
তাসলিমা খানম বীথি :
নগরীর যান্ত্রিক জীবনে সীমানা পেরিয়ে খোলা মাঠ, এপার থেকে ওপার দেখা যায় না। উপরে নীল আকাশ সাদা মেঘের বৃষ্টির চাঁদোয়া, ঠিক যেনো রূপকথার তেপান্তরের মাঠের মতো বিস্তর। এমনি একটি আষাঢ়ের গৌধুলী বিকেলে দেখা হয় কথা হয় একজন বাগানবিলাসী নারীর সাথে। মনের আনন্দে কাঁচা-সোনা রোদে ঝলমলে দৃশ্য দেখার শেষে নুরজাহান পারভীন চৌধুরীর নিজ হাতে গড়ে ওঠা গাঢ় সবুজ জলপাই বাগানের বুক চিরে চলে গেছে ছায়া ঢাকা নির্জন সবুজ ছাদবাগান। বাগানে কথা বলতেই সেই কিশোরীবেলার ফেলা আসা স্মৃতিকাতর হয়ে বলছিলেন, তার বাবার বাগানের কথা। বাবা সিলেট এমসি কলেজের লাইব্রেরিয়ান মরহুম মৌলভী ইছহাক আলী চৌধুরী বি,এ’র থেকে প্রথম অনুপ্রেরণা পান নুরজাহান পারভীন চৌধুরী। শ্বশুরবাড়ি এসে শ্বাশুড়ি তাহেরা বেগম চৌধুরী কেও বাসার আঙ্গিনায় সবজি বাগান করতে দেখে তিনিও জড়িয়ে পড়েন এ কর্মে। সিলেট নগরীর উপরপাড়া, উত্তর বাগবাড়ি এবং বর্তমানে পূর্ব মিরাবাজার খারপাড়ায় পাঁচ তলার ছাদের মধ্যে তিনদশক তিনি বাগান করে চলেছেন।
সবুজ মানেই সতেজ প্রশান্তির ভরপুর। যান্ত্রিক শহর জীবনে সবুজের প্রশান্তি নিষ্প্রাণ হয়ে উঠছে নাগরিক জীবন। মানবজীবনে একটুকরো সবুজ ছায়া হারাচ্ছে প্রতিদিন প্রতিমুহুর্ত। এখন প্রায়ই শহরের মানুষেরা সবুজকে ধরে রাখছেন আবাসস্থলে। শৌখিন প্রকৃতি সবুজ বৃক্ষপ্রেমিকা নুরজাহান পারভীন চৌধুরী বলেন, প্রত্যেক নারীর নিজের একটি বাগান থাকা উচিত। তাতে শারিরীক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা যায়। বিশেষ করে নিজের হাতে সবজি করে ফরমালিনমুক্ত সবুজ শাকসবজি শরীরের জন্য উপকারী। সবুজকে ধরে রাখার জন্য নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় আপন বাড়ির ছাদে বাগান তৈরি করতে তিনি আহবান জানান।
সময়ের সাথে এ বাগান এখন আর শৌখিনতায় আটকে নেই। পারিবারিক পুষ্টি চাহিদাপূরণ, বিনোদন এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে অবসর সময় কাটানো ভালোবাসার মিলনমেলায় পরিণত হয়ে গেছে ছাদবাগান।
সিলেট নগরীর পূর্ব মিরাবাজার খারপাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক বিশিষ্ট সংগঠক লেখক জাবেদ আহমদ এর সহধর্মিণী সিলেট নগরীর বিখ্যাত দুটি রেস্টুরেন্ট উনদাল কিং কাবাব ও রয়েল শেফ চাইনিজ রেস্টুরেন্টের পার্টনার নুরজাহান পারভীন চৌধুরীর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সমৃদ্ধ ভালোবাসার সবুজের সমারোহে ছাদবাগান যে কাউকে মুগ্ধ করবে। পাঁচতলা বাড়ির ছাদবাগানের জন্য ভবনকে সুরক্ষিত করে আধুনিকভাবে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা রেখেই ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। নুরজাহান পারভীন চৌধুরীর বাগানে রয়েছে, দেশি-বিদেশি ফলের গাছ, ঔষধি গাছ, শাক সবজি, নানান জাতের লেবু (শাষনি লেবু, টনা লেবু, জামি লেবু) সবুজ কচু, ফেন কচু, কৃষ্ণ কচু, পেপে গাছ , পুদিনাপাতা, রুজট পাতা, ক্ষুদিমানকুনি পাতা, আম, ডালিম, আনারস , কামড়াংঙ্গা, মালটা, কলা, কাঁচা মরিচ, নাগা মরিচ, মেহেদী, তুলসি গাছসহ, নানান জাতের ফুলের গাছ।
সবশেষে নুরজাহান পারভীন চৌধুরী বলেন শহরে মানুষের জীবনে বাড়ির উঠান না থাকলেও সবুজ গাছে পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠুক নিজ বাসভবনের ছাদবাগান।