মিশিগান এর গল্প


জুয়েল সাদত : :

( ৩ রা আগস্ট) / রোববার
সকালে শ্যালক রাফির বাসায় ব্রাঞ্জ এর দাওয়াত ছিল৷ আমার প্রিয় সব খাবার। আলহামদুলিল্লাহ, রাফি সব কিছুই গুছিয়ে নিয়েছে, ওয়ারেনে বাসা । নতুনদের জন্য মিশিগান দ্রুত এস্টাবলিশমেন্টের উর্বর ভুমি৷
দুপুরে ফিরলাম, হ্যামটামিকে আরো কয়েকজন আত্মীয় স্বজনদের দেখতে গেলাম, উনারাও নতুন এসেছেন। তবে সবাই দাড়িয়ে গেছেন। এমাজানে বাচ্চারা কাজ করে।
এই ২ দিনে মিশিগানের মিডিয়ার সব সাংবাদিকদের সাথে দেখা হয়ে গেল, মত বিনিময়ও হল৷ সবাই খুবই আন্তরিক।
আমাকে ছায়ার মত আগলে রেখেছেন সুপ্রভাত মিশিগান এর সম্পাদক চিন্ময় আচার্য্য।
বিকেলে সুফিয়ান কুরেশীর বাসায় দাওয়াতে গেলাম ট্রয় শহরে৷ সেখান থেকে তৃতীয় বারের মত IAGD মসজিদে নামাজ পড়লাম
৷ সেখানে সুফিয়ান, বদরুল ও শ্যামল এর সাথে ভাল একটা আড্ডা হল। যতবারই মিশিগান যাই বদরুল ও সুফিয়ানের বাসায় আমাদের তিন পরিবারের আড্ডা হয়ে যায়।
রাত আটটায়, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব মিশিগান এর অনুষ্ঠানে যেতে হল।
আগেই জানতাম লোকজন বেশী হবে। তবে এত বেশী হবে চিন্তাও করিনি।। কয়েক হাজার গাড়ী, লোকজন হবে ১০/১৫ হাজার৷
আমার জীবনে এত লোক একসাথে দেখিি নাই। আর সবাই সিলেটের লোকজন।
প্রিতম ও প্রথিক মঞ্চে –
বেয়াইনসাব / উরা ধুরা/ লোকাল বাস ।
সুফিয়ান বলে এগুলো কি গান।। আমি বললাম এগুলোই ক্রেজ । সে বলে আমি এগুলো জানি না, আমি বললাম, তুমি পেয়াজের খবর রাখ।
পুরো ওয়ারেন শহরটা কাপতে শুরু করল৷ আমি ও সুফিয়ান অনেক কস্টে গাড়ীটা রাখার একটা জায়গা পেলাম৷
টাকা মানি একচেঞ্জ এর আহাদ ভাই ও আমি একসাথে হাটছি, এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যাওয়া যায় না৷ অনেক কষ্টেও চা পাওয়া গেল না৷
১৫ হাজার প্রবাসী, খাবারের দোকানে ভীড়।। মঞ্চের পাশে ছিলাম, জাবেদ চৌধুরী একটা ভিআইপি পাস দিলেন, যাতে মঞ্চের পাশে থাকি৷ ইন্জিনিয়ার আহাদ, সুমন কবির সহ বামের সবাই খুবই আন্তরিক।
ডালাসের রাহি আপা ও এহিয়া ভাই এত মানুষজন দেখে আশ্চর্য্য হয়ে গেছেন। গীতিকার ইশতিয়াক রুপু, আমাকে দেখলেই – এগিয়ে আসেন। অনেক ভালবাসার মানুষ আমি, এটা উপলব্ধি করি৷
বামের ১৬ বছর পুর্তি,র অনুষ্ঠানের ২ দিনের অনুষ্ঠানে ওয়ারেন এর আশে পাশের বলতে গেলে সবাই চলে আসেন। পরিচিত অনেককেই পেয়ে যাই। ৩০ বছর আগের বন্ধুকে পেয়ে যাই ৷
দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানের শুরুতে মুলধারার রাজনৈতিক নেতারা এসেছিলেন, জানালেন জাবেদ চৌধুরী । সুরের মুর্চনায় ওয়ারেন শহরটা কাপছিল আর ৫৪ টি স্টলে ছিল উপচেপড়া ভীড়। ১১ টায় শো শেষ হবে, ভাবতেই খারাপ লাগছিল৷ উপায় নাই, এটাই নিয়ম। মানুষ ঘুমাবেন।
রাত ১১ টায় অনুষ্ঠান শেষ হয়, অন টাইমে। রাফেল ড্র কিনতে রাত ১১ টায় ভীড় চলছিল। এরপর রাত সাড়ে এগারটায় রাফেল ড্র এর লটারী হয়, সেই সময় আহাদ ভাই, জাবেদ ভাই, গিয়াস ভাই এর সাথে আমিও ছিলাম।
বেঙ্গল মটরস এর গিয়াস ভাই রাফেল ড্র এর গাড়ী উপহার দেন। গিয়াস ভাই যখন চাবি দিচ্ছিলেন গাড়ীর বিজয়ীকে তখন আমিও ছিলাম।
টাকার আহাদ ভাই, আমাকে বেঙ্গল মটরস এর গিয়াস ভাই এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমিতো আশ্চর্য হয়ে গেলাম, গিয়াস ভাই নাকি গত ৪/৫ বছরে ৪৫ টি গাড়ী কমিউনিটির নানা অনুষ্ঠানে গিফট দিয়েছেন। গিনেস রেকর্ড হয়ে গেল।
গিয়াস ভাই, একটি গল্প শুনালেন, কেন তিনি গাড়ী উপহার দেন।।
মিসেস গিয়াস এর সাথে পরিচিত হলাম, ভাবীও গিয়াস ভাই এর মত আন্তরিক। বাসায় যাবার দাওয়াত দিলেন৷ পরদিন যেন বাসায় যাই, জোর করলেন। চিটাগং এর মানুষ, অতিথি পরায়ন। রুপচাদার লোভ দেখালেন৷
আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম রাত তখন দেড়টা, পাপড়ী আপা আসলেন, রাত তখন পৌনে ২ টা, তিনি মহাখুশি- ভাল কাপড়ের ব্যবসা হয়েছে। ব্যাগে অনেক টাকা, পাপড়ী মেলার ভুয়শী প্রশংসা করলেন। ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
ইন্জিনিয়ার আহাদ ভাই ও পাপড়ী আপার ম্যারাথন গল্প চলে, আমি আটকা পড়ে যাই। মেলা শেষ। সব কিছু গোছানো হচ্ছে,আমাদের সিংগারা ও কফি খাওয়ালেন একজন ভাই ৷ জাবেদ চৌধুরী’র মুখে তৃপ্তির হাসি৷।
। বাসা থেকে চিন্ময় দা ফোন করেন, তিনি আমাকে নিতে আসবেন। আমার সাথে জুয়েল ভাই, তিনি আমাকে পৌছে দিবেন হ্যামটামিকে বলে জানালাম।
রাত তখন ৩ টা, আমাকে নিয়ে জুয়েল ভাই এর যাত্রা শুরু।
জুয়েল যে বিষয়ে গল্প শুরু করলেন, সেটা নিয়ে আরেকটি গল্প হবে। জুয়েল ল” অফিসে কাজ করেন। ডিভোর্সের নানা কাহিনী শুনালেন, আমার মাথায় ঢুকছিলো না৷ সিলেটি কমিউনিটির এই অংশের সাথে আমি অপরিচিত। বাংলাদেশের মিশিগান এর প্রবাসী পরিবারগুলোতে ডিভোর্স অহরহ ঘটছে।
জুয়েল আমাকে পৌছে দিলেন রাতে ৩.৩০ মিনিটে।।
মিশিগানের সামার মানে উ্যসবের শহর, বিয়ের শহর। উ্যসব – উ্যসব চারিদিকে।
শনি / রোববার ৭/৮ টি পিকনিক, আঞ্চলিক সংগঠন এর পিকনিক। ফ্যাষ্টিভ্যাল ।
জাবেদ চৌ, আহাদ ভাই, পাপড়ী আপা ও গিয়াস ভাই এর নিকট বিদায় নিয়ে ফিরলাম৷
অসাধারণ একটা দিন কাটল। মিশিগানে ৫ দিন কেটে গেল, টেরই পেলাম না৷। অনেকেই আমাকে আরো সময় দিতে চাইছিলেন, আমি সৌভাগ্যেবান৷

শেয়ার করুন