড়ো ছিটিয়ে দিলে উপরে ভেসে থাকতে- থাকতে যদি পানির নিচে গিয়ে সারি সারি রঙিন হয়ে ওঠে,তবে কফিতে ভেজাল।আইসক্রিমের উপর কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ফেললেই বোঝা যায় ভেজাল না আসল। যদি আইসক্রিম টি ফুলে ওঠে তবে ওয়াশিং পাউডার আছে নতুবা খাঁটি।
এবার পণ্য সামগ্রী নিয়ে একটু আলোকপাত করা যাক।প্রথমেই আসি মোবাইল প্রসঙ্গে। একজন গ্রাহক ২০ টি সিম নিবন্ধন নিতে পারেন। হয়তো তাই বিদেশের কোম্পানি আমাদের নামকরা অপারেটরের পড়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে শোরুম থেকে ইদানিং ফুটপাতে ও নেমে গেছে।নানান এ্যাজেন্ট,ভূয়া এ্যাজেন্ট দিয়ে বিক্রি করে যাচ্ছে সিম। তা করাক তাতে আপত্তি নেই। অপরাধ হলেই শুধু আপত্তি। আমরা জানি,নিবন্ধনের সময় বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র বা NIDNID কপি দেখিয়ে আঙুলের ছাপ দিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে হয় সিম। কিন্তু মাঝে মধ্যে খেয়াল করেছেন কি-বার বার আঙুলের ছাপ দিচ্ছেন, কিন্তু অপারেটর বলছে-হচ্ছে না,হচ্ছে না।আবার দিন।আবার,আবার।আর আপনি দিচ্ছেন ফুটপাতেই দাঁড়িয়ে। ঘটনা হচ্ছে প্রথমটিতেই আপনার নিবন্ধন হয়ে গেছে বাকিগুলো নানা অপরাধীর কাছে চড়া দামে বিক্রির জন্য নিজের অলক্ষ্যেই দিয়ে দিলেন!এতে ক্ষতি যেটি হবে তা হচ্ছে-আপনার টিপসইয়ের সিম এ কোথাপ অপরাধ ঘটে গেলে আপনাকেই যেতে হচ্ছে জেলে।কেননা, সিমগুলো হচ্ছে না হচ্ছেনা আবার আবার এর টিপসইতেই দিয়ে এসেছিলেন।কাজেই আপনার সিম নিবন্ধন কি না পরীক্ষা করুন এভাবে-মোবাইলের কল অপশনে গিয়ে*16001# লিখে ডায়াল করুন। এবার NID এর শেষ ৪ ডিজিট দিন। দেখে নিন কোম্পানির সিম। ভালো হয়;খুব প্রয়োজনীয় সিম রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেওয়া।এবং মাঝে মাঝে পরীক্ষা করা। যদি দেখা যায় আপনার সিম বন্ধ, কাজ করছে না। কিন্তু এই নম্বরে কল দিলে কোথাও রিং হচ্ছে তবে সতর্ক না হলে বিপদ অনিবার্য। কারণ সিমটি হয়তো ক্লোণ হয়ে গেছে।ব্যবহৃত হচ্ছে হয়তো কোন অপরাধে।কাজেই এমন সিম ত্যাগ করে নিন।
(সূত্রঃপত্র পত্রিকা ও অনলাইন)
মোবাইল কেনার ব্যাপারে বলতে হয়-নিজের টাকায় মোবাইল কিনবেন,নতুন মোবাইল কিনুন। কমদামে সেকেন্ড হেন্ড মোবাইল কিনতে যাবেন না।অন্যের ব্যবহৃত মোবাইল সেট না কেনাটাই নিরাপদ। দেখা গেছে ছিনতাই করা,চুরি বা হারিয়ে যাওয়া মোবাইল চলে যায় নকল চক্রের হাতে। তারা IMEI নম্বর চেঞ্জ করে হরদম বিক্রি করে দিচ্ছে আপনার কাছে।আর এ জাতীয় সেট কিনে অযথাই ফেঁসে যাচ্ছেন। ভাঙ্গারীর দোকান থেকে বা লোভ দেখিয়ে সস্তায় সার্কিট কিনে আবার আপনার কাছেই চলে আসছে সাদাকালো বা রঙ্গিন বিভিন্ন উন্নত ব্র্যান্ডের টিভিসেট।মনে রাখবেন নকল বা ভেজাল মাল ছোট ছোট ব্র্যান্ড ছাড়া দোকানেই বিক্রি হয়।অতএব এ জাতীয় সেট কিনতে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের শো-রুম থেকেই কিনুন।পারফিউম পরীক্ষার বেশ কয়েকটি নিয়মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-(১) শিশিটি বগলে, ঊরুসন্ধিতে নিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন। এবার বের করে যদি দেখা যায় ঘোলাটে দেখাচ্ছে,বুঝতে হবে ভেজাল।(২)কোন স্বচ্ছ আয়না বা গ্লাসে স্প্রে করার পর যদি দেখা যায় তাৎক্ষণিক শুকিয়ে গেছে তবে আসল নতুবা ভেজাল। (৩)শিশির ঢাকনা টি কী খুব টাইট?যদি হা হয় তবে আসল নতুবা ভেজাল। (৪)পারফিউমের শিশির মুখ খসখসে, শিচিতে অপূর্ণতা,ঢাকনা খুললে যদি পারফিউম বেরিয়ে যায় তবে ভেজাল। (৫)আসল পারফিউমের ঢাকনাটি নাকে নিলে ঝাঁঝালো গন্ধ থাকবে না। শিশি খুললেই স্প্রে নব এ গন্ধ থাকবে। নকল বা ভেজাল শিশির ঢাকনায় স্প্রে করতে হয়।গন্ধ টাও নিতে হয় ঝাঁঝালো। এ ক্ষেত্রে দোকানদারের দেখানোতে আগ্রহ ও থাকে বেশি। (৬)প্রাকৃতিক সিনথেটিক উপাদানে পারফিউম আসলে দুটোই লাগে। নকলে শুধু সিনথেটিক ই ব্যবহৃত হয় বাকি টি নয়।(৭)ভেজাল বা নকল পারফিউমের গন্ধ বাতাসে মিলিয়ে যায়।আসল পারফিউম জামা থেকে ক্ষণে ক্ষণে গন্ধ বিলায়।(৮)ভেজাল বা নকল পারফিউম বা স্প্রে ঘামের সাথে মিশে বাজে গন্ধ বিলায়। (৯) আসল পারফিউম ত্বকের জন্য খুব কম ক্ষতিকর। ভেজাল টি মারাত্মক ক্ষতিকর।
আসল আলোচনা মনে করে এবার আসা যাক আরও আসলে। আর সেটি হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের আলোচনায়। আমরা জানি, বছরে ২৫ হাজার প্রজাতির ওষুধ তৈরি হয় বাংলাদেশে।এর মধ্যে সরকারের সামর্থ্য আছে মাত্র ৪ হাজার ওষুধ পরীক্ষা করা। ফলে নির্ধারিত তালিকার বাইরে ওষুধ চেনা বা পরীক্ষা করা মুশকিল। তবুও কৌশল খাটিয়ে জেনে নেওয়া যায়, কোন ওষুধ ভেজাল আর কোনটা ভেজাল মুক্ত।চলুন,জেনে নেওয়া যাক।(১)ওষুধের মোড়কের সিল যদি সন্দেহ লাগে তবে এই কোম্পানির সিলযুক্ত আরেকটি মোড়কের ওষুধ নিন।এবং দুটো সিল মিলিয়ে দেখুন ঠিক আছে কি না। (২) ওষুধের রঙ বা আকারে সম্দেহ হলে ফার্মেসিকেই এড়িয়ে চলুন। (৩)ওষুধের কোথাও ক্রিস্টালের মতো হলে, ভেতরে কোথায় কোথায় ফোলা বা দাগ আছে দেখে নিন। (৪)ওষুধের দামের ওঠানামা পর্যবেক্ষণে রাখুন।কম-বেশি এমন হলে কোম্পানির ইনভয়েস চেক করুন। (৫)কমিশনে ওষুধ বিক্রি, ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান এ জাতীয় সাইনবোর্ড সংশ্লিষ্ট ওষুধের দোকান ত্যাগ করুন। (৬)ওষুধের মেয়াদ দেখে। সিলযুক্ত কি না দেখে। প্যাডে ওষুধের দাম দেখে। কোম্পানির স্পষ্ট নাম দেখে। ওষুধের দোকান থেকে সিলযুক্ত ম্যামো নিয়ে বাসায় ফিরুন।কেননা,যদি ভেজালের বাজারে আপনার ওষুধটিও ভেজাল হয়,তবে বাঁচারতো একটা রাস্তা থাকবে।আইনের জন্যতো একটা প্রমাণ থাকলোই।(৭)(৭)ওষুধ কিনে ফেরার আগে দোকানের নির্ধারিত ম্যামোতে বিক্রেতার সিল দস্তগতসহ ম্যামে নিয়ে বাসায় ফিরুন।কেননা, যদি ভেজালের বাজারে আপনার ওষুধটিও ভেজাল হয়,তবে বাঁচারতো একটা রাস্তা থাকবে।এছাড়া আইনের প্রমানপত্র বা ওষুধ বিক্রির টেক্সও পেলো সরকার।(৮)কোন দোকান যদি ভ্যাট কর্তনের পরেও আপনাকে সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত ভ্যাটের নীল কাগজের চালান দিতে অপারগ হয় তবে ভোক্তা অধিকার প্রয়োগ করুন।নতুবা আপনার কাছ থেকে আদায়কৃত ভ্যাট কোনদিনও সরকারের কোষাগারে জমা হবে না।(৯)প্রেসকিপশনে উল্লেখিত ওষুধের সাথে মিলিয়ে ওষুধ কিনুন এবং স্বল্প শিক্ষিত ফার্মেসির কর্মচারীর কাছ থেকে ওষুধ ক্রয় থেকে দূরে থাকুন।একটি বিষয় জানা জরুরি। ব্র্যান্ডের পণ্যে প্যাকিং কোড,সিরিয়্যাল বা মডেল নম্বর, ট্রেডমার্ক,মেইড বাই নয় মেইড ইন লেখা থাকে ভেজালের পণ্যে কিন্তু তা ও থাকে না।আবার নকল বা ভেজাল পণ্য বিক্রি করবে তারা বেশি কথা বললে খেয়াল করলে দেখবেন আপনিও তার সাথে কথায় পাল্লা ধরলে সে ক্ষেপে যায়।একসময় কথায় হেরে যেতে যেতে হঠাৎ অভদ্র আচরণ শুরু করবে।এ সময় আপনার কাজ হচ্ছে সরে আসা।আমরা জানি,অথবা জানি না পৃথিবীর উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও ণেজাল পণ্য যাচাইয়ের জন্য হলোগ্রাম, স্টিকার,স্ক্যানার এবং আরএফআই ট্যাগ,বারকোড ইত্যাদি আছে কিন্তু এর ব্যবহার জানা নেই বলে আমরা অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি।তাই ব্যাপারগুলো জানা ও জরুরি।
প্রিয় পাঠক এতো এতো তথ্য, উপাত্ত, প্রচার,বিশ্লেষণ বা জানানোর পরও যদি কোন গ্রাহক ভেজাল পণ্য কিনে নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দেশের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনেন তবে বোঝে নিতে হবে তিনি সচেতন নন।তিনি ঘোরের মধ্যেই আছেন।আছেন লোভের শিকলে বন্ধী।তার এই সামান্য লোভের জন্য গজিয়ে উঠছে এ-তো এ-তো অবৈধ ক্লিনিক। সামান্য উপঢৌকনের জন্য লোভে কাতর ডাক্তারের অবৈধ কোন ওষুধের প্রসকিপশন,
পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা অবৈধ টেস্ট বাণিজ্যের অ অপরীক্ষিত ল্যাব।বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়তো ভেজাল মিশ্রিত শাক-সবজি ফুটপাতে,বুটপাতে
গজানো ভ্যান গাড়ির মেলা।তার জন্য পিসিইউ,
সিসিইউ,আইসিইউ,রোগব্যাধি বা প্রশ্রয়ি বাণিজ্য। কাজেই আমাদের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ হচ্ছে জলদি করে সচেতন হয়ে যাওয়া।এ থেকে বাঁচতে হলে সোজা হয়ে যেতে হয়।আর যারা ভেজাল বা নকলের কারবার করেন তাদের মনে রাখতে হবে-মানুষকে একবার,দুবার, তিনবার,কতোবার ঠকানো যায়?মানুষ একদিন সচেতন হয়ে ওঠবেই।হাতের মুঠোফোনে কোন একদিন আপডেট হয়ে এমন কোন এ্যাপস চলে আসবে যা দিয়ে বাজার ঘরে বয়ে নেবার আগেই ছবি তুলে স্ক্যান করেই ধরে নেবে এতে ভেজাল বা নকল।এতে বিষ।এতে মরণব্যাধি অসুখ।তখন কোনদিন আর ভেজাল নামক বস্তু বয়ে আনবে না কোন ঘরে।আঙুল তুলে বলে দিতে পারে-তোমার পণ্যে ভেজাল।আর তুমি ভেজাল মানুষ! হয়তো সে দিন আর বেশি দূরে নয়।