কাবিন

তাসলিমা খানম বীথি :

সখিনা খালাকে দেখে নিশীর প্রচন্ড রাগ হয়। কলিংয়ের শব্দ দরজার অপাশে যে সখিনা খালা? আগে জানলে দরজাই খুলতো না। মনে রাগ রেখে মুখে হাসি দিয়ে দরজা খুলে দেয় নিশী।

কেমন আছো মামনি? তোমার আম্মাকে ডাকো। আজকে তিনজন পাত্র সিভি নিয়ে আইছি।

এমনিতে নিশীর দাঁতের ব্যথা সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে তার উপরে ঘটক সখিনা খালা কথা শুনে ব্যথা আরো বেড়ে গেছে। নিশী বলে – আম্মা ত বাসায় নেই। বড় খালার বাসায় গেছেন। আসর এর আজান হতে সখিনা খালা নামাজ পড়বে বলে ওযু করতে ওয়াশরুম চলে গেলেন। তার ভাব দেখে মনে হয় যেনো নিজের বাড়ি। দাঁতের ব্যথা সহ্য হলেও সখিনা খালাকে তার সহ্য করতে পারছে না। তাই নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় নিশী।

কিছুক্ষণ পর দরজার সামনে সুচি এসে বলে- আপু ঘটক খালা চা খেতে চাচ্ছে।

-ঠিক আছে, চা খাইয়ে বিদায় কর।

নিশীর ছোট বোন সুচি চা দিতেই ঘটক পানসুপারি আবদার করে বসে।

সুচি বলে-সখিনা খালা আমরা কেউ পানসুপারি খাই না। সাদাকালো দাঁত বের করে সখিনা খালা মুখটি ভার করে বলে, ঠিক আছে মামুনি চললাম। পানসুপারি নাই, তাহলে আর কি করা। বাইরে গিয়ে কিনে খাবো। সিভি রেখে গেলাম বলে ঘটক বিদায় হয়। বিড়ালের বাচচার মত চট করেই চোখের পলকে সখিনা খালা উদাও হয়ে যায়। সুচি দরজাটা লাগিয়ে খিলখিল করে হাসতে থাকে আর নিশীর রুমের দরজায় সামনে গিয়ে বলতে থাকে- আপু ঘটক পালিয়েছে।

2. সখিনা খালা যাবার পর নিশী ভাবলো। আম্মা যেহেতু বাসায় নেই এর ফাঁকে পাত্র ঠিকানা দেখা যাক। যে ভাবা সেই কাজ। পুরোটা সিভি পড়ে নিচে যোগাযোগ লেখা বড় ভাই। নাম্বারে কল দেয়। নিশীর খালোত বোন শিরিন নাম চালিয়ে পাত্র বড় ভাই সাথে কথা বলে- পাত্র বিষয় জানতে চায়? বড় ভাই আশিক রিসিভ করতে নিশী সখিনা খালা কথা বলে। আশিক জানায়- সে বাইরে আছে। একটু পরে বাসায় যাবে। পাত্র ছবি ওয়ার্সআপে দিবো। তার আগে জানিয়ে দেই- দুই লাখ এর বেশি বা কম এক টাকাও হবে না। প্রতি মাসে পাত্র কাবিনের টাকা পরিশোদ করে দেবে। এর বেশি কিছু আমরা দেবো না। কনে না দেখে কোন কিছু না জেনেই আগে বলে দিলো দুই লাখ টাকার কাবিন। নিশী অবাক হয়ে বলে আপনারা ত কনেই দেখলেন না। তার আগেই কেন কাবিনের কথা বলছেন? -আশিক বলে দেখুন। আমরা ঘটকে কাবিনের কথা বলে রাখছি। কেন জানেন? যদি পাত্রী বাড়ির সবাই দুই লাখে রাজি হয়। তাহলে আমরা পাত্রী দেখতে যাবো। তিনি আপনাদের কিছু বলে নাই। ঘটকরা এমনি 7/5 কথায় কথায় মিথ্যা বলে দেখে নিশী একদম দুচোখে দেখতে পারে না। আর কিছু জানার ইচ্ছা নেই। মনে মনে রাগ হলোও বিনীয়ভাবে সালাম দিয়ে কল কেটে দেয়।

পাত্র বড় ভাইয়ের কথা শুনে নিশীর বিয়ের ইচ্ছে চলে গেছে। নিশির কাছে টাকা চেয়ে মানুষের মূল্য অনেক। যাদের কাছে মানুষের মূল্যয়ান নেই। বিয়ের আগেই টাকার হিসেব করছে। পাত্রীকে না দেখে, যাচাই বাচাই ছাড়া এমন কথা বলে তাদের মানসিকতা কেমন হবে? ভাবতে অবাক লাগে!

3. ঘটক সখিনা খালা দেওয়া পাত্র সিভি ছিড়ে টুকরো টুকরো করে হাই কমেটের ভেতরে ফ্ল্যাশ করে দেয় নিশী। এই পাত্র কথা আম্মা জানার আগেই বিয়ের ভনভনানি থেকে আপতত বেঁচে গেলো নিশী।

নিশীর কাছে সবচে সুন্দর সম্পর্ক নাম হচ্ছে দম্পতী শব্দটি। আসলে দাম্পত্যময় পুরো জীবন একটি রোমান্টিক জার্নি। কাবিনে কি সংসার হয়? না। সংসার ঠিকে রাখে ভালোবাসা যত্নে আর মায়া শ্রদ্ধা। যে এমনি করে নিশীকে আগলে রাখবে সেই ভালোবাসার মানুষটির অপেক্ষায় …

শেয়ার করুন