তাসলিমা খানম বীথি :
আমাদের পাড়া থেকে এক তাবিজওলা হেঁটে যাচ্ছে। কাঁদে ঝুলানো লম্বা চেপ্টা বাঁশের পিস তার মাঝে দুদিকে ঝুলানো তাবিজের রসি। এরকম তাবিজওলাকে সেই ছোটবেলা দেখেছিলাম। চট করে চোখে ভেসে ওঠে ‘মরা গাঙের জল’ গ্রন্থ তাবিজওলার কথা।
2.বইটি সবকটি লেখা সাথে আগে থেকেই পরিচিত হলোও আবারও সেলফ থেকে বের করি। তাবিজওলা বাবার নবজাতক মেয়ের কান্না শুনতে রুম ভাড়া, পেট ভাত খাওয়া র কথা ভুলে গিয়ে টাকা বাচিয়ে শুধু পানি খেয়ে, রুমমেন্ট ভাঙ্গারিওলার মোবাইল নিয়ে বউ সাথে কথা বলে মেয়েকে চিমটি দিয়ে কান্নার শব্দ যেনো মরুভূমিতে এক পশলা বৃষ্টি মতই বাবার কলিজা ঠান্ডা করে। বিশালতা আবেগের পরিমাপ, যা একজন বাবাই তা অনুভব করতে পারবেন। যে গ্রন্থ, যে লেখা পাঠকের মনে দাগ কাটে কিংবা বহু বছর পর বইটি গল্প পড়তে অন্তত যৌবনা লাগে। তাগিদ মনে হয়। পুরনো হলোও প্রাণবন্তত লাগে তখনই লেখকজীবন ও লেখা সার্থক। এই কথাটি যেমন আমি বিশ্বাস করি ঠিক তেমনি প্রথমা বইমেলা কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা কথাটি একেই ভাবে বললেন। তখনই বুঝতে পারলাম আসলে সেরা লেখা সৃষ্টি করতে হলে আগে সেরা একজন পাঠক হতে হবে। ভালো পাঠকই পারে ভালো লেখক তার লেখা সৃষ্টি করতে।
3. তাবিজওলার প্রথম সন্তান। প্রথম সন্তান দেখার তার খুব ইচ্ছে। কিন্তু‘ পয়সা না থাকায় সে তার সন্তানকে দেখতে যেতে পারছে না। ফলে তার হৃদয়টি যেন নদীর মতো শুকিয়ে গিয়েছিলো। এরপর যখন মেয়ের কান্নার সুর শুনলো, তখন সে এতো তৃপ্তি পেলো যে তার মনে হলো তার যে হৃদয়টি এতাদিন শুকিয়ে মরা গাঙের মতো হয়ে গিয়েছিলো, সেই মরা গাঙে যেন আবার জল আসলো। নদীর মতো সে সজীব প্রাণবন্ত এবং তৃপ্ত হলো।
4. মরা গাঙে জল গ্রন্থটি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে এই বইয়ের প্রতিটি গল্পের সাথে মিল রেখে কিছু বাস্তবচিত্র দেওয়া হয়েছে। যে কোন পাঠক পড়লে মনে করবে সত্যি গল্প। কথাসাহিত্যিক সেলিম আউয়াল ‘অনুপ্রেরণা’ তাৎক্ষনিক গল্প লিখেছিলেন সেটি 1977 সালে। এই গ্রন্থ 12টি গল্প বয়স হয়েছে 1977 থেকে 2016 যখন বইটি পড়ছি ভাবছি আমার জন্ম আগে তিনি লিখেছেন সেই লেখা আমাকেও প্রেরণা দিচ্ছে। আমাদের সিলেটের সাহিত্যপাড়া গল্পকার সাংবাদিক সেলিম আউয়াল একজন নিবেদিত প্রাণ পুরুষ। তাকে যারা কাছে থেকে দেখছেন তারা ভাবতেই পারবেনা তার হাত ধরে বাংলা সাহিত্যের আরো শক্তিশালি লেখা রয়েছে। ,তিনি শুধু সাহিত্যের জন্য কাজ করতে গিয়ে তিনি নিজের লেখা সময় দেন না। পাঠকদের জন্য উচিত তিনি আরো বেশি বই বের করা। তিনি বইটি উৎসর্গ করেছেন কথাশিল্পী আবদুল হাই মিনারকে। বই পড়ে কেউ দেউলিয়া হয় না এটা যেমন ঠিক, তেমনি একটা বই অনন্তযৌবনা, যার নির্যাস কখনোই ফুরায় না। সিলেটের সাহিত্যকে এগিয়ে নিতে যিনি প্রাণপণ কাজ করছেন কথাসাহিত্যিক সেলিম আউয়াল এর প্রতি অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
এক নজর বইটি কথা-
গ্রন্থ-মরা গাঙে জল
প্রচ্ছদ- ইয়াহইয়া ফজল
আলোকচিত্র- মাহমুদ পারভেজ
অক্ষর বিন্যাস- তাসলিমা খানম বীথি
প্রকাশন-কৈতর প্রকাশন
মূল্য-১০০ টাকা।