তাসলিমা খানম বীথি
অফিসিয়াল অনুষ্ঠান হলেই সাংবাদিক কথাসাহিত্যিক সেলিম আউয়াল (বস) বলতেন. উপস্থাপনা করার জন্য। আমি না করতেই তিনি রেগে যেতেন। রেগেমেগে কিছু বলতেন, আমিও শান্ত বালিকার মত শুনতাম। আসলে উপস্থাপনা বরাবরই আমার কাছে একটি আর্ট। সাহিত্য সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কেমন হবে, তা অনেকাংশে নির্ভর করে উপস্থাপকের উপস্থাপনা ওপর। এমন ধারণা থেকেই না করার কারণ হচ্ছে ভয়। একটি অনুষ্ঠানে সৌন্দর্য্য হচ্ছে ভালো উপস্থাপনা। আর উপস্থাপনা ভালো না হলে পুরো অনুষ্ঠান আমার কাছে প্রাণহীন লাগে।
উপস্থাপনা বলতে আমরা অনেকে হয়তো বুঝি কেবলই একটা অনুষ্ঠানের কিছু নাম বলে যাওয়া, কথা চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু আসলেই কি তাই? মোটেই না! উপস্থাপনা হচ্ছে পুরো একটি অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে পরিচালনা করার অনেকগুলো কৌশল, একেক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে একেকরকম হতে পারে। উপস্থাপনা কিন্তু মোটেই চাট্টিখানি কথা নয়।
অনেক সময় দেখা গেছে সাহিত্য আসর উন্মোক্ত আলোচনায় মাঝে মধ্যে সিনিয়র, জুনিয়র লেখকদের নাম ঘোষণা সিরিয়েল না করলে কেউ কেউ রাগ করতেন। সেইসময় নিরবতা কটু কথা শুনে যেতাম। এই নিয়ে প্রতিবাদও করিনি। কাজেই যাদের একবার উপস্থাপনা জানা হয়ে যায়, তার জন্য অনেক কিছুই সহজ হয়ে যায়। এর মাঝে একটি হলো আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজের কথাগুলো প্রাণ খুলে পুরো পৃথিবীর মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া। এই বলতে পারার মধ্যে ভিষণ ভালো লাগার কাজ করে।
2. একদিন বস বললেন- তোমাকে এখন থেকে মোবাইল পাঠাগারের সাহিত্য আসরে উপস্থাপনা করতে হবে। তখন মনে মনে ভাবছিলাম হ্যাঁ বলব,. না কি? না বলব। শেষ পর্যন্ত আর না বললাম না। যা হবার হবে। পাঠাগারের প্রথম দিনেই আমার উপস্থাপনা শুনে পীর স্যার বললেন- বীথি পারবে সাহিত্য আসর চালাতে। পীর স্যারের আত্মবিশ্বাস দেখে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে যায়। তারপর থেকে যখন যে অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করি, বেস্ট করার চেষ্টা করি। একজন উপস্থাপক সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানে সুন্দর একটা পরিবর্তন এনে দেয়। মূলত তখন থেকেই মনপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাই। এ জন্য নিজের আগ্রহ খুঁজে পাই আরো বেস্ট করতে হবে। শুরু করি আবৃত্তি ক্লাস করা, শুদ্ধ উচ্চারন ঠিক করে বলা। ছুটির দিনে ক্লাস করি সেখানে শিখতে গিয়ে দেখি বেশিভাগই আমার জানা। অনুষ্ঠানের ছোটখাটো ভুল হলেই বস সেটি নোট করে দিতেন। নিজের ইচ্ছা শেখার চর্চা চলতে থাকে। ক্লাস আর করব না। ভাবলাম বাকি যেটুকু শেখার বস কাছেই শিখে নিবো। ভালো কাজ ঠিক ওষুদের মতই। যত করা হবে তত নিজের ভালো দিকগুলো ফুটে ওঠবে। কর্মজীবনে যখন যে কাজের দায়িত্ব পেয়েছি নিবেদিত হয়ে ভালোবেসে করেছি। নিজের কাজের মূল্যয়ান কখনো কারোর কাছে প্রত্যাশা করিনি।
3. সিলেট মোবাইল পাঠাগার র্দীঘদিন বন্ধ ছিলো। ২০১৫ সালে দিকে আবার শুরু হয়। তখন গল্পকার সেলিম আউয়াল পীর স্যারের সাথে আলাপ করে উপস্থাপনা দায়িত্ব দিলেন আমাকে। পাঠাগারের নিয়মিত সাহিত্য আসর উপস্থাপক হিসেবে আমার পথচলা শুরু হয়। তারপর ২০১৫ -২০১৯ একটানা সিলেট মোবাইল পাঠাগার ও কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের নিয়মিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আসর উপস্থাপনা করি। সেই সময় সাহিত্য ও সামাজিক সংগঠনের অনুষ্ঠানেও উপস্থাপনা করার জন্য আমন্ত্রন করতো অনেকেই। কর্মব্যস্ততার জন্য নিয়মিত সাহিত্য আসর সময় দিতে না পারলোও শুধু প্রতি সোমবার সাইক্লোন সিলেট এর সাহিত্য আসর উপস্থাপনা করি।
4.পীর স্যার মোবাইল পাঠাগারে সাহিত্য আসরে বক্তব্য ফাঁকে প্রায় প্রশংসা করতেন সুন্দর সাবলীল উপস্থাপনা জন্য। সাহিত্য আসরের নিয়মিত স্মরণ সভা, শোক সভা, পাঠচক্র, গ্রন্থলোচনা, লেখক ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা লেগেই থাকতো। পাঠাগারের এসব অনুষ্ঠানের জন্য ব্যানার, লেখকদের দাওয়াত দেওয়া, আসর শেষে নিউজ করে ইমেল পরে সে নিউজ পেপার কাটিং খাতা পেস্টিং করে ইত্যাদি সব কাজ আমি একাই করতাম।
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিসহ অনেকেই উপস্থাপনার জন্য প্রশংসিত করতেন । উৎসাহিত প্রেরণা পেতাম আর মনে মনে বসকে ধন্যবাদ দিতাম। তিনি এমন স্নেহ শাসন না করলে হয়তো এই কাজটি শেখা হতো না।
5.সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার। কেমুসাসের সাহিত্য আসর। অফিসের জরুরী কাজে আটকে যাই। তখন অপি ভাইকে কল করে বলি যেতে পারব না। তিনি শুনে বললেন- না, তোমাকে আসতেই হবে। যে ভাবেই হোক, তুমি অফিস ম্যানেজ করে কেমুসাসে আসো। ঝড় বৃষ্টি বজ্রপাত তুফান যাই হোক না কেন, সাহিত্য আসর কখনোই মিস হত না। আসর কক্ষে যাবার পর সভাপতি না আসলেও সবকিছু চালিয়ে নিতাম। মোবাইল পাঠাগারে উপস্থাপক হিসেবে সামান্য সম্মানী দিলোও কেমুসাস থেকে কখনোই তেমন সম্মানী পাইনি। তবুও লেখক হিসেবে সাহিত্যচর্চা এগিয়ে নেবার জন্য ভালোবেসে সাহিত্যের জন্য কাজ করেছি।
কবি আব্দুল মুকিত অপি কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পাদক হবার পর সাহিত্য আসরের দুই দু’বার উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করি।
উপস্থাপক হবার জন্য প্রথমে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গল্পকার সেলিম আউয়াল। তারপর যাদের ভালোবাসা স্নেহে সাহিত্য আসর কাজের সুযোগ পেয়েছি, অধ্যক্ষ লে. কর্নেল (অব.) এম.আতাউর রহমান পীর স্যার এবং এডভোকেট কবি আব্দুল মুকিত অপিকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।