আবুসাঈদ আনসারী :
জুলাইয়ের কতো স্মৃতি আজও বুকে তরতাজা হয়ে আছে।
সোস্যাল মিডিয়ার বদৌলতে সেই দৃশ্যগুলো বার বার চোখের সামনে আজ ভেসে উঠে!
কিছু স্মৃতি মনে পড়লেই বুকটা কেঁপে ওঠে, গলার ভেতর দলা পাকিয়ে আসে কান্না।কোনো দিন লিখে বোঝানো যাবে না সে বেদনাকে।
তিনটি দৃশ্য আজও চোখে লেগে থাকে—
প্রথমটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিবাদ সমাবেশ। সেদিনের মতো শোকাবহ দিনে, কিছু শিক্ষক বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ন্যায় ও সত্যের পক্ষে। সবার সামনে প্রফেসর গোলাম রাব্বানী আবৃত্তি করছিলেন নবারুন ভট্টাচার্যের তীব্র প্রতিবাদী কবিতাটি—
“যে পিতা সন্তানের লাশ সনাক্ত করতে ভয় পায়,
আমি তাকে ঘৃণা করি।
যে ভাই এখনও নির্লজ্জ্ব স্বাভাবিক হয়ে আছে,
আমি তাকে ঘৃণা করি।
যে শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কবি ও কেরানী
প্রকাশ্য পথে এই হত্যার প্রতিশোধ চায় না—
আমি তাকে ঘৃণা করি।”
আবৃত্তির মাঝেই শিক্ষক কেঁদে ফেলেছিলেন। সেই দৃশ্য, সেই কণ্ঠভেদী আবেগ—আজও ভিডিও দেখে নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে ওঠে। কোনো দিন যদি এ শিক্ষকের সামনে আমার দেখা হয় আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরে রাখবো অনেক্ষণ!
দ্বিতীয়টি সম্ভবত ঠাকুরগাঁওয়ের কোনো প্রতিবাদের ভিডিও। একদল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে রাস্তায় বসে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছে। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকেছে। হঠাৎ একটি মেয়ে বজ্রকণ্ঠে স্লোগান তোলে—
— “কে এসেছে, কে এসেছে?”
— সবাই চিৎকার করে উঠে, “পুলিশ এসেছে, পুলিশ এসেছে।”
— মেয়েটি আবার বলে, “কী করছে, কী করছে?”
— দলবদ্ধ কণ্ঠে জবাব আসে, “স্বৈরাচারের পা চাটছে!”
সেই মুহূর্তটা ছিল শিরদাঁড়া সোজা করে দেওয়ার মতো—কতটা সাহস, কতটা দৃঢ়তা!
তৃতীয়টি, আদালত চত্বরে এক যুবককে হাতকড়ায় বাঁধা অবস্থায় পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে। পাশে তার মা। কোনো ভয়ের চিহ্ন নেই তাঁর চোখেমুখে। বরং দু’হাত তুলে ছেলেকে সাহস দিচ্ছেন—
“ভয় পাস না বাবা, বিজয় আমাদের হবেই!” কি যে এক ত্যাগী মা এ জাতি দেখলো! আহারে! কি যে সাহস!
এই তিনটি দৃশ্য আমাকে আজও তাড়িয়ে বেড়ায়।
আহা, জুলাই!
তুমি শুধু এক মাস নও—
তুমি শোক, তুমি প্রতিরোধ, তুমি কান্না আর আশার ছায়াপথ।
তোমার প্রতিটি স্মৃতি যেন বেদনাঘন অতল ফোয়ারা!
দোহাই লাগে, জুলাইর সে ত্যাগী বিপ্লবীদের কথা আপনারা ভুলে যাবেন না, এ বিপ্লবকে নস্যাৎ করবেন না।
জুলাই কিংবা জুলাইর আগে পরে যারা এই বিপ্লবকে সার্থক করেছেন আপনাদেরকে আমরা ভুলবো না।
আপনাদের প্রতি লাল সালাম।
দোসরা জুলাই ২০২৫॥ লন্ডন, বিলেত ॥
সম্পাদকঃ আব্দুল বাতিন ফয়সল
সহ-সম্পাদকঃ আব্দুল মুহিত দিদার
মোবাইলঃ ০১৭৩০১২২০৫১
sylhetexpress.net