
আনোয়ার শাহজাহান, তেতলী হতে ফিরে:
আলহাজ্ব শাহ আনোয়ার হোসেন চিশতী ও নুরজাহান ফেরদৌস হোসেন এমন এক দম্পতি, যাঁরা তাঁদের জীবন সমাজসেবায় উৎসর্গ করেছেন। জন্মভূমি বাংলাদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং সমাজের কল্যাণে তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টা আজ তাঁদের সমাজের অন্যতম দানশীল ও মানবিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা আলহাজ্ব শাহ আনোয়ার হোসেন চিশতী ও নুরজাহান ফেরদৌস হোসেন এমন এক দম্পতি, যুক্তরাজ্যের ফেলিক্সস্টো (Felixstowe) শহরে বসবাস করলেও, তাঁর হৃদয় সর্বদা বাংলাদেশে অবস্থান করে। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী হলেও তাঁর সম্পদের সীমানা কেবল নিজের পরিবারে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং তা দিয়ে তিনি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর ব্রত নিয়েছেন।
তাঁর সহধর্মিণী নুরজাহান ফেরদৌস হোসেনের শিকড় গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের দত্তরাইল গ্রামে। তিনি ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের প্রাক্তন জনপ্রিয় চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল মতিন চান্দ মিয়ার কন্যা। তাঁর পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই সমাজসেবার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, এবং তিনি এই ঐতিহ্যকে আরও বেগবান করেছেন।
নুরজাহান ফেরদৌস হোসেনের পরিবার বরাবরই সমাজকল্যাণমূলক কাজে সম্পৃক্ত। তাঁর ভাই রুহুল আমিন রুহেল একজন গুণী সাহিত্যিক, সংগঠক ও সমাজসেবক। তিনি গোলাপগঞ্জ হেলপিং হ্যান্ডস ইউকে ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট ইউকে-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তাঁর আরেক ভাই রুহুল কুদ্দুস জুনেদ ঢাকাদক্ষিণ উন্নয়ন সংস্থা ইউকে-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
শাহ আনোয়ার হোসেন চিশতী ও নুরজাহান ফেরদৌস হোসেন কেবল দক্ষিণ সুরমা বা গোলাপগঞ্জের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নন, তাঁদের দানশীলতা ও মানবসেবা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁরা বছরের পর বছর দরিদ্র, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। শুধু দান-খয়রাত করেই তাঁরা দায়িত্ব শেষ করেননি; বরং মানুষকে স্বাবলম্বী করার জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করেছেন। যখনই বাংলাদেশে কোনো দুর্যোগ নেমে এসেছে, তখনই তাঁরা নিরলসভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
শীতের সময় হাজার হাজার শীতার্ত মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। বন্যার সময় বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময়ে অসংখ্য পরিবারের মধ্যে অর্থ ও খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেছেন, যা ছিল নিঃসন্দেহে মানবতার সেবা।
এই দম্পতি বহু দরিদ্র রোগীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেছেন। বিশেষ করে ক্যান্সার, কিডনি রোগ, হৃদরোগ ও জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য তাঁরা অনেক মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের স্বাস্থ্যখাতে যে অবদান রেখে চলেছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
সম্প্রতি, শাহ আনোয়ার হোসেন চিশতী তাঁর নিজ বাড়িতে “শাহ আনোয়ার মাদ্রাসাতুল মদীনা” নামে একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ মাদ্রাসাটি ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে এক অনন্য উদ্যোগ, যেখানে বহু ছাত্র কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করছে। এখানে শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ারও সুব্যবস্থা রয়েছে। প্রায় ৭০-৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মাদ্রাসাটি শুধুমাত্র একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি সমাজের জন্য একটি আশীর্বাদ।
আমি ও আমার বড় ভাই আজ আনোয়ার আলমগীর ব্যক্তিগতভাবে এই মাদ্রাসাটি পরিদর্শন করেছি এবং এর কার্যক্রম দেখে অভিভূত হয়েছি। এখানকার ছাত্রদের নিষ্ঠা, শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং সুন্দর পরিবেশ দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি।
শুধু সমাজসেবায় নয়, শাহ আনোয়ার হোসেন চিশতীর পরিবার রাজনৈতিক অঙ্গনেও সক্রিয়। তাঁর ছোট ভাই আব্দুল মালিক যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে বিএনপিকে সুসংগঠিত করতে কাজ করে আসছেন। তার চাচা তেতলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।
শাহ আনোয়ার হোসেন চিশতী ও নুরজাহান ফেরদৌস হোসেন কেবল অর্থ দিয়েই নয়, বরং সময়, শ্রম ও আন্তরিকতা দিয়ে সমাজসেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁরা অসংখ্য মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনেছেন, অনেক পরিবারকে স্বাবলম্বী করেছেন এবং সমাজের দরিদ্রদের জন্য আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
এমন নিঃস্বার্থ সমাজসেবী মানুষের আজকের সমাজে আরও বেশি প্রয়োজন। আমরা তাঁদের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি এবং প্রার্থনা করি,
আল্লাহ তাঁদের দান কবুল করুন, তাঁদের কৃত কর্মের উত্তম প্রতিদান দিন এবং তাঁদের সমাজসেবামূলক কার্যক্রম আরও বেগবান হোক। আমিন।
আনোয়ার শাহজাহান
সম্পাদক, আমাদের প্রতিদিন।