সিলেট নগরীতে বন্যায় ১৮৬ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুলাই ২০২২, ৯:০৪ মিনিটসিলেটএক্সপ্রেস ডেস্ক- সিলেট নগরীতে বন্যায় ১৮৬ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। নগরী থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে বেশ কিছুদিন আগে। তবে পানি নামলেও নগরীর সড়কজুড়ে দৃশ্যমান বন্যার ক্ষত। কোনো কোনো সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বন্যায় নগরীর ১৮৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, তাদের আওতাধীন ভাঙাচোরা সড়কের ক্ষয়ক্ষতি এখনো নিরূপণ করা হয়নি। ফলে ভাঙাচোরা সড়কে চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে নগরবাসী।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, পরপর তিন দফা বন্যায় সিলেট নগরীর মোট ১ হাজার ৫০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮৬ কিলোমিটার। যা মোট সড়কের ১৭-১৮ শতাংশ। এছাড়া বন্যায় ৮০ কিলোমিটার ড্রেনের ক্ষতি হয়েছে ও পানির পাইপলাইনের ক্ষতি হয়েছে ৬০ কিলোমিটার। তবে সওজ বিভাগ এখনো তাদের সড়কের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে পারেনি। সওজের সড়ক মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এমসি কলেজের শিক্ষার্থী সেজুতি জানান, টিলাগড় মূল পয়েন্টে দেখা গিয়েছে অনেকগুলো বড় গর্ত। এমসি কলেজ পর্যন্ত কিছুটা স্থান ভালো হলেও সরকারি কলেজ থেকে নূরপুর পর্যন্ত পুরোটা সড়কই বিপর্যন্ত। তিনি বলেন, বন্যার পর থেকে সড়কটি আরো বেশি খারাপ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এ সড়কে হাঁটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। আর বৃষ্টি হলে তো দুর্ভোগের সীমা থাকবে না।
মিরের ময়দান এলাকার বাসিন্দা রিয়াজ আহমেদ বলেন, প্রথম দফা বন্যায় মিরের ময়দান পুলিশ লাইনস পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশ বেতার সিলেট কার্যালয় পর্যন্ত সড়কে ভাঙন দেখা দেয়। গত মাসের বন্যায় এ ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। মিরের ময়দান পয়েন্টে প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
নাইওরপুল থেকে কুমারপাড়া সড়ক বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে বন্যার আগে থেকেই বলে দাবি আলমগীর হোসেনের। বন্যার পরে রাস্তার অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গেট থেকে কুমারগাঁও তেমুখী সড়কের আরো বেহাল দশা। যান চলাচলও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বর্তমানে কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডর সামনে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। আমাদের এ সড়ক দিয়েই যেতে হয়। একদিকে ভাঙাচোরা রাস্তা, অন্যদিকে বাস সড়কে দাঁড়িয়ে থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। তিনি দ্রুত সড়ক মেরামতের দাবি জানান।
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে বন্যায় নগরীর সড়কের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে এসব তথ্য আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। সেখান থেকে বিল পাস হয়ে এলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের কাজ শুরু করতে পারব। তবে কাজ কবে শুরু হতে পারে এ বিষয়ে নূর আজিজ বলেন, ক্ষতির পরিমাণ একটু বেশি। যার জন্য শিগগিরই শুরু করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিলেটের বিভিন্ন দপ্তরের প্রকৌশলীদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। বন্যার পর সড়কসহ অনেক সমস্যা আমাদের সামনে দাঁড়িয়েছে। সেই সমস্যাগুলোর টেকসই সমাধানের জন্য বৃষ্টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে সওজ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বন্যায় সিলেটের ১৭টি সড়কের ১৬৬ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ। এরই মধ্যে চলাচলের উপযোগী করে তোলার জন্য এসব সড়কে গর্ত ভরাটেরও কাজ চলছে। নগরীর ভেতর দিয়ে সওজের যে সড়কগুলো রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যেখানে যেখানে ভাঙা সেখানে গর্ত ভরাট করে দেয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নগরীর নাইওরপুর-কুমারপাড়া, সুবহানিঘাট, মিরাবাজার, যতরপুর, সেনপাড়া, খরাদিপাড়া, ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, কালীঘাট, সুবিদবাজার, মিরের ময়দান, পাঠানটুলা, উপশহর, টিলাগড়, টুলটিকর, কুমারগাঁও, মোমিনখলা, খোজারখলা, বঙ্গবীর রোড, আলমপুর, গোটাটিকর, মেজরটিলাসহ শতাধিক এলাকার বেশকিছু সড়কে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক সড়কে কার্পেটিং উঠে গিয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের। ছোট-বড় গর্ত কাটিয়ে যানবাহন চালাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাও ঘটছে।