সহায়ক উপকরণ বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন
প্রতিবন্ধীদেরকে সমাজের সাথে একীভূত করতে উদার দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন
……সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মোঃ রেজা-উন-নবী
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মোঃ রেজা-উন-নবী বলেছেন, প্রতিব›দ্বীরা আমাদের পরিবার, সমাজ এবং দেশের অংশ। তাদেরকে একীভূত করতে উদার দৃষ্টিভঙ্গি এবং সহানুভূতির প্রয়োজন। তারা যাতে সামাজিক মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে পারে, সে জন্য তাদের প্রতি যতœশীল হতে হবে। শুধু তাই নয়, তাদের জন্য যোগ্যতা অনুসারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের স্পেশাল কেয়ার, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাপোর্ট দিলে তারাও দেশের সম্পদে পরিণত হবেন।
৩৩তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২৬তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, সহায়ক উপকরণ বিতরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অত্যন্ত বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, সিলেট সিটি কর্পোরেশন, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে সিলেটে কর্মরত বেসরকারি সংগঠনসমূহের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ : বিকশিত নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে প্রতিব›দ্বী জনগণ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে একটি শোভাযাত্রা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে রিকাবীবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে এসে সম্পন্ন হয়। শোভাযাত্রায় সরকারের উচ্চপদস্থ কমর্কতা, আয়োজক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং প্রতিব›দ্বীরা অংশ গ্রহণ করেন।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার-উজ-জামানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয় (সিলেট)-এর পরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রাসেলুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী। সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা), রায়নগর-এর উপ-তত্ত¡াবধায়ক মুনতাকা চৌধুরী এবং প্রতিব›দ্বী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, শেখঘাট-এর প্রতিব›দ্বী বিষয়ক কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ শংকর রায়-এর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ আব্দুল রফিক এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন রহমানিয়া প্রতিবন্ধী কল্যাণ ফাউন্ডেশন, সিলেট-এর সভাপতি আতাউর রহমান খান শামসু, গ্রীণ ডিজেবল ফাউন্ডেশন, সিলেট-এর সভাপতি বায়েজিদ খান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সেন্টার ফর ইনফরমেশন অ্যান্ড মাস মিডিয়া (সিফডিয়া) এবং সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি রোটারিয়ান আবদুল মুহিত দিদার, সুরমা অন্ধকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান সালামত রাজা চৌধুরী, সিলেট বুদ্ধি প্রতিব›দ্বী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া নাসরিন, সিলেট টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাষক মাহবুবুর রহমান রনি, সমাজভিত্তিক প্রতিব›দ্বী ও শিশু সুরক্ষা সংস্থা, সিলেট-এর অরগানাইডিং সেক্রেটারি পল্লব সাহা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রতিব›দ্বীদের জন্য ৮০টি হুইল চেয়ার এবং ২০টি বাই-সাইকেল সহায়ক উপকরণ হিসেবে প্রদান করা। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সমাজসেবা অফিসার খলিলুর রহমান এবং গীতা পাঠ করেন মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র সেফহোম, সিলেট-এর উপ-তত্ত¡াবধায়ক রূপন দেব। পুরো অনুষ্ঠানকে ইশারা ভাষায় উপস্থাপন করেন মুহাম্মদ সফিউল আলম। আলোচনাসভা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সিলেটের স্থানীয় শিল্পীরা বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানকে মাতিয়ে রাখেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয় (সিলেট)-এর পরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিব›দ্বীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিশ^ব্যাপী এই দিনটি উদযাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশে ৩৫ লক্ষ ২১ হাজার জন মানুষ প্রতিব›দ্বী রয়েছেন। তাদেরকে পিছিয়ে পড়া থেকে অগ্রসর করার জন্য সরকার কাজ করছে।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রাসেলুর রহমান বলেন, প্রতিব›দ্বীরা সমাজের স্পেশাল জনগোষ্ঠী। তাদের বিশেষ কিছু চাহিদা রয়েছে। তারা সহজেই তাদের মনের আকুতি প্রকাশ করতে হবে। এজন্য আমাদেরকে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।
সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী স্টিফেন হকিং যদি বিশ^কে জ্ঞানভিত্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব দিতে পারেন, তাহলে প্রতিব›দ্বীদেরকে সার্বিক দিক দিয়ে সহায়তা করলেও তারা দেশের জন্য সম্পদে পরিণত হবেন।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী বলেন, সমাজকে অগ্রসর করতে হলে নারী-পুরুষকে একসাথে কাজ করতে হবে। প্রতিব›দ্বীরাও আমাদের সমাজের অংশ, তাই তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।