আকাশহীন জবা

তাসলিমা খানম বীথি :

আপনি সবসময় এত মুড অফ করে রাখেন কেন? মুড অফ নাকি ইগো।

– আমি এমনি।

-অফিসের কাজে ব্যস্ত আকাশ। ডেস্কের উপরে ফাইলে দিকে তাকিয়ে জবার কথা উত্তর দেয়।

-আ”ছা বলুন তো। আকাশ নামটি কে রেখেছেন? জানা যাবে।

-আমার মা। নীল আকাশ আমার মায়ের পছন্দ।

সত্যি তাহলে ত আপনার মায়ের সাথে আমার অনেক মিল। আমারও নীল আকাশ ভিষণ ভালো লাগে। যখন মন খারাপ হয় আমি আকাশের দিকে তাকাই আর তখনই মন ভালো হয়ে যায়। আমার নামও মায়ের দেওয়া। জবা ফুল মার অনেক পছন্দের। ভোরের জবা কুয়াশা জড়ানো প্রকৃতিতে মোহনীয় সৌন্দর্যের অপুর্ব দৃশ্য। মুক্তোর মত শিশির বিন্দু জমে থাকা ফুলের গায়ে সূর্য আলো পড়ার পর এর সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়। ভোরের আলো ফোঁটার সাথে সাথে আমার জন্ম তাই মা জবা রেখেছেন।

২.কয়েক মাস হলো জবার অফিসে আকাশ জয়েন করেছে। প্রথম দিন থেকে জবা লক্ষ্য করছে আকাশ একটু ব্যতিক্রম। অফিসের অন্য কলিগদের মত নয়। চুপচাপ, গুছালো পরিপাটি হলেও মাথার চুল আচঁড়াতে ভুলে যায়। তার কোকরানো চুলে পাখি ডিম দিয়ে বাসা বাদলেও কেউ বুঝতে পারবে না যে, আকাশের চুল গুলো অগুছালো। সে জন্য কাজের ফাঁকে যখন আকাশের সাথে কথা হয়। জবার চোখ চলে যায় তার মাথার দিকে। নিজ হাত দিয়ে চুলগুলো আঁচড়ায়ে দিতে ই”েছ করে খুব। অফিসের কাজ ছাড়া আকাশের সাথে জবার তেমন কথা হয় না। তবে সুযোগ পেলেই জবা গল্প শুরু করে দেয়। ই”েছ করে প্রাণ খোলে কথা বলতে আর ভালোবাসায় আকাশ রঙিন করতে।

৩.দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেছে। কখন খাবেন? আজকে এক সাথে লাঞ্চ করব। টিফিন বক্স নিয়ে জবা আকাশের ডেস্কে চলে আসছে।

-হ্যাঁ আর না ছাড়া আকাশ তেমন কিছু বলে না।

-জবা গাল ফুলিয়ে বলে-আপনি এত ভাব দেখান কেন? হাসতে পারেন না। হাসিখুশি থাকবেন। ঝটপট কথা বলে জবা নিজ ডেস্কে চলে আসে। ই”েছ ছিলো এক সাথে দুপুরের খাবার খাবে। সে আশা গুড়োবালি।

৪. বেশ কয়দিন হলো অফিসে আকাশকে দেখছে না। ফোন নাম্বার থাকলেও কাজের বাইরে তেমন কথা হয়নি। আকাশকে কল দিতেই রিসিভ করে ফেলে।

-কেমন আছেন? অফিসে আসছেন না যে।

-আমার মা অসু¯’, হসপিটালে ভর্তি। তাই ছুটি নিয়েছি।

-আকাশ মন খারাপ করে কল রেখে দেয়।

-জবারও ই”েছ করছে আকাশের মন খারাপে পাশে থাকতে।

-পরের দিন সকাল হতেই হসপিটালে আকাশের মাকে দেখতে জবা চলে আসে। কেবিন নাম্বার আগেই জেনে নিয়েছিল।

হসপিটালে কেবিনে ঢুকেই দেখে বেডে আকাশের মা নিশ্চিন্তে ঘুমা”েছন। পাশে বসে মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দি”েছ আকাশ। মায়ের প্রতি ছেলের ভালোবাসা যতœ জবাকে মুগ্ধ করে। হঠাৎ জবাকে দেখতে পেয়ে আকাশ চমকে ওঠে।

-আপনি! জবা একচিলতে হাসি দিয়ে বলে-আপনার মাকে দেখতে আসলাম। এতে অবাক হবার কিছু নেই। মুখ দেখে মনে হ”েছ সকালের নাস্তা হয়নি। বাসা থেকে নাস্তা নিয়ে আসছি। খেতে পারেন।

– আকাশ আরো অবাক হয়। মনে মনে ভাবে এই মেয়েটি এত মায়াময় কেন?

– কেবিনে আর কাউকে দেখতে পা”িছনা য়ে।

-আকাশ বলে, তার মা ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ নেই। চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বসতে বলে আকাশ জবার জন্য চা নাস্তা আনতে বের হয়। বালিশের পাশেই পেশেন্টের ট্রিটমেন্টশীট ফাইলে নাম দেখে জবার মনপাড়া কালোমেঘ জমতে থাকে।

– কিছুক্ষণ পর আকাশের মায়ের ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ খুলে জবাকে দেখতে পেয়ে বলে-জবা এসেছো মা।

-তোমাকে দেখতে পেয়ে ভিষণ ভালো লাগছে।

-আপনি আমাকে চিনেন না। নামও জানেন।

-আকাশ তোমার কথা বলেছে। হঠাৎ করে অসু¯’ হয়ে পড়ি। অনেক আগে থেকে আমার অপারেশন করার কথা ছিলো। পূজা ছুটি পেয়ে অপারেশন করে ফেললাম। পূজার কেনাকাটা করতে পারিনি আর বাড়িতে যাওয় হল না।

-আকাশের মায়ের মুখে পূজার কথা শুনে জবা বুঝতে পারে আকাশ মুসলিম নয়। আকাশের পুরো নাম জবার জানা ছিলো না। হসপিটালের পেশেন্ট এর ফাইলে লেখা বিনেতা রানী রায় গার্জেন ছেলে অশেষ রায় আকাশ। আকাশ কেবিনে আসার আগেই জবা তার মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

ভালোবাসি বলার আগেই জবার হৃদয়ের আছড়ে পড়ে সাইক্লোনের ঝড়!

শেয়ার করুন