স্বজ্জন প্রতিবেশির চিরবিদায়

এঢভোকেট সিরাজুল ইসলাম :
০০৩ সালের কথা। চৌকিদেখি রংধনু ১৪ তে বসবাস করি। সেখানেই আমার সাংসারিক জীবন শুরু।
পাশের ফ্লাটে বসবাস করতেন মোছাউয়ীর চাচা। চাচা বলেই সম্বোধন করতাম। স্বল্পভাষী মানুষ। পরিপাটি। নিট এন্ড ক্লিন।
আমাদের নতুন সংসার। অনেক কিছুই তখন বুঝতাম না। কী প্রয়োজন, কী অপ্রয়োজন সে জ্ঞান চাচার কাছ থেকেই পেয়েছি। আর চাচী তো ঘরের খোঁজখবর নিয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিতেন।
চাচা অসম্ভব নম্র, ভদ্র, জ্ঞানী ও গুনী। পরোপকারী ও সংবেদনশীল। অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন। নিরহংকারী। দ্বীনদার।
তৎসময়ের প্রাইম মিনিষ্টার বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেসসচিব ছিলেন মুশফিকুল ফজল আনসারি। উনি যে তাঁরই ছেলে, একথা ঘুনাক্ষরেও চাচা আমাদের বলেননি। একদিন মুশফিকুল ফজল আনসারি সিলেটের বাসায় এলে হঠাৎই তার সাথে দেখা। ঐদিন তার সাথে ছিলেন খ্যাতিমান গল্পকার সেলিম আউয়াল ভাই। তখনই জানলাম উনি আমাদের চাচার ছেলে।
বাসার কম্পাউন্ডেই ছিল অনেক বড় খালি জায়গা। চাচা সেখানে হাঁটতেন। আমাদের প্রতি তার আন্তরিকতার অভাব ছিলনা। আমাদের ঘরে মুরব্বী কেউ ছিলেন না। তিনিই ছিলেন আমাদের মুরব্বী। আমাদের কাপড় শুকানোর রশিটা পর্যন্ত তাঁর দেয়া, তাঁর টানানো। অনেকদিন মটর সাইকেলটা ভুলে বাইরে রেখে কলাপসিবল লক করে ঘুমিয়ে পড়তাম। তিনিই জাগিয়ে বলতেন, বাবা তোমার বাইকটা বাইরে রইছে। উনাদের কাপড়ের সাথে আমাদের কাপড়গুলোও অনেক সময় যতনে আমাদের ঘরে তুলে দিতেন। একজন মানুষ কতটুকু স্বজ্জন, নিরহংকারী ও আন্তরিক হলে এসব করতে পারেন!!
আমরা তাঁর সকল কাজে প্রীত, তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
আমাদের সেই শ্রদ্ধাভাজন চাচা আলহাজ্ব আব্দুল মোছাউয়ীর আনসারী যিনি মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীর বাবা আজ ৮ মে সকাল ৭ টা ২৫ মিনিটে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন- ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।
মহান আল্লাহ তাঁর এই বান্দাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা করুন। আমীন।

শেয়ার করুন