মিলু কাশেম :
ওলীকুল শিরোমনি হযরত শাহ্ জালাল শাহ্ পরাণ ও
মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যেরর পূণ্যভূমি দু'টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট।সিলেটের অপার প্রকৃতিক সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশ জুড়ে।জাফলং লালাখাল বিছনাকান্দি রাতারগুল পানতুমাই সহ অনেকগুলো আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে সিলেটে।
বর্তমান সময়ে ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরের নাম যোগ
হয়েছে সিলেটের পর্যটন তালিকায়।সাম্প্রতিক সময়ে সাদাপাথর সিলেটের সবচেয়ে আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র।
অনেক আগে থেকেই ভোলাগঞ্জ অপরূপ
সৌন্দর্যের লীলাভূমি। কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে পর্যটকদের চোখের আড়ালে ছিলো ভোলাগঞ্জের মোহনীয় রূপ।
ভোলাগঞ্জের ভৌগলিক অবস্থান সিলেট শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া জৈন্তাপাহাড়ের পাদদেশে।প্রশাসনিক ভাবে ভোলাগঞ্জ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত। পাথর বালুর জন্য এই জনপদের খ্যাতি দীর্ঘ দিনের। এক সময়
নৌপথই ছিলো এই অঞ্চলে যাতায়াতের মুল অবলম্বন। এখন পাল্টে গেছে এই জনপদের চিত্র। পাথর ব্যবসা আর কোম্পানীগঞ্জ আই টি পার্ক প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম কে ঘিরে সিলেটে থেকে ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত চালু হয়েছে বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক।আর এতে করে
খুলে গেছে সম্ভাবনার দ্বার। পর্যটকদের নজর কেড়েছে ভোলাগঞ্জে সৌন্দর্য।
তাই বর্তমানে সিলেটের সবচেয়ে আকর্ষনীয়
পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে ভোলাগঞ্জ সীমান্ত জনপদ সাদা পাথর এলাকা।
প্রতিদিন সারাদেশের হাজার হাজার পর্যটক আসছেন ভোলাগঞ্জে সাদাপাথরেরর সৌন্দর্য অবলোকন করতে।
পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে গত কয়েক বছর থেকে বিআরটিসি র দুতলা বাস সার্ভিস চালু হয়েছে ভোলাগঞ্জ রুটে।প্রতিদিন সকাল থেকে প্রতিঘন্টা পর পর যাওয়া আসা করে এই বাস।পর্যটকদের
আগ্রহ চাপ বেড়ে যাওয়া সাদা পাথর পরিবহন নামে বেসরকারি উদ্যোগে চালু হয়েছে আরেকটি আধুনিক গেটলক সার্ভিস।
সিলেট শহরের আম্বরখানা মজুমদারী সড়ক থেকে বাসগুলো ছেড়ে যায় ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টে বাংলা ভারত সীমান্ত বরাবর ১০ নং ঘাটে।সেখানে নেমে
পর্যটকদের যেতে হয় নৌকায় ধলাই নদী দিয়ে সাদা পাথর এলাকায়।
১০ নং ঘাট থেকে মুল আকর্ষন সাদা পাথরের দুরত্ব ২/৩ কিলোমিটার। কিন্তু
আঁকাবাঁকা পাহাড়ী ধলাই নদীর কারনে নৌপথ ছাড়া সেখানে যাওয়া যায় না।তাই পর্যটকদের ১০ নং ঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকায় অপরূপ পাহাড়ী সৌন্দর্য উপভোগ করে ১৫/২০ মিনিটের নৌভ্রমন শেষ নামতে হয় সাদাপাথর এলাকায়।তার পর কয়েক মিনিট পায়ে হেটে যেতে হয় মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে ধলাই নদীর উৎস মুখ সাদা পাথর মুল কেন্দ্রে।অনিন্দ্য সুন্দর
চমৎকার এই জায়গায় গিয়ে পর্যটকরা বিমোহিত হয়ে পড়েন।ভুলে যান সকল ক্লান্তি।
সাদা পাথর এলাকাটা অনেকটা সত্তর দশকের প্রথম দিকের জাফলং এর মত।বিশাল এলাকা নিয়ে ছোট বড় সাদা পাথরের বিচ।মধ্যখান দিয়ে বয়ে গেছে পান্না সবুজ স্বচ্ছ জলের পাহাড়ী ধলাই নদী।পর্যটকরা সেখানে গিয়ে জলকেলি তে মেতে উঠেন।নারী পুরুষ শিশুরা সবাই নেমে যান নদীর জলে।বর্ষাকাল ছাড়া নদীতে খুব একটা জল থাকে না।স্বচ্ছ জলের কারনে নদীর তলদেশ পর্যন্ত দেখে যায়।সে এক অপরূপ দৃশ্য।
নৌকা ছাড়া সাদা পাথরে যাওয়া যায় না।
তাই ছুটির দিনে পর্যটকদের ভীড়ের কারনে নৌকা সংকট দেখা দেয়।দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় নৌকার জন্য।নৌকা ভাড়া ৮শত টাকা। সেটা উপজেলা
প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত।তাই এ নিয়ে সমস্যা হয় না।পর্যটকদের সুবিধার্থে উপজেলা প্রশাসন সাদা পাথর এলাকায় চালু করেছেন নারী পুরুষের জন্য আলাদা
আধুনিক শৌচাগার ওয়াশরুম।যা সত্যি
প্রশংসনীয়।পাশেই রয়েছে বিজিবি ক্যাম্প।
সাদা পাথর এলাকার ভৌগলিক অবস্থান
প্রকৃতিক শোভা দারুন মোহনীয়।নদী পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য পর্যটকদের নিয়ে যায় অন্য ভূবনে।সাদা পাথরে অনতিদূরেই খাসি পাহাড়।আর পাহাড়ের উপরেই অবস্থান বিশ্বের সবর্ধিক বৃষ্টিপাত অঞ্চল চেরাপুঞ্জির
মৌসিনরামের।সাদা পাথরে গিয়ে চেরাপুঞ্জির হীম শীতল হাওয়ার পরশ মিলে।সবচেয়ে ভালো লাগে সাদা পাথর এলাকায় পরিবেশ অত্যন্ত চমৎকার।
নেই কোন ধরনের দুষন।
তবে ভোলাগঞ্জের পরিবেশ মোটেই স্বস্তি দায়ক নয়।বাজার থেকে ১০ নং ঘাট পর্যন্ত যত্রতত্র গড়ে উঠেছে শতশত স্টোনক্রাশার মেশিন।ধুলো বালি আর শব্দ দুষনে পুরো এলাকা বিপর্যস্ত। নেই কোখাও সবুজের চিহ্ন। ধুলোবালি র আবরনে পল্টে গেছে গাছ গাছালীর রূপ।এ ব্যাপারে পরিবেশ বিভাগের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
ভোলাগঞ্জের পর্যটন সম্ভাবনা প্রচুর। সরকারী বেসরকারি উদ্যাগে পাহাড়ঘেষা জনপদে গড়ে তোলা যেতে পারে হোটেলমোটেল রিসোর্ট।সম্প্রতি সাদাপাথর
রিসোর্ট নামে একটি রিসোর্ট স্থাপিত হয়েছে ভোলাগঞ্জে।রাত যাপনের জন্য আরও আধুনিক
সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন ব্যবস্থা হলে ভোলাগঞ্জ একদিন পরিনত হবে দেশসেরা পর্যটন কেন্দ্রে।
ইতিমধ্যে ভোলাগঞ্জে শুরু হয়েছে স্থল বন্দর নির্মান কাজ।পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দর চালু হলে পাল্টে যাবে এই এলাকার সামগ্রিক চিত্র।
তাই সময় সুযোগ মতো ঘুরে আসতে পারেন ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এলাকা।ভরা বর্ষায় সাদাপাথরের অপরূপ সৌন্দর্যে মন প্রাণ জুড়িয়ে যাবে।
ছবি-মিলু কাশেম
সম্পাদকঃ আব্দুল বাতিন ফয়সল
সহ-সম্পাদকঃ আব্দুল মুহিত দিদার
মোবাইলঃ ০১৭৩০১২২০৫১
sylhetexpress.net