দুশো মাইল দূরের দ্বীপ শহর ভিক্টোরিয়া দেখে আসা

খন্দকার মমতাজ হাসান :

শহরটি কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের রাজধানী। কানাডাতে দু বছর পড়ালেখা করে ছেলে সাজিদ হাসান দু তিন বছর ভ্যাংকুভারে চাকরী করে যায়।পরে চেষ্টা সাধনা করে সে ভ্যাংকুভার হতে সরকারী চাকরী যোগদানে ভিক্টোরিয়া যায়। যদিও দু বছর চাকরী করে সে শহর হতে চলে আসে ভ্যাংকুভারে পুনরায়। আমাকে প্রথম ২০১৮ সনে বোধ করি ঢাকা হতে সাউদার্ণ এয়ার লাইনসে চাপিয়ে মাঝে গউঝিং হয়ে ভ্যাংকুভার এয়ারপোর্ট এনেছিল।তারপর সেখানে স্কাই ট্রেন বাস সমুদ্র পারাবার ফেরী শিপ যাতায়াত করে (১ ঘন্টা ৩৫ মিনিট) ভিক্টোরিয়া এসেছিলাম ঢাকা হতে। তার মা’কে নিয়ে কানাডা দেখাবার ইচ্ছা ছিল।তার মা ঐ সময় যায় নি বরং বলে তার মা বলল “তোমার বাবা কে কানাডা বেড়াতে নিয়ে যাও ।” জীবনে প্লেনে ইতিপূর্বে চড়ি নাই ।প্রথম দফাতেই ২৪ ঘণ্টার বিমান ভ্রমণ ছিল। সাজিদ হাসানের মা তার বাবা কে নিশ্চিত চিকিৎসা সাহায্য পেতে insurance করার জন্য বলে। সেবার চল্লিশ দিন থাকি। আবার সাথে করে সে ঢাকা পর্যন্ত দিয়ে যায়। এবার সাত বছর পর ভিকটোরিয় মহানগরী দর্শন । জায়গাগুলো আবার দেখা হলো।
আগের পরিকল্পনানুযায়ী খুব সাত সকালে জামাকাপড় পড়ে সাথে আই ডি কার্ড (যেটাকে হেলথ কার্ডও বলে) নিয়ে বের হবো। হঠাৎ মনে হলো ক্যাপটি নেয়া হয়নি। তালা খুলে তাই ক্যাপ নিলাম।ছেলের মা পরিমাপে পানি পান করে। তার ছয় বোতল পানি, সাথে আমার দু বোতল পানি টেবিলের উপর রাখা ছিল‌। দেরী দেখে ছেলে তার এপার্টমেন্ট হতে এসে তাগিদ দিতেছিল নীচে গ্যারেজে যাবার জন্য। স্ত্রী ইতোমধ্যে সেখানে বলে গেছে তুমার একটা কাজ পলিথিন ব্যাগের পানির বোতল গুলো সাথে নিয়ে গাড়িতে উঠি যেন।
পাঁচটায় রওয়ানা হবার প্ল্যান, সেখানে বিলম্ব আধ ঘন্টাধিক। নিচে যেয়ে মনে হলো পানির বোতল টেবিলে রয়ে গেছে।
অন্যদিকে সময়ের মধ্যে “তাওয়াসিন ফেরীঘাটের” নির্ধারিত প্যাকেজের সদ্ব্যবহারের সময় আসন্ন আধ ঘন্টা দেরী হয়ে গেছে ৪০ /৫০ কিলোমিটার দূরে জাহাজে রিপোর্ট করতে হবে। তাই ছেলেকে বলছিলাম লিফটে চট করে উপরে যেয়ে পানির বোতলের ব্যাগটা ফেরত নিয়ে আসি। সে সাবধানী তাই বললো – “ সময় নাই বোতলগুলা থাক “। ফলে সেখানেই আমাদের যাত্রা শুরু সাড়ে পাঁচটায়।
পথে civic (মডেল) কারে তীর বেগে নানা রাস্তা পার হলাম।কোথাও কোথাও লেখা দেখলাম। সবুজ সাইন বোর্ডে আমেরিকা ৩৫ মাইল দূরান্তরে। ঘাটের বিশাল চত্বরে গাড়ীকে নির্দেশনা দিলেন রাতজাগা এক কর্মচারী মহিলা ৪ নাম্বার লেন দিয়ে আগাও। পাঁচটি লাইনে বিপুল গাড়ী স্থির হয়ে প্রহর গুনতেছে কখন ফেরি জাহাজে উঠার অনুমতি আসবে। আমি ভাবলাম আর বললাম সামনে দৃশ্যমান শিপে মনে হয় দুইশত গাড়ী নিতে পারবে! ছেলে বললো তিন শত নিতে পারে। যথাযথ সংখ্যা পূরণ হলে কোন গাড়ীকে আর ফেরি শিপে উঠতে দিবেনা।
সাগর নীলাভে শান্ত পানির প্রবাহ। ৭ বছর আগে একদম উপরের ডেকে উঠেছিলাম। এখন শান্ত হয়ে বিলাসবহুল সিটে বসে আছি। জানালা দিয়ে দূরের দ্বীপ ও জলরাশি দেখছিলাম। আমাদের সাথে আনা রান্না করা নুডলস, সব্জী মুরগীর মাংস ও কফি খেলাম। কত দেশের কত শত মানুষ। একটু একটু ইচ্ছা হলেও মনকে দমিয়ে রাখি, তাদের কারো সাথে কথা বলতে গেলাম না। কেবল জাহাজের কাপ্তানের মহিলা টিম সদস্য আমার জিজ্ঞাসার জবাবে বললো ভ্যাংকুভারে সাগর পারাপার পথের এ পাশে যে ঘাট সেটার নাম Tawassen. কোন ভাষার শব্দ লেডি বলেন ‘ Indigenous word .মানে ১০/২০ হাজার বছর আগে যারা কানাডার মাটিতে প্রথম পা রাখছিল তাদের ( First Nations) ভাষার শব্দ‌।
আমরা macdonalds গিয়ে বসলাম, নিকটে bey centre। এক বয়স্ক পৌর পরিষ্কার কর্মচারী জানতে চাইলে বললো সেখানে টোবাকো লিফ পাবে। সময় হলো না আসলেই জর্দা পাওয়া যেত কিনা যাচাই করতে যাই। মিউজিয়ামে বাংলাদেশী এক বরিশাল নাকি রাজশাহীর ফাহিম ছেলেটি বললো ভিক্টোরিয়া ছোট শহর, পান খাওয়ার সাথে যে জর্দা তা এখানে পাবেন না।
আট বছর পরে পুনরায় আকর্ষণীয় কৃত্রিম সমুদ্র আবহাওয়া (পরিবেশ) seal fish, sea lion, duck birds, trees, deer of Eskimo land আবার দেখলাম। শতাব্দীরও আগের জাহাজের কাপ্তান কামরার যন্ত্রপাতি রেলগাড়ী এসব দেখে দেখে সময় পার করলাম, বেলা তখন চারটা।আমাদের মিউজিয়ামের প্রবেশ কোন চার্জ লাগলো না বিশেষ একটা পরিস্থিতিতে। প্রদেশের ৩৫০০০ সরকারী কর্মচারী স্ট্রাইক করছে। যারা টিকেটের টাকা নিবেন তারাও তাদের সাথে যোগ দিছেন ফলে মাগনা (ফ্রি) ঢুকাচ্ছে দর্শনার্থী।আমি একটু পর পর গোঁ ধরলাম আমি আর যাবো না হাটতে পারব না, বসে থাকবো। ছেলেটা তার মা কে হুইল চেয়ারে করে ঘুরাচ্ছিল।জায়গায় জায়গায় গভর্নমেন্ট বেতনভোগীরা ব্যানার পতাকা উড়িয়ে জানান দিচ্ছে বেতন বাড়াবার দাবীতে তারা আন্দোলন করছে। কিছু কিছু কথা বললাম।একটা শাদা কানাডীয় তরুণী গ্র্যাজুয়েট সরকারী দপ্তরে সে ক্লার্ক।যুবা বয়সী সুঠাম দেহের মানুষ ‘নন ইউরোপীয় ‘তিনি জবাব দেন তিনি supporter সরকারী চাকরীজীবি নন। ময়ূরের পার্কে পৌঁছলে ছেলে গাড়ী হতে চেয়ার নিয়ে ময়ূর সন্নিকটে ছায়াতে তাদের মাকে বসালো। আমি ৪০ হাত দূরে অপর একটি বেঞ্চে বসে কাঠ- বিড়ালী ময়ূরের ঘোরাফিরা অবলোকন করছিলাম। পার্লামেন্ট ভবন চত্বরের ঘোড়ার গাড়ীগুলো বিশাল সাইজের ঘোড়া।৮৫ ডলারের বিনিময়ে পনেরো মিনিট করে সর্বোচ্চ ছজন একসাথে চক্কর দেয়া যায়। সাগর সৈকতে গেলাম ৫/৭ মাইল দূরের স্থানটিতে ওখানেও হঠাৎ করে রোদে কারের ভিতরে বসে থেকে পর্যটক বহন কারী “বাকিংহাম প্রাসাদতূল্য হর্সেস কার্ট” দেখলাম। তারা মৎস্য শিকারদের পোতাশ্রয় দেখে পানি বোতল করে নিয়ে ফিরে আসলো গাড়ীতে। পিছন পানে সিটে বসে রাস্তার ওপারে তিন জন কম বয়সী তরুণীর ছায়াতলে বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আহারাদি করছে। একটা সাদা কইতর তাদের খুব কাছে পদতলে/মাঠে বসে তাকিয়ে খাওয়া দেখছিল। একবার দেখলাম কবুতর বা কৈতর তাদের হাতের ডানায় বসে খাচ্ছে।পুণরায় সময় মতই ফেরি শিপ ধরে দেড় ঘন্টা ৬৭ মাইল সাগর পাড়ি ও তারপর পঞ্চাশ মাইল সড়ক অতিক্রম করে নিরাপদে বাসায় প্রত্যাবর্তন করি। আল্লাহর অনেক শোকরগোঁজারি, আলহামদুলিল্লাহ। সবাই ভালো ও নিরাপদ থাকুন, আমীন।
লেখক: বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্মপরিচালক (অব.)

শেয়ার করুন