কলেজছাত্রী ধর্ষণ: সচেতন নাগরিক ও অভিভাবকদের উদ্বেগ
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুলাই ২০২৩, ১০:০৭ মিনিটহবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজে প্রহরী কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে তোলপাড় চলছে। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা। একপক্ষের দাবী- অভিযুক্ত ধর্ষককে বাঁচাতে এবং ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চলছে ভিক্টিম ব্লেমিং। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা কলেজ কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটির। সোমবার (১৭ জুলাই) বিকেলে তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলা বিভাগের শিক্ষক আজহার শাহীন এই প্রতিবেদককে জানান, তদন্ত কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। মঙ্গলবার প্রতিবেদন দাখিলের নির্ধারিত দিন। তাই তদন্তের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করা হবে না। তিনি নির্যাতত ছাত্রীর লিখিত ধর্ষণের অভিযোগ পাাবার বিষয়টি নিয়েও কোন মন্তব্য করতে রাজী নন আজহার শাহীন। এদিকে শিক্ষার্থী ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রহরী রোমান মিয়া নিজের অপরাধ ঢাকতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উষ্কানী দেয়ার অপচেষ্টা করছেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হবিগঞ্জের সচেতন নাগরিক ও অভিভাবক সমাজ। তারা এতে শহরের সম্প্রীতির পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতি থেকে বিষয়টি জানা যায়। বিবৃতিতে বলা হয়, বৃন্দাবন সরকারি কলেজের নিরাপত্তা প্রহরী রোমান মিয়া গত ১০ জুলাই কলেজে অধ্যয়নরত দুইজন শিক্ষার্থীকে এক ঘন্টার অধিক সময় ধরে একটি ভবনে আটকে রাখেন। অভিযোগকারী ছাত্রের ভাষ্যমতে ওই প্রহরী তাদের মারধর করেন এবং পরবর্তীতে তাদেরকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে তার সহপাঠী ছাত্রীকে একটি ফাঁকা কক্ষে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। অভিযুক্ত নিরাপত্তা প্রহরী পরবর্তীতে আটক এবং মারধরের বিষয়টি স্বীকার করলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িকভাবে চাকুরি হতে বরখাস্ত করে। উল্লেখ্য, ভুক্তভোগী ছাত্রী ইতোমধ্যে গত ১৬ জুলাই কলেজ কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেন, এই ধরনের ঘটনা শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের নিকট কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা মনে করি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি সমাজের নৈতিকতা সৃষ্টির অন্যতম স্থান। সুতরাং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো জায়গায় এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই ঘটনার বিচারের পক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরী।
হবিগঞ্জের সচেতন নাগরিক ও অভিভাবক সমাজের অংশ হিসেবে উক্ত ঘটনায় আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং মর্মাহত। বিবৃতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের কাছে তিনটি দাবী তুলে ধরা হয়। এগুলো হল- নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যথাশীঘ্র উক্ত ঘটনায় দোষীদের শনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ভুক্তভোগীদের যথাযথ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা এড়াতে জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল গঠন করতে হবে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি পীযূষ চক্রবর্তী, সহ-সভাপতি হুমায়ুন খান, সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, জেলা বাসদ সমন্বয়ক কমরেড এডভোকেট জুনায়েদ আহমেদ, বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যেক তাহমিনা বেগম গিনি, হবিগঞ্জের সন্তান ঢাকা বিশব্বিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ চক্রবর্তী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অনিরুদ্ধ কুমার ধর শান্তনু, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী জেলা শাখার সভাপতি বন্ধু মঙ্গল রায়, সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান কাউছার, পরিবেশকর্মী তোফাজ্জল সোহেল, প্রগতি লেখক সংঘ জেলা আহ্বায়ক সিদ্দিকী হারুন, বিশিষ্ট আইনজীবী শায়লা খান, সমাজকর্মী ও ব্যবসায়ী মোছাম্মত রওশন আরা আক্তার, খোয়াই থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক ইয়ছিন খাঁ, বাসদের (মার্কসবাদী) জেলা সংগঠক শফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক ও নাট্যকর্মী আজহারুল ইসলাম চৌধুরী মুরাদ, এক্টিভিষ্ট ও নারী অধিকার কর্মী মাহমুদা খাঁ, কবি ও নাট্যকর্মী জোসেফ হাবিব, বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মাকসুরা বেগম।