হেতিমগঞ্জে একরাতে চার বাড়িতে চুরি, প্রায় ৭ লক্ষ টাকার মালামাল লুট

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার হেতিমগঞ্জে একরাতে ৪টি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকালে চুরির বিষয়টি জানতে পারেন বাড়ি মালিকরা। চুরির রাতের আগে থেকেই তারা নিজ নিজ প্রয়োজনে অন্যখানে অবস্থান করছিলেন। প্রতিবেশী তারেক আহমদের মাধ্যমে চুরির খবর পেয়ে বাড়িতে আসেন এবং স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট হয়েছে বলে নিশ্চিত হন।

উপজেলার ৩নং ফুলবাড়ি ইউনিয়নের মোল্লাগ্রাম পশ্চিম পাড়ার রাহেলা বেগম, সেনা সদস্য ফরজান উল্লা ও লন্ডন প্রবাসী নূরুল মজিদ চৌধুরী হুমায়ুন’র বাড়িতে এ চুরির ঘটনা ঘটে। একই সময় নেছারুন বেগম নামের এক বিধবার ঘরের তালা ভাংলেও কোনো কিছু খোয়া যায়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।

সংবাদদাতা তারেক আহমদ জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি নিজ সুপারি গাছের নিচ থেকে ঝরে পড়া সুপারি আনতে যান। এসময় সেনা সদস্য ফরজান উল্লার ঘরের দরজা খোলা ছিল। তারা প্রায় ১০ দিন থেকে বাড়িতে নেই। এই অবস্থায় দরজা খোলা দেখে তিনি উঁকি মারেন। এসময় ঘরের ভেতরের মালামাল এলোমেলো দেখে অন্য প্রতিবেশীদের ডাকেন। এরপর এক এক করে বিধবা নেছারুন বেগমের ঘরের তালা ভাঙা ও রাহেলা বেগমের ঘরের লোহার গ্রিল কাটা ও মালামাল তছনছ দেখে তাদের খবর দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চুরি যাওয়া বাড়ি মালিকরা ওইখানে জমি কিনে নতুন বাড়ি করে বসবাস করছেন। এর মধ্যে রাহেলা বেগমের স্বামীর বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারে। তিনি মোল্লাগ্রাম পশ্চিম পাড়ার ‘স্বপ্নধরা আবাসিক এলাকায়’ জমি কিনে বাড়ি করেছেন। বছরের বেশিরভাগ সময়ই স্বামীর বাড়িতে থাকেন। তবে মাঝে মাঝে নতুন বাড়িতে এসে সপ্তাহ দুএক থেকে আবার চলে যান। তখন বাড়িটি ফাঁকা থাকে। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে থেকেই তিনি বিয়ানীবাজারে ছিলেন। খবর পেয়ে এসেছেন।

তিনি বলেন, বাড়ি ফাঁকা পেয়ে চোরেরা বারান্দার লোহার গ্রিল কেটে দরজার তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে। এরপর কাঠের কেবিনেট ও টেস্কো ড্রয়ার খুলে সব কাপড় তছনছ করে ফেলে রাখে। এসময় ড্রয়ারে থাকা নগদ ২০ হাজার টাকা ছাড়া আর কিছুই নেয়নি। ঘরে ঢুকে তিনি চারটি সিগারেটের খোসা ও পুরনো পত্রিকায় মোড়ানো ছোট ছোট ট্যাবলেট জাতীয় কিছু পেয়ে ছিলেন বলেও জানান।

এদিকে সেনা সদস্য ফরজান উল্লার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। তিনিও ‘স্বপ্নধরা আবাসিক এলাকায়’ প্লট কিনে ছিলেন। চাকুরির সুবাধে তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্টে থাকলেও নতুন বাড়িতে তার স্ত্রী ও শ্বাশুড়ি বসবাস করতেন। ঘটনার প্রায় ১০ দিন আগে থেকে তারা গ্রামের বাড়ি কুলাউড়ায় ছিলেন। পরে বৃহস্পতিবার সকালে চুরির খবর পেয়ে বাড়িতে আসেন। তার ঘর থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা লুট হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

অপরদিকে, একই আবাসিক এলাকায় প্লট কিনে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করা নেছারুন বেগমের ঘর থেকে কোনো কিছুই খোয়া যায়নি। তার কোনো পুত্র সন্তান নেই। কিছুদিন আগে স্বামী মারা যাওয়াতে তিনি বিভিন্ন সময় আত্মীয়দের বাড়িতেই বসবাস করেন। ঘটনার রাতেও তিনি এক আত্মীয়তের বাড়িতে ছিলেন। কিন্তু চোরেরা তার ঘরের তালা ভাঙলেও ঘরে ঢুকতে পারেনি।

এরআগে, গত সোমবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় লন্ডন প্রবাসী নূরুল মজিদ চৌধুরী হুমায়ুনের ঘর চুরি হয়। তার শ্বশুড় বাড়ি মোগলাবাজার থানার শ্রীরামপুরে। বেশ কিছুদিন আগে তিনি মোল্লাগ্রাম পশ্চিমপাড়ায় নতুন ভবন স্থাপন করেন। তিনি প্রবাসে থাকায় উনার শ্বশুড় ফখরুল ইসলাম বাড়িটি দেখা শোনা করছেন।

ফখরুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার আমি জানতে পারি যে, আমার মেয়ের ঘরের জানালার লোহার গ্রিল কেটে ও গøাসের লক ভেঙে চোর ঢুকেছে। সোমবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় এই চুরির ঘটনা ঘটেছে। ওই রাতে আমি সস্ত্রীক ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। আমার মেয়ে বাড়িতেই ছিল। কিন্তু তারা চুরির বিষয়টি বুঝতেই পারেনি। সকালে চুরির বিষয়টি আমাদের সামনে দৃশ্যমান হয়। চোরেরা বাসায় থাকা ৩ ভরি স্বর্ণালংকার, একটি অত্যাধুনিক ডিসিএলআর ক্যামেরা, নগদ ৩৫ হাজার টাকা, বিদেশী কসমেটিক্স, কাপড় ও ইলেক্ট্রিক সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। সব মিলিয়ে প্রায় ৭ লক্ষ টাকার মালামাল লুট হয়েছে বলে থানায় করা অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন।

৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুজিবুর রহমান দুলাল জানান, সবকটি চুরির ঘটনা একই রাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে ধারানা করা হচ্ছে। বাড়ির মালিকরা বাড়িতে না থাকায় চুরির বিষয়টি কেউ বুঝতে পারেনি। আজ সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে সবাই বাড়িতে আসেন। সম্ভবত সোমবার দিবাগত রাতেই এই চুরি সংঘটিত হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গোলাপগঞ্জ থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. মখলেছুর রহমান জানান, লন্ডন প্রবাসী নূরুল মজিদ চৌধুরী হুমায়ুনের শ্বশুড় ফখরুল ইসলাম থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদির্শন করেছি। ঘটনাটি গত সোমবার দিবাগত রাতে ঘটেছে। বাসায় লুটপাটের আলামাত পাওয়া গেছে।

শেয়ার করুন