মসজিদ আল কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ৮:১৩ মিনিটছামির মাহমুদ :
ঐতিহাসিক দিক থেকে কিবলাতাইন মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ। হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর। হিজরতের দ্বিতীয় বছরের রজব মাসের মাঝামাঝি সময়ে কিবলা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে। এ মসজিদেই প্রিয়নবী (সা.) এর দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছিল। আজ থেকে প্রায় ১৪শ বছর পূর্বে নামাজ পড়াকালীন সময়ে আল্লাহর নির্দেশে প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) কেবলা পরিবর্তন করেছিলেন। এ ঘটনা থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ। আগে দুটি মেহরাব থাকলেও মসজিদ পূর্ণঃনির্মাণের সময় জেরুজালেমের মসজিদে আল আকসামুখী কিবলা সরিয়ে নেয়া হয়। তবে এই জেরুজালেমমুখী কিবলা বা মিম্বর সরানো হলেও একটি চিহ্ন রেখে দেওয়া হয়েছে।
জেরুজালেমমুখি মিম্বর কেটে মসজিদে কিবলাতাইনের প্রদান দরজা করা হয়েছে। বর্তমানে মসজিদের এই প্রধানতম দরজা দিয়ে মুসল্লিগণ মসজিদে প্রবেশ করে থাকেন। আর এই দরজার উপরিভাগে জায়নামাজের একটি চিহ্ন রেখে দেওয়া হয়েছে। দেখলে বুঝা যায় এখানে একটি নামের মিম্বর ছিলো।
ইসলামের ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মদিনার পশ্চিম প্রান্তে খালিদ বিন ওয়ালিদ সড়কে দুই কিবলার ‘মসজিদে কিবলাতাইন’। ইসলামী যুগের শুরুতে তৃতীয় মসজিদ ‘মসজিদে কিবলাতাইন। বনু সালামা অঞ্চলে হওয়ার সুবাদে এই মসজিদের প্রথম নাম ছিল- মসজিদে বনু সালামা।
‘কিবলা’ আরবি শব্দ। এর অর্থ নামাজ আদায়ের দিক নির্দেশক। আর ‘কিবলাতাইন’ শব্দ দ্বারা বুঝানো হয় দু’টি কিবলা। মসজিদে বনু সালামায় রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজরত অবস্থায় কিবলা পরিবর্তন করায় পরে এর নাম হয়েছে মসজিদ আল কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ।
গবেষকদের মতে, কিবলা পরিবর্তনের দিন হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই মসজিদে জোহর কারো কারো মতে আসর নামাজ আদায় করছিলেন। জেরুজালেম নগরের বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদমুখি হয়ে নামাজ আদায় করছিলেন তিনি। দুই রাকাত নামাজ শেষ করেছেন। ঠিক এমন সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে নির্দেশ আসে কিবলা পরিবর্তনের। রাসূল (সা.)-কে মক্কা নগরের পবিত্র কাবামুখি হয়ে নামাজ আদায়ের নির্দেশ জানিয়ে দেন হজরত জিবরাইল (আ.)। এই নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথে রাসূল (সা.) নামাজের মধ্যেই কিবলা পরিবর্তন করেন। সাথে সাথে পরিবর্তন করেন তার পেছনে নামাজ আদায় করতে থাকা সাহাবিরা। এ ঘটনার পর থেকেই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে ‘মসজিদ আল কিবলাতাইন’ বা দুই কিবলার মসজিদ হিসেবে।
কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশের ঘটনাটি উল্লেখ আছে পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৪৪ নম্বর আয়াতে। সেখানে ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল হারামের (কাবা শরীফের) দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারা অবশ্যই জানে যে, (এ ধর্মগ্রন্থ) তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে প্রেরিত সত্য। তারা যা করে তা আল্লাহর অজানা নেই। ’
দ্বিতীয় হিজরি মোতাবেক ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবাগণ সর্বপ্রথম মদিনা মুনাওয়ারার বনি সালামা অঞ্চলের খালিদ বিন ওয়ালিদ সড়ক সংলগ্ন এ মসজিদ নির্মাণ করেন। ঐতিহ্যবাহী আরবীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ মসজিদে একসঙ্গে প্রায় দুই হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
https://www.traditionrolex.com/32
মসজিদটির আয়তন তিন হাজার ৯২০ বর্গমিটার। গম্বুজসংখ্যা দুটি, ব্যাস ৮ মিটার ও ৭ মিটার, উচ্চতা ১৭ মিটার। মিনার রয়েছে দুটি।
অতঃপর ১০০ হিজরিতে কিংবদন্তি ন্যায়পরায়ণ শাসক, দ্বিতীয় ওমর নামে খ্যাত খলিফা হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীয (রহ.) ‘মসজিদে কিবলাতাইন’ পুনর্নির্মাণ করেন। এর দীর্ঘকাল পর ৮৯৩ হিজরিতে মসজিদে নববীর প্রখ্যাত খাদেম শুজায়ি শাহিন আল জামালি ছাদসহ ‘মসজিদে কিবলাতাইন’ পুনর্নির্মাণ করেন। এই নির্মাণের ৫৭ বছর পর তুরস্কের উসমানীয় খলিফা সুলাইমান আল কানুনি ৯৫০ হিজরিতে আগের তুলনায় বৃহৎ আয়তনে ‘মসজিদে কিবলাতাইন’ পুনর্নির্মাণ করেন।
মসজিদ আল কিবলাতাইন বছরজুড়ে দেশ-বিদেশের মুসলমানদের আগমনে মুখরিত থাকে। হজ ও রমজান মাসে এই দুই সময়ে মসজিদটিতে মুসল্লিদের ভিড় আরো বাড়ে।
ইহুদিরা সাধারণত কিবলা হিসেবে জেরুজালেমের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে। মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কাবার দিকে কিবলা পরিবর্তন করে মুসলমানদের স্বাতন্ত্র্যতা দান করেন। এ ছাড়া নামাজরত অবস্থায় কিবলা পরিবর্তন করে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও সাহাবাগণ আনুগত্যের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।
মদিনায় আগমনকারী দেশ-বিদেশের মুসলমানরা মসজিদটি পরিদর্শন ও এখানে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মনে আলাদা একটি প্রশান্তি অনুভব করেন। ইসলামের ইতিহাসে মসজিদ আল কিবলাতাইনের আবেদন চির ভাস্বর।