চাঁদাবাজি বন্ধে সিলেটে মাঠে নামছে পুলিশ
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৭:২৬ মিনিট
সিলেটে চাঁদাবাজি বন্ধে এবার কঠোরভাবে মাঠে নামছে পুলিশ। আর চাঁদাবাজদের পাকড়াও করতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সোবহানীঘাট সবজির আড়তে পিকআপ চালকের উপর হামলার ঘটনায় গতরাতে শান্ত নামের এক চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিলেটে বেপরোয়া চাঁদাবাজির ঘটনায় গতকাল রোববার সিলেটের প্রিন্ট পত্রিকার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ে। এরপর পুলিশ অনেকটা নড়েচড়ে বসে।
পুলিশ সূত্র জানায়, সোবহানীঘাট সবজির আড়তে পিকআপ চালকের উপর হামলার ঘটনায় গতরাত দশটায় নগরীর রিকাবীবাজার থেকে শান্ত (২৪) নামের এক চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করা হয়। কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মো. জুনেদ আহমদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামিসহ অন্য চাঁদাবাজদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান গতকাল রোববার রাতে জানিয়েছেন, চাঁদাবাজ যেই হোক তাদের ছাড় নেই। চাঁদাবাজদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। ইতোমধ্যে এক চাঁদাবাজকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অন্য চাঁদাবাজদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। চাঁদাবাজির ঘটনায় একটি মামলাও হয়েছে। সিলেটে চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোরভাবে পুলিশ মাঠে নেমেছে। যেকোনো মূল্যে হোক চাঁদাবাজদের আমরা দমন করতে চাই।
তবে, সিলেট চেম্বার সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে সিলেটের ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নামবেন
চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী ক্যান্সারের মতো একটি ব্যাধি। এটি একদিনেই দমন করা যায় না।
প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপি দেয়ার পরেও অপকর্ম থেমে নেই উল্লেখ করে চেম্বার সভাপতি বলেন, স্মারকলিপি দেয়ার পরদিন শাহপরান থানা এলাকায় সুপারি ভর্তি গাড়ী ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জৈন্তাপুর থেকে সুপারি ভর্তি গাড়ী কাজিরবাজার সুপারির আড়তে নিয়ে আসার পথে গাড়িটি ছিনিয়ে নেয়া হয়। অহরহ এমন ঘটনা ঘটছে। কখনো শুনিনি কালিঘাটে পুলিশের গাড়ি ঢুকেছে। কালিঘাটে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা কর্মী, সিসি ক্যামেরা আছে। তার প্রশ্ন, তারপরেও এখন কালিঘাটে দিন-রাত পুলিশের গাড়ি দাড়িয়ে থাকে কেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা আজ সোমবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের নিকট স্মারকলিপি দেবেন।
গত শুক্রবার ভোর পাঁচটায় সোবহানিঘাট সবজির আড়তের সামনের সড়কে চালক সাব্বির আহমদ(২৮) যখন সবজি ভর্তি পিকআপ নিয়ে এসে পৌঁছেন, ঠিক সেসময় কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে আসা ১০/১২ জনের সশস্ত্র দল পিকআপের গতিরোধ করে দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চালক সাব্বির আহমদ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সন্ত্রাসীরা পিকআপ থেকে টেনেহিঁচড়ে সাব্বিরকে মাটিতে নামিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে। এসময় সাব্বিরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা সাব্বিরের সাথে থাকা নগদ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে দ্রুত চলে যায়।
এ ঘটনার পর থেকে সোবহানিঘাট সবজির আড়তের ব্যবসায়ী ও সবজি পরিবহনে নিয়োজিত যানবাহন চালকদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এঘটনায় পরদিন সাব্বির আহমদ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। কোতোয়ালি থানার মামলা নম্বর-০৩। ধারা ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩০৭/৩৭৯/৩৮৫/৫০৬ দন্ডবিধি। কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মো. জুনেদ আহমদ মামলাটি তদন্ত করছেন বলে কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) সুমন কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন।
চাঁদাবাজি বন্ধে ৭ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, এই সময় চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে সিলেটের ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নামবেন। পাশাপাশি সিলেট বন্ধ করে দেয়া হবে।
চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে সিলেটের ব্যবসায়ীরা গত বৃহস্পতিবার সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার, সিলেটের জেলা প্রশাসক ও সিলেটের পুলিশ সুপারের নিকট পৃথক স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপিতে ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজির বর্ণনা দিয়ে বলেন, কালিঘাটে পিয়াজ ভর্তি ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি করা হয়। জৈন্তাপুর থেকে সবজি ভর্তি ট্রাকটি সিলেট নগরে প্রবেশের পর সেটিও লুট করে নেয়া হয়। সোবহানিঘাট সবজির পাইকারি আড়তে আসা সবজি ভর্তি ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি করা হয়। চাহিদা মাফিক চাঁদা দেয়া না হলে সবজি লুট করে নেয়া হয়। কখনো ট্রাক নিয়ে যায় আবার কখনো নিয়ে যায় টাটকা সবজি। মাসের পর মাস ধরে এভাবে চাঁদাবাজি চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।