ভুল চিকিৎসায়’ শাবি কর্মকর্তার মৃ ত্যু
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৭:১৯ মিনিট
সিলেটের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাহেদ আহমেদের মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ডিসেম্বরে সিলেটের আখালিয়ার মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান সাহেদ আহমদ। সেখানে নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহ কামাল কর্তৃক সাহেদের নাকে এন্ডোসকপিক সাইনাস অপারেশন করানো হয়। এর আগে একই দিন সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. খালেদ মাহমুদ সাহেদকে সিস্টের অপারেশন করেন। অপারেশনের পরদিন পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে তাকে আলট্রাসনো ও স্লিপেস টেস্ট করানো হয়। পরে হাসপাতালের এমডি অধ্যাপক ডা. আক্তারুজ্জামান সাহেদের প্যানক্রিয়াটাইটিস লিক হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেন। তবে একই সময় সাইনাস ও সিস্টের অপারেশনের ফলে সাহেদের একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়, প্যানক্রিয়াটাইটিস লিক হয়ে যায় এবং অগ্নাশয়ের জটিল সমস্যায় পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে সাহেদের চিকিৎসা মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের আয়ত্বের বাইরে চলে গেলে গত ৬ ডিসেম্বর তাকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে স্থানান্তর করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে প্রতিবাদী মিছিল বের করেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পরবর্তীতে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে গিয়ে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ‘জাগো রে জাগো, শাবিপ্রবি জাগো’, ‘বন্ধ করো, বন্ধ করো, কসাই খানা বন্ধ করো’, ‘মাউন্ট এডোরা কসাইখানা, বন্ধ হোক এই আজাব খানা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।মিছিল পরবর্তী মানববন্ধনে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অশোক বর্মণ অসীমের সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য দেন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আহমদ মাহবুব ফেরদৌসী, সদস্য তাজিম উদ্দিন ও হিসাব দপ্তরের উপ-পরিচালক ফখর উদ্দিন
বক্তব্যে আহমদ মাহবুব ফেরদৌসী বলেন, সাহেদের মৃত্যুর জন্য আমরা ডা. খালেদ মাহমুদ ও ডা. শাহ কামালকে এককভাবে দোষারোপ করতে চাই। একই সাথে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের এমডি ডা. আখতারুজ্জামানের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সাহেদের সাইনাসের অপারেশন করে যখন ওটি থেকে বের করা হয় তখন দেখা যায় তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের প্রশ্ন হলো, সামান্য সাইনাসের অপারেশন করতে গিয়ে সাহেদের চোখ কেন নষ্ট হবে? একই সময়ে একই ওটিতে তার আরেকটি অপারেশন কেন হবে? আমরা মনে করি, ডা. শাহ কামাল, ডা. খালেদ মাহমুদ ও এমডি ডা. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি হত্যাযজ্ঞ হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা মনে করে দিতে চাই, ডা. খালেদ মাহমুদ ও ডা. শাহ কামাল যখন সাহেদের অপারেশন করেছিল (আমরা বলবো ছুরি চালিয়েছিল) তখন ডা. শোভন নামের একজন চিকিৎসক সাহেদের এনেসথেসিয়া করেছিল। আমরা মনে করি, এই এনেসথেসিয়ার কারণেই সাহেদের প্যানক্রিয়াটাইটিস লিক হয়ে যায়।
এসময় তিনি বাংলাদেশের সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এ হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার অনুরোধ করেন। একইসাথে তিনি ডা. শাহ কামাল, ডা. খালেদ মাহমুদ, ডা. শোভন ও ডা. আখতারুজ্জামানের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার আহ্বান জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল চিকিৎসার খরচ তারা বহন করবে এবং সাইনাসের অপারেশন করতে গিয়ে সাহেদের চোখ নষ্ট হয়েছে এটাও তারা স্বীকার করেছে। কিন্তু তারা সাহেদের চিকিৎসার খরচ বহন করে নি।
বক্তব্যে তাজিম উদ্দিন বলেন, চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারণে সাহেদ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। এর আগে, গত বছর নুরজাহান ফাতেমা নামের আমাদের এক সহকর্মী এভাবে ভুল চিকিৎসার ফলে মারা যায়। আমরা শাবিপ্রবি পরিবার এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে ভুলভাবে প্রচার করে সিলেটের মানুষের সাথে প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বাহিরে পাচার করছে। মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মস্তাবুর রহমান ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো মাহবুবুল হাকিম কর্মকর্তাদের এ দাবির সাথে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বক্তব্যে শিক্ষকরা বলেন, সাহেদের মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত। ভুল চিকিৎসায় সাহেদের মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছি। অতিদ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে অপরাধীদের যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।