কেমুসাস : সাহিত্য প্রেমীদের আশ্রয়স্থল


নূরজাহান রাহমান :
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ (সিলেট) সংক্ষেপে (কেমুসাস)
সিলেটের মুসলিম সাহিত্য সংসদ ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ১৯৩৬ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর থেকে আজ অব্দি সাহিত্যের অঙ্গনে নিরলস পথ চলা। প্রায় প্রতিদিনই নানা ধরনের সাহিত্য অনুষ্ঠান হচ্ছে, আবৃত্তি হচ্ছে, গান হচ্ছে, নানান অঞ্চলের নানান কবি নানা ধরনের প্রবন্ধ লিখে যাচ্ছে। এই কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ বৃহত্তর সিলেটবাসীর বিশেষ করে সাহিত্য প্রেমীদের একটি আশ্রয়স্থল।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে এই কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ স্বচক্ষে আমারও দেখার সুযোগ হয়েছে। তার দেয়ালে নানা ধরনের বর্ণাক্ষর আমার হৃদয় কেড়েছে। বিশেষ করে বর্ণাক্ষরগুলো সিলেটের নাগরী ভাষার। যা থেকে বর্তমান প্রজন্ম একেবারেই বে-খবর রয়েছে। প্রায় শতবর্ষ পুরানো দেয়ালে আমাদের ঐতিহ্য আমাদের পূর্বপুরুষের বর্ণমালা দেখে সত্যিই অভিভূত হয়েছি। শুনেছি বর্তমান যুগে অনেক কবি সাহিত্যিক সেই ভাষাকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি তাদের উত্তোরত্তর সফলতা কামনা করছি।
বেশ কিছুটা আনন্দ লাগলো যে আমাকে সম্বোধন করলেন মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড: দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী
আমাকে একটার পর একটা সেলফ দেখালেন বিভিন্ন ইতিহাস ঐতিহ্যের চিহ্নগুলো দেখালেন। সেই প্রথম সংকলন থেকে বেশ কিছু ঐতিহাসিক পত্রিকার অংশবিশেষ তথা আমাদের নাগরিলিপির পুস্তক দেখতে পারলাম। এখানে আরেকটি কথা উল্লেখ করি যে, কেমুকাসে যা-ই দেখছি, তাতে যেন কোথাও একটা টান উপলব্ধি করতে পারছি। আমার হৃদপিন্ড ছেদ করে কতো কিছু যে হৃদয়ের গহীনে অতলে প্রবেশ করছে, তা কেবল আমিই জানি। সত্যি বলতে যতই দেখছি ততই আমার নিঃশ্বাসটা হচ্ছে ভারি হচ্ছে। আমি যেন আমার আপন ভুবনে চলে গেছি। আমার সত্তা বিকশিত হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরে বুননের স্বত্বাধিকারী আমার বেয়াই Khaled Ud-deen আমাকে ফুলের শুভেচ্ছায় welcome করলেন
উনার সাথে কিছু কথা হলো তিনিও সানন্দে আমার সাথে নানাদিক নিয়ে মত বিনিময় করলেন। উনার বই গুলো আমার হাতে তুলে দিলেন আমার বইগুলো উনাকে দিলাম
কেমুসাসে আমি একটা বিষয় খুব লক্ষ্য করলাম যে, তাদের দৃঢ়তা তাদের স্থিরতা এবং বইয়ের প্রতি তাদের প্রেম, আগলে রাখার প্রতি তাদের মন মানসিকতা সত্যিই প্রশংসনীয়।
ফয়সল ভাই Alam Faisal
হীরা ভাই , Abdur Rahman Hira কেমুসাসের বর্তমানে সম্পাদক Salim Awal ভাই আমাকে যেভাবে স্নেহে সম্মানিত করলেন তাদের প্রতি আমার আন্তরিকতার শেষ কোনদিনই শেষ হবেনা
তারপর আমার মতো কিছু পথচলা- ঘুরে দেখা প্রিয় কেমুকাস-
ধীরে ধীরে সারি সারি বুক সেলফের দিকে হাঁটতে লাগলাম। দু’একটা বই স্পর্শ করতেই শিহরিত হলাম। মনে হলো কে যেনো আমাকে কিছু বলতে চাইছে। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টাতেই অদেখা কবির নানান কথা চোখে পড়লো। নানান কথায় ক্ষাণিকের জন্য হলেও হারিয়ে গেলাম। সম্মুখে এগুতেই দেখি আমাদের গ্রাম গঞ্জের অতি প্রিয় প্রাচীন পুঁথি কাব্য’ যা নিয়ে এখনো অনেক গালগল্প শুনি। যদিও তা প্রচলিত বাংলা ভাষায় নয়, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পড়তে পারলাম না, শুধু অনুধাবন করলাম। নিজেকে কিছুটা অসহায় মনে হলো আমরা আমাদের ঐতিহ্য সেই নাগরী ভাষা থেকে সম্পূর্ণ অপরিচিত।
শোনা যায় মাত্র ১৯ টি কাব্যগ্রন্থ নিয়ে এই কেমুকাসের পথ চলা, যেখানে আজ প্রায় ৪০.০০০ কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।এটি আমাদের আনন্দ দেয় আমাদের ঐতিহ্যকে আরো এগিয়ে নিতে চাই। এই এগিয়ে যাবার সুবাদে আমার লেখা কাব্যগ্রন্থ কুম্ভগহনে কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিলাম।
এখানে আরেকটি কথা উল্লেখ করতেই হয় সম্রাট আওরঙ্গজেবের হাতের লেখা কোরআন শরীফ সহ নানান গুণীজনের প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। সেই সকল কাব্যগ্রন্থ কালের সাক্ষী হয়ে এইখানে রয়েছে।
ফিরে যাই আমার কথায়;
ছোট্ট একটি চেয়ারে বসলাম, মেহগনি কালারের এই চেয়ার, আমাদের সিলেটের ঐতিহ্যের আরেক প্রতিক বেত দিয়ে সুসজ্জিত। যদিও বর্তমানে পেছনের অংশটা খুলে রাখা হয়েছে।
টেবিলে রাখা একটি বলপেন হাতে নিলাম, কিছু লিখতে ইচ্ছে হলো। তারপর থমকে গেলাম। ভাবলাম একদিন সময় করে লিখবো। আজ আমাদের সাপ্তাহিক ছুটি —
তাই নোটবুকে লেখা এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা—ভালোলাগা ভালোবাসার ঐতিহ্য কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে গিয়ে সত্যিই আমি আনন্দিত, এই কেমুসাস আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে।

শেয়ার করুন