আলেম, শিক্ষিত সমাজ ও দায়িত্বশীল বক্তব্য


আনোয়ার শাহজাহান :
আলেমরা ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন। তারা নবী রাসুলদের জীবনী অধ্যয়ন করে সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং সেই শিক্ষাই মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। তাদের বক্তব্য শুধু ধর্মীয় নয়, নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েও মানুষের হৃদয় জয় করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু কখনো কখনো আমরা এমন কিছু পরিস্থিতির সম্মুখীন হই, যেখানে আলেমদের বক্তব্য আমাদের প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না।
একজন আলেম, যিনি ইসলামের দাওয়াত দিয়ে বেড়ান এবং নবী রাসুলের জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন, তার বক্তব্যে ধৈর্য ও সংযম থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সংখ্যক শ্রোতার আচরণ বা মনোভাবের কারণে একটি সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠীকে কটাক্ষ করে কথা বলা ন্যায়সঙ্গত নয়। এটি শুধু শ্রোতাদের মনে কষ্টই দেয় না, বরং ইসলামের মূল নীতির সঙ্গেও অসঙ্গত।
ইসলামের শিক্ষা আমাদের দয়া, সংযম ও ন্যায়বিচারের কথা বলে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কখনো ধৈর্য হারাননি। তিনি সর্বদা ন্যায়, সত্য ও সহনশীলতার পথে থেকেছেন। একজন আলেমের কাছ থেকে আমরা একই রকম আচরণ প্রত্যাশা করি।
তাই, দায়িত্বশীল বক্তব্য দেওয়া একজন আলেম বা যে কারও জন্যই অত্যন্ত জরুরি। তার কথার মাধ্যমে যদি কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তবে তা ইসলামের সৌন্দর্যকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত আলেমদের প্রতি সম্মান দেখানো, কিন্তু একই সঙ্গে তাদের কথা বা আচরণ যদি অসঙ্গত হয়, তাহলে তা বিনয়ের সঙ্গে তুলে ধরা। কারণ ইসলাম আমাদের শুধু শ্রদ্ধার শিক্ষা দেয় না, বরং অন্যায় বা অসঙ্গতির প্রতি প্রতিবাদ করতেও উদ্বুদ্ধ করে।
পরিশেষে, আমরা আশা করি যে, আমাদের সমাজের আলেম ও শিক্ষিত ব্যক্তিরা তাদের বক্তব্য ও আচরণে আরও দায়িত্বশীল হবেন এবং ইসলামিক নীতিমালা অনুসরণ করে সকলকে একত্রিত করার পথে কাজ করবেন।
ভুল সবাইই করে, ফেরেস্তাদের তো ভুল হয় না। মানুষ হিসেবে আমরা কখনও ভুল করি, কিংবা রাগ বা উত্তেজনার মধ্যে কিছু বলে ফেলি। কিন্তু যখন আমরা ভুল বুঝতে পারি এবং তা সংশোধন করতে চাই, তখন ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে কোনো লজ্জার বিষয় নেই। বরং, এটি একটি পরিপক্কতা এবং সাহসিকতার পরিচায়ক। যে ব্যক্তি তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চায়, সে নিজের মানবিকতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সম্পর্কের প্রতি তার দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে।
এই ধারণা আমাদের শেখায়, যে কোন পরিস্থিতিতেই আমাদের উচিত একে অপরকে ক্ষমা করে দেওয়া এবং নিজেদের ভুল স্বীকার করার মাধ্যমে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলা।
আমি মনে করি, সিলেট সম্পর্কে অপ্রাসঙ্গিক বা অসম্মানজনক মন্তব্য না করাই ভালো। সিলেটবাসী তাদের আতিথেয়তা ও ধৈর্যের জন্য পরিচিত। কিছু মানুষের আচরণের কারণে পুরো সিলেটবাসীকে সমালোচনা করা ঠিক নয়। শ্রদ্ধা, বিবেচনা এবং সহানুভূতির সাথে কথা বললে সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় থাকবে।

আনোয়ার শাহজাহান
লন্ডন।

শেয়ার করুন