
শরীফ হাসানাত :
জানো, কতকিছু…
যেদিন শিউলী তলায় এলে
অমনি হয়ে গেলাম ঝরা ফুল।
অবাক হয়ে গুঁজে রাখো যদি খোঁপায় কিংবা
তুলতুলে কানের দুল—
এই আশায়, এই ভরসায়…
হলো না, কিছুই হলো না,
পায়ে পায়ে পিষে পিষেহেঁটে গেলে
ওই দূর কার যেন পিছু পিছু।
কতকিছু হতে চাইলাম বালিকা,
জানো, কতকিছু…
যেদিন নিঝুম দিঘীর পাড়ে এলে
অমনি হয়ে গেলাম স্বচ্ছ স্বচ্ছ জল।
বিস্মিত হয়ে ধুয়ে নিতে যদি ওই চাঁদমুখ,
লেপ্টে যেতাম ফর্সা গালে—
টাপুরটুপুর ঝরে পেতাম বাদলের সুখ।
হলো না, কিছুই হলো না,
পা ভিজিয়ে চলে গেলে
জলসিঁড়ি ভেঙে ভেঙে উঁচু নিচু।
কতকিছু হতে চাইলাম বালিকা,
জানো, কতকিছু…
যেদিন এলে মেহফিলে নাশিদ সন্ধ্যায়,
অমনি হয়ে গেলাম ইশকের গান।
অভিভূত হয়ে যদি কণ্ঠে তোলো সুরের মূর্চনায়,
সহসা বলে ওঠলে তখন ভাঙা গলায়—
ক্ষমা করুন, আজ বড্ড ঠাণ্ডা জমেছে গলায়।
হলো না, কিছুই হলো না,
তড়িৎ-পায়ে হেঁটে মিলিয়ে গেলে
ল্যাম্পপোস্টের আলোয় কিংবা স্বর্গে,
এদিকে আমায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে হতাশা
অন্ধকার, তিমির লাশকাটা মর্গে।
কতকিছু হতে চাইলাম বালিকা,
জানো কতকিছু…
যেদিন এলে চৌকাঠ পেরিয়ে পাঞ্জেখানার মুসল্লায়
অমনি হয়ে গেলাম নীরব দুআ।
আকুতি করে যদি ফোটে তোমার চোখে
আমাকে পাওয়ার অশ্রুর রেখা,
আহ! চুপিচুপি মিশে যেতাম তাতে—
হয়ত পেতাম জান্নাতি সুকূনের দেখা।
হলো না, কিছুই হলো না,
তুমি ফিরে গেলে নামাজ শেষে,
যেন কিছুই চাওয়ার নেই—এই ভাব করে
ভুলে গেলে, আমিও ছিলাম তোমার ছায়া হয়ে পাশে।
কতকিছু হতে চাইলাম বালিকা,
জানো কতকিছু…
যেদিন বসেছিলে চাঁদের উঠোনে,
অমনি হয়ে গেলাম জোছনার আলো।
করুণা করে যদি ছুঁয়ে নিতে সেই মুখখানি,
মিশে যেতাম নিঃশব্দ ভালোবাসায়—
অন্ধকারেও জ্বালতাম জোনাকির পিদিম।
হলো না, কিছুই হলো না,
চাঁদের মুখে মেঘ এসে ঢেকে দেয়
আমি রয়ে যাই শুধু না বলা বাক্যে,
অনিশ্চিত এক স্বপ্নের ফাঁকে।
কতকিছু হতে চাইলাম বালিকা,
জানো কতকিছু…
যেদিন এলে বর্ষার দুপুরে,
অমনি হয়ে গেলাম গোল গোল কদমফুল।
চমকিত নয়নে যদি গুঁজে নিতে খোপায়
মিশে যেতাম মুহিত ঘ্রাণে ঘ্রাণে
আজীবন রয়ে যেতাম হয়ে কেশফুল।
হলো না, কিছুই হলো না,
ছাতা মেলে চলে গেলে দূরে,
আর আমি থেমে গেলাম
বৃষ্টির টুপটাপ ব্যাথাতুর সুরে।
কতকিছু হতে চাইলাম বালিকা,
জানো কত কিছু…
যেদিন বিকেলের হাওয়া ছুঁয়ে গেল তোমার দোরগোড়ায়,
অমনি হয়ে গেলাম দুষ্টু বাতাস।
রাগ করে যদি জানালাটা একটু খোলো,
ছুঁয়ে নিতাম ওড়নায় লেগে থাকা সুবাস,
নিয়ে যেতাম চোখ বেঁধে অনুপম ভালোবাসার চূড়ায়।
হলো না, কিছুই হলো না,
ধপাস করে জানালা বন্ধ করে দিলে,
আমি ঘুরে মিশে গেলাম শুকনো পাতায়।
কতকিছু হতে চাইলাম বালিকা,
জানো কত কিছু…
যেদিন তোমার কলম ছুঁয়েছিল খাতার পিঠে,
অমনি হয়ে গেলাম একখানা রঙিলা কাগজ।
করুণা করে যদি লিখে দিতে প্রাপকের নাম—শরিফ,
আমরণ রেখে দিতাম বুক পকেটে মিঠা মিঠা এ চিঠি।
হলো না, কিছুই হলো না,
কলম থেমে গেল দুই লাইন বাদেই,
আহ! রয়ে গেলাম অপঠিত, অপ্রেরিত স্বপ্নের মতোই।
কতকিছু হতে চাইলাম বালিকা,
জানো কত কিছু…
কিছুই হলো না তবু,
তুমি রইলে জীবনের ওপাড়,
আমি কেবল ভাষা, রূপ, বৃষ্টি, বাতাস—
তোমার চারপাশে ছড়িয়ে থাকা এক অন্তহীন আকুলতা।