
শাহাদত বখ্ত শাহেদ:
:কবি তার কবিতায় প্রিয়জনকে এক ইলেকট্রনের সঙ্গে তুলনা করেছেন
“একটি ইলেকট্রনের মত তুমি –
সবসময় কাছেই আছো, তবুও অধরা।”
ইলেকট্রন যেমন ঘিরে থাকে পরমাণুর কেন্দ্রকে, তেমনি প্রিয়জন সর্বদা কাছেই থাকে, কিন্তু ধরা দেয় না। এই তুলনা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের প্রতীক ব্যবহার করে অধরা ভালোবাসার বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা তৈরি করেছে।
হাইজেনবার্গের “অনিশ্চয়তার সূত্র” ব্যবহার কবিতায় এনে দিয়েছে দার্শনিক গভীরতা ভালোবাসার অবস্থানও যেমন অনিশ্চিত, তার গতি ও উপস্থিতি নির্ণয় করা যায় না।
মৌমাছি এখানে বার্তাবাহক, কিন্তু সে উত্তর দেয় না — যেন প্রকৃতি নিজেই নীরব সাক্ষী হয়ে থাকে মানুষের আকাঙ্ক্ষার।
লালচে পাতার স্তূপ সময়ের পরিবর্তনের চিহ্ন, শরতের প্রতীক — যা ভালোবাসার মৃত্যুর দৃশ্য নির্মাণ করে।
কার্বন পরমাণু দিয়ে কবি নিজের বাঁধন বা সম্পর্কের জটিলতা বুঝিয়েছেন-
“আমি একটি কার্বন পরমাণুর মতো জীবনের সবন্ধনে জড়িয়ে–”
এখানে জীবনকে রাসায়নিক বন্ধনের মতো দেখানো হয়েছে, যা কবির বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির রোমান্টিক রূপান্তর।
কবিতার ভাষা সংযত, বোধগম্য, অথচ গভীরভাবে দার্শনিক।
এখানে বিজ্ঞান, প্রেম, নিঃসঙ্গতা ও ব্যর্থতার আবহ একসাথে মিশেছে।
“গুণ করি, ভাগ করি”-এ বাক্যরীতি দৈনন্দিন গণিতের ভাষাকে অনুভবের মেটাফর বানিয়েছে।
শেষের পংক্তিটি একেবারে কবিতার হৃদয়-
“ভালোবাসা কখনোই
একটি পূর্ণ সংখ্যা নয়।”
এখানে ভালোবাসা অসম্পূর্ণ, বিভাজ্য, অনির্ণেয়-এক অপূর্ণতার সৌন্দর্য।
ইলেকট্রন, হাইজেনবার্গ, কার্বন-সবই মানবিক অনুভবের প্রতীকে রূপ নিয়েছে।
প্রেমকে সরল আবেগে নয়, যুক্তি ও অনিশ্চয়তার মিশ্র অনুভূতিতে প্রকাশ করা হয়েছে।
কবি নিজের অবস্থান নির্ণয় করতে গিয়ে ভালোবাসার শূন্যতায় দাঁড়িয়ে আছেন – যা মানুষের অস্তিত্ব-অন্বেষণের প্রতিচ্ছবি।
কবিতায় মৌমাছি, লালচে পাতা, শূন্য- সবই দৃশ্যমান অথচ প্রতীকি।
“শূন্যের পাশে দাঁড়িয়ে” হলো এমন এক কবিতা যেখানে পদার্থবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান, যুক্তি ও অনুভব, শূন্য ও পূর্ণতার দ্বন্দ্ব একত্রে গঠিত হয়েছে।
এটি আধুনিক কবিতার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ-
যেখানে ভালোবাসা আর গাণিতিক সমীকরণে মিশে গেছে মানব অস্তিত্বের অনন্ত প্রশ্নে। জয়তু কবি মজনু মুহিবুর রাহমান।
২০ অক্টোবর ২০২৫
সিলেট।