ভালোবাসার কপোত কপোতি
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ৫:৪৬ মিনিট
তাসলিমা খানম বীথি
দরজা নক করতেই দুজনের ঘুম ভাঙ্গে। বেড থেকে ধীরে ধীরে নেমে সালেহ চৌধুরী দরজা খুলে দেখেন সাদা এপ্রোন পরা নার্স দাঁড়িয়ে। অনেকক্ষণ থেকে দরজায় নক করছি। আপনাদের সাড়াশব্দ পাচ্ছিনা তাই টেনশন হচ্ছে। কেমন আছেন আপনারা। সালেহ চৌধুরী জবাব দেন-আমি ত ঠিক আছি, শুধু সাফিয়া জন্য ভাবনা হয়।
নার্স বলল, টেনশন করবেন না। আপনার স্ত্রী আগের চেয়ে এখন অনেকটা সুস্থ। সকালের নাস্তা করা হয়নি তাই ওষুধ একটু পরে খেলে হবে ত সাফিয়া জবাব দেয়? বাসা থেকে নিয়ে আসার মত কেউ নেই। তালা বন্ধ বাড়ি। বেশি লেইট করা যাবে না। নাস্তা সেরে নেন। নার্স চলে যেতে সালেহ চৌধুরী ঝটপট কেবিন থেকে বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর ছোট্ট একটা পানি বোতল করে গরম পানি নিয়ে আসেন। টি প্যাকেটটি সাফিয়া হাতে দিয়ে বালিশের নিচে থেকে 60টা হাতে নিয়ে কেবিনে বাইরে দাড়ানো রেস্টেুরেন্টে ছেলে কাছে দিয়ে বললেন- আরেক বার গেলে 5টা দিয়ে আসব। বয়স হয়েছে তো তাই টাকা সাথে নিতে ভুলে গেছি। গ্লাস হাতে নিতে সাফিয়া কিছুটা উচু স্বরে কপাল কুচকে বলে- তুমি এই মাত্র টাকা হাতে নিছো। টাকায় অনেক জীবানু থাকে। তোমার হাত সাবান দিয়ে ধুরে আসো। পরে চা খাবো। সুবোধ বালকের মত সালেহ চৌধুরী ওয়াশরুমে সিটকীনিতে টিস্যু দিয়ে মুড়িয়ে নেয়। কারন খালি হাতে কিছু ধরলে রাগ করে বসবে সাফিয়া। বেচারি অসুস্থ তাই মন খারাপের মত কোন কাজ করা যাবে না। বেসিন থেকে হাত ওযাশ নিয়ে আসে। গ্লাসে গরম পানি ঢেলে টি প্যাকেটি নাড়াতে থাকে। লিগার হতে বিস্কুট প্যাকেটি খুলে 2পিস বিস্কুট নিয়ে সাফিয়া গরম চায়ে চুমুক দেয়।
2.ব্যবসায়ী সালেহ চৌধুরী সাথে 30 বছরের সংসার জীবন পার করছে সাফিয়া। দুজনে ই দুজনের ভালোমন্দ সবকিছু মুখস্ত। সাফিয়া ইদানিং অসুস্থ হয়ে পরছে। তাই মেজাজও খিটখেটে হলেও সালেহ চৌধুরী বিরক্তী লেশ মাত্র নেই। ছেলেমেয়ে দুজনেই স্টেুডেন্ট ভিসা যুক্তরাজ্য পারি দেবার পর থেকে হয়তো সন্তাদের চোখের আড়ালে থাকা তাকে ভিষণ কষ্টে দিচ্ছে। সাফিয়া কষ্টকে অনুভব করে স্বামী সালেহ চৌধুরী। সেই জন্য তার রাগ অভিমান মেনে নেয়। পুরো বাড়িতে এখন মানুষ মাত্র দুজন। সাফিয়া আর তার স্বামী সালেহ চৌধুরী।
3.সাফিয়া কখন কি খাবে টাইম টু টাইম নিজের হাতে যত্নসহকারে করেন 65 বয়েসের প্রবীন সালেহ চৌধুরী। বয়সের চাপ আর অসুস্থতা চেপে বসায় এখন আর ব্যবসায় সময় দেন না। যুক্তরাজ্য ছেলেমেয়ে পড়াশোনা পাশাপাশি পার্টটাইমে জব করে। সেই টাকা তাদের যাবতীয় খরচ চালিয়ে বাবামায়ের জন্য কিছু টাকা দেশে পাঠিয়ে দেয়। সন্তানের দেওয়া সেই টাকা দিয়ে সালেহ চৌধুরী আর সাফিয়া বেশ চলে যায়। সকালের নাস্তা সেরে ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে ঘরে ফিরে দুজনের মিলে রান্নার ব্যবস্থা করেন। রান্না শেষে কাপড় ধুয়া ঘর ঘুছানো ওয়াশরুম ক্লিন করা ঘরের এটুজেট নিজের হাতে কাজ করতে পছন্দ করেন দুজনে। কাজের মানুষের প্রয়োজনবোধ নেই তাদের। দুজনে মিলেমিশে সংসারের কাজগুলো বাগ করে সামলিয়ে নেন। দুপুরে এক সাথে লাঞ্চ সেরে কিছু টা সময় রেস্ট নিয়ে বিকেলে হতে বারান্দা বসে এক সাথে চায়ে চুমুক দেন। মাথার চুল পেকে সাদা হলেও প্রেম ভালোবাসা তাদের মধ্যে লেগেই থাকে।
4.যৌবনের সেই রূপ লাবণ্য সৌন্দর্য্যতা না থাকলেও বয়সের চাপে গায়ে রং কালচে ভাব আর কালো চুলে সাদাপাকা হলেও সালেহ চৌধুরী আর সাফিয়া চৌধুরী মায়া হৃদয়ে নিড়ানো যত্ন আন্তরিকতা ভালোবাসার মনের টান কমতি নেই। হঠাৎ করে শীরিরীক অসুস্থা হওয়া প্রিয়তমা সাফিয়াকে নিয়ে সালেহ ছৌধুরী সময় কাটে হসপিটালের কেবিনে বেডে স্ত্রী পাশে বসে। সাফিয়া ওষুধ খাওয়া সময় হয়ে যাচ্ছে। খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। দুপুর 12টা বাজে তখন। স্ত্রীর গায়ের কাপড় নিজের হাতে চেঞ্জ করে দিয়ে। সাফিয়ার মাথার সাদা চুলগুলো চিরনী দিয়ে সুন্দর করে গুছিয়ে দেয়। এর মাঝে সাফিয়ার খিদে পায় তাই হালকা কিছু খাবে। সাফিয়া বলল, তার জন্য আপেল নিয়ে আসতে। সালেহ চৌধুরী ছুটলেন আপেল কিনতে। হসপিটালে আসার আগে অপ্রস্তুত ভাবে চলে আসায় তাই বাসা থেকে কোন কিছু নিয়ে আসা হয়নি। দোকান থেকে আপেল কিনে রেস্টেুরেন্ট যান সেখানে গিয়ে একটা চাকু খুজে নিজের হাতে আপেলগুলো চামরা ফেলে দিয়ে কেটেকুটে ধুয়ে টিফিনবক্স করে নিয়ে আসেন তার ভালোবাসার যত্নের নারী জন্য। কেবিনে ঢুকে বেডে পাশে বসে সাফিয়ার আপেল খাওয়া উপভোগ করেন সালেহ চেীধুরী আর মুগ্ধ নয়নে তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে শাবনাজ। তাদের একমাত্র মেয়ে আনিকার বান্ধুবী। মায়ের অসুস্থতা কথা শুনে শাবনাজকে কল করে হসপিটালে দেখে যেতে বলে যুক্তরাজ্য থাকা সাফিয়া মেয়ে।
5.ভাদ্রে পরন্ত দুপুরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে লাঞ্চ টিপিন নিয়ে কেবিন থেকে বের হয় সালেহ চৌধুরী। শাবনাজ অনুরোধ করে বলে চাচা বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি এই সময়ে আপনি গেলে ভিজে যাবেন। পরে জ্বরটর আসবে। তারচে বরং আপনি চাচীর পাশে থাকুন আমি লাঞ্চ নিয়ে আসি। না কিছুতেই সালেহ চৌধুরী রাজি নন। কারন স্ত্রী সাফিয়া তার হাতে খাবার ছাড়া অন্য কারো হাতে খাবে না। শাবনাজ অবাক হয়! তাদের প্রবীন বয়সে এমন প্রগাঢ় ভালোবাসা দেখে। ভালোবাসি শুনার চেয়ে বেশি ভালো লাগে যখন মানুষটার ব্যবহারে ভালোবাসা প্রকাশ পায়!’ শাবনাজ অনুভব করে তার জীবনে যেনো এমন মানুষ আসে। গোটা জীবন নিঃসঙ্গতায় কাটুক, তবুও কোনো ভুল মানুষ যেনো না আসে। ভালো থাকুক ভালোবাসার কপোত কপোতি।