কনডেম সেলে থাকা সকল ফাঁসির আসামীদের পূর্ণ বিচারের আগ পর্যন্ত বন্দিদের সাথে সাধারণ জীবন যাপন করার সুযোগ করে দেওয়া, নিম্ন আদালতের রায়ের দ্রুত পূর্ণ বিচার কার্যকর করা, হাসিনা সরকারের বাহিনী ধারা মিথ্যা মামলা ১৬৪ ধারা জবানবন্দি নিয়ে ফাঁসির মিথ্যা রায় বাতিলের দাবিতে মানবন্ধন করা হয়েছে। মানববন্ধন থেকে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা. বিচার বিভাগের কাছে সুষ্ট বিচারের দাবি জানানো হয়।
কারো মৃত্যুদন্ডের রায় হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে দেড় বছর, কারো পেরিয়ে গেছে এক বছর। কেউ কেউ জেলে আছেন ৬/৭ বছর ধরে। এ অবস্থায় কনডেম সেলে কঠিন দিন পার করছেন কারাগারে ফাসির রায় হওয়া বন্দিরা। এসব বন্দিরা নুন্যতম মানবিক সুবিধা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট আদালত প্রাঙ্গনের সামনে মানববন্ধনে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন মৃত্যুদন্ডের রায় হওয়া কারাগারে বন্দির স্বজনরা।
মানবন্ধনে উপস্থিত সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী হোসাইন আহমদ শিপন বলেন, সব মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। যারা ফাঁসির রায় নিয়ে কারাগারে আছেন তাদের প্রতি সবার যত্নশীল হওয়া দরকার। এটি না হলে কোনভাবেই মানবাধিকার রক্ষা করা হয়েছে; সেটি কোনভাবে বলা যাবে না। যার ফাসি হয়েছে রায়ের পর থেকে সে এমনিতে মুষড়ে পড়ে। তাই দন্ডাদেশ কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত তার স্বাভাবিক জীবনযাপন দরকার। অর্থাৎ যতক্ষন পর্যন্ত উচ্চ আদালত তার বিরুদ্ধে সঠিক ফায়সালা না দেন ততক্ষন পর্যন্ত তাদের মানবিক দিক বিবেচনা করা রাষ্টের দায়িত্ব। একজন লোককে চূড়ান্ত ফাসির রায়ের আগ পর্যন্ত কনডেম সেলে রাখা মানবাধিকারের চরম লঙ্গন বলেও জানান এই আইনজীবী।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফাঁসির রায় হওয়া প্রায় ১৩০ পরিবারের সদস্য। মুক্তাদীর আহমদ মুক্তার পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোকেট সাব্বির আহমেদ, অ্যাডভোকেট মইনুল ইসলাম রাশেদ. অ্যাডভোকেট রাঞ্জু দেবনাথ।
এক বছর ধরে কনডেম সেলে থাকা রইছ আলীর স্ত্রী কমলারুন নেছা গোয়াইনঘাট থেকে সন্তানসহ ছুটে আসেন মানববন্ধনে। কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তাকে দেখতে গেলেই কান্নাকাটি করেন। কারাগারের যে অবস্থা দেখা করতে গেলে তার ছোট ঘরের কথা শুনতে শুনতে নিজেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। কারাগারে কেন এত কষ্ট দেওয়া হয় বলে নিজে কাদতে থাকেন।
দেড় বছর ধরে সিলেট কারাগারে ফাঁসির রায় নিয়ে আছেন সিলেট নগরীর ঘাসিটুলার আব্দুল কাইয়ুম। তার মেয়ে জাহানারা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা আইনের মারপ্যাচে আটকে আছি। নুন্যতম মানবাধিকার পাচ্ছেন না আমার বাবা। তার সঙ্গে দেখা করতে কঠোর নিয়ম পালন করতে হয়। তাকে রাখা হয়েছে ছোট একটি ঘরে। ওই ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তারা বাবা।
জাফলং থেকে মানববন্ধনের খবর পেয়ে বৃদ্ধ মিনা বেগম ছুটে গিয়েছিলেন আদালত প্রাঙ্গনে। তার ছেলেকে বিগত সরকারের সময় মাদক মামলায় ফাসিয়ে দেওয়া হয় বলে তার অভিযোগ। জোর করে তার জবাবন্দি নেওয়া হয়। তাকে ফাসির রায় দেওয়া হয়েছে। আমার ছেলে ৬ বছর ধরে জেলে বন্ধি। ফাঁসির রায় হওয়ার পর থেকেই তাকে ছোট একটি ঘরে থাকতে দেওয়া হচ্ছে। আমরা কারাগারে দেখা করতে পারিনা। আমি ন্যায় বিচার চাই।