বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল :
২৩ নভেম্বর। বৃহস্পতিবার। ২২ নভেম্বর বুধবার রাতেই মক্কা থেকে চলে আসি মদিনায়। বাসে করে আসতে হয়েছে মদিনায়। মক্কার বাসগুলো একটি নিয়মের ভেতর চলে। আমাদের দেশের বাসের মতো অনিয়ম করা তাদের স্বভাবে নেই! বাসে করে আসছিলাম, কিন্তু তর যেন সইছিল না! ২০১০ সালে উমরাহ পালন করে যাওয়ার পর মনের মধ্যে একটি আশা পোষণ করেছিলাম, কবে আবার মদিনায় আসতে পারবো! মহান আল্লাহর অপরিসীম করুণা যে, তিনি আমাকে আবার প্রিয় রাসুল (সা.)-এর রওজা শরিফে আসার তৌফিক দিয়েছেন! আলহামদুলিল্লাহ!
বৃহস্পতিবার খুব ভোরেই পৌঁছে যাই প্রিয় নবী (সা.)-এর রওজা মোবারকে। ভাবছিলাম, হয়তো এই সময়টাতে মানুষ কম থাকবেন। কিন্তু এই সময়েও অসংখ্য মানুষ দেখে নিজে অভিভূত হয়ে পড়লাম। সত্যিই আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি মানুষের এত ভালোবাসা ও মহব্বত! প্রচণ্ড মানুষের ভিড়ে সামনে এগুতে পারছিলাম না। তাই তো মসজিদে নববীতে বসে বসে দোয়া-দরুদ ও তসবিহ-তাহলিল করে সময় কাটাতে হচ্ছে! ইতোমধ্যে ফজরের সময় হয়ে গেলে নামাজটা পড়ে নিলাম। নামাজ পড়ার সময় এক অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছিল নিজের মনের মাঝে! ভাবছিলাম, এই মসজিদেই নামাজ পড়েছিলেন আমার প্রিয় নবী (সা.)! কাটিয়েছেন তাঁর মাদানি জীবনের দীর্ঘ দশটি বছর! রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশার সময়গুলো স্মরণ হওয়াতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লাম।
মসজিদে নববিতেই ফজরের নামাজটা পড়ে নিলাম। নামাজ পড়েই রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করলাম। তখনই একটি হাদিস আমার মনে পড়লো। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করলো, সে যেন জীবিতাবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করলো। তার জন্য সুপারিশ করা আমার ওয়াজিব’। এই হাদিসটি মনে পড়তেই চোখটা অশ্রুসজল হয়ে পড়লো। মনে পড়ছিল, কিয়ামতের দিন যদি রাসুল (সা.) আমার জন্য সুপারিশ করেন, তবে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে? রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারকে দীর্ঘ সময় অবস্থান করলাম, নফল নামাজ পড়লাম, দোয়া-দরুদ পাঠ করলাম। সত্যিই যতটুকু সময় সেখানে অবস্থান করেছি, নিজের কলবের ভেতর অপরিমেয় প্রশান্তি অনুভব করেছি। এ প্রশান্তির কোনো তুলনা হতে পারে না। প্রিয় নবী (সা.)-এর রওজা মোবারকে আমার স্বজন সুজন এবং প্রিয়জনদের জন্য সালাম পৌঁছাই। তারপর জান্নাতুল বাকির দকে রওনা হই।
জান্নাতুল বাকিকে আরবিতে বলা হয় বাকিউল গারকাদ বা মাকবারাতুল বাকি। সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত একটি কবরস্থান। এটি মসজিদে নববির দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত। পূর্বে এখানে কবরের উপর স্থাপনা ছিল। সৌদ বংশ ক্ষমতায় আসার পর কবরগুলোতে ছোট চিহ্ন রেখে স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে দেয়। ইমাম মালিক (রহ.)-এর প্রাপ্ত সূত্র থেকে জানা যায়, জান্নাতুল বাকিতে অন্তত দশ হাজার সাহাবির কবর রয়েছে। এই কবরস্থানটি ঐতিহাসিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মুহাম্মদ (সা.)-এর অনেক আত্মীয়-স্বজন ও সাহাবিকে দাফন করা হয়েছে। রাসুল (সা.) এই কবরস্থানে অনেকবার এসেছেন। জান্নাতুল বাকির পেছনে একটি ইহুদি কবরস্থান ছিল। পরবর্তীতে উমাইয়া শাসনামলে সেটা জান্নাতুল বাকির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। সেখানে আসলে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। অনেকক্ষণ জান্নাতুল বাকিতে অবস্থান করি এবং সেখানে শায়িত সাহাবায়ে কেরাম ও মাইয়েতদের প্রতি দোয়া-দরুদ পাঠ করি। জান্নাতি হাওয়ায় মনটা ভরে যায়।
জান্নাতুল বাকি থেকে চলে আসার পর মদিনার অনেক ঐতিহাসিক স্থান ঘুরাঘুরি করি। এসময় মদিনার আকাশ-বাতাসে মিশেছিল যেন কর্পূরের ঘ্রাণ। চারদিকে কেমন একটি শান্ত ও নিস্তব্ধ পরিবেশ! রাসুল (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত স্থান বলে এই শহরকে আল্লাহ তায়া’লা প্রশান্তির ছায়ায় ঢেকে রেখেছেন। মদিনার আকাশে কবুতর পাখির উড়াউড়ি এক আনন্দঘন ও ভালোলাগায় ভরিয়ে দেয়। মদিনায় ঘুরতেই মনে পড়ে গেলো রাসুল (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হাসান-হোসাইনের কথা! তাঁদের শৈশবের দুরন্তপনা যেন ইতিহাসের পাতা থেকে আমার চোখে ধরা দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, দ্বীনের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের কথা!
সত্যিই মদিনা সবসময় সারা পৃথিবীর রাসুল প্রেমিকদের ভালোবাসায় সিক্ত থাকে। অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত রাসুল (সা.)-এর শহর মদিনা ঘুরে বেড়ায়। তাঁদের অন্তরের সর্বোচ্চ ভালোবাসার নিদর্শন পেশ করে। অসংখ্য ভাষাভাষী মানুষ প্রতি সেকেণ্ডেই পদাচারণা করে মদিনায়। অথচ কোথাও নেই এতটুকু ক্লান্তি! মক্কা-মদিনা উমরাহ করতে এসে মদিনার আশে-পাশে রাসুল (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো ঘুরে বেড়ালাম। আর আবেগে বিহব্বলিত হচ্ছিল হৃদয়। মদিনায় ঘুরে বেড়ানোর সময় দেখতে পেলাম ইমাম বুখারি (রহ.)-এর নামে নির্মিত মসজিদ। সত্যিই এক ভালোবাসায় মনটা ভরে গেল। বিভিন্ন স্থান ঘুরতে ঘুরতে জোহরের সময় হয়ে গেল। এর একটু আগে কল দেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার কৃতিসন্তান দেলোয়ার হোসেন সেলিম ভাই। সেলিম ভাই একাধারে লেখক ও সাংবাদিক। তিনি দৈনিক জালালাবাদ, দৈনিক ইনকিলাব’র কানাইঘাট প্রতিনিধি এবং কানাইঘাট প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়র সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।বর্তমানে প্রবাসেও তিনি একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। সেলিম ভাই তাঁর মা-বোন এবং ফ্রান্স প্রবাসী ছোট ভাই সুয়েব আহমদকে নিয়ে মক্কা-মদিনায় উমরাহ করতে এসেছেন। কথা ছিল লন্ডনে তাঁর বাসায় দাওয়াত খাবো এবং কিন্তু সেটা আল্লাহর ইচ্ছায় মদিনায় পূর্ণ হলো।
আলহামদুলিল্লাহ। মদিনায় অল্প সময়ের ভেতরে বাকিউল গারকাদ কবরস্থান, মসজিদে আবু বকর, মসজিদে উমার ফারুক, মসজিদে আলী, গামামা মসজিদ ও বিলাল মসজিদ দেখার সুযোগ হলো। নিন্মে মদিনার কয়েকটি ঐতিহাসিক জায়গা সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছিনা। নিম্নে সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো :
১. বাকিউল গারকাদ কবরস্থান : সকালে ও বিকালে জিয়ারতের জন্য খোলা থাকে।
২. কুবা মসজিদ : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজ হাতে স্থাপিত মসজিদ। বাসায় অজু করে এ মসজিদে দু’রাকাত নফল সালাত আদায় করলে ১টি উমরাহ সমান নেকি পাওয়া যায়। এ মসজিদে আসলে যেকোনো মুমিন ব্যক্তির হৃদয় আবেগাপ্লুত হবে।
৩.উহুদ পাহাড় : এটিকে দু’মাথা পাহাড় বলা হয়। ৩য় হিজরিতে উহুদের যুদ্ধে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা হামজা (রা.)-সহ ৭০ জন সাহাবী শহীদ হন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাঁত ভেঙে যায়।
৪.মসজিদে কিবলাতাইন : কিবলাতাইন মানে দু’টি কিবলা। সালাতরত অবস্থায় আল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিবলা পরিবর্তন করে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে কা‘বার দিকে মুখ ফিরানোর নির্দেশ দেন। এটি খালিদ ইবন ওয়ালিদ (রা.) রোডে অবস্থিত।
৫.জুমু‘আমসজিদ : মদীনায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১০০ সাহাবী নিয়ে প্রথম জুমু‘আর সালাত যে স্থানে পড়েছিলেন সেখানে এই মসজিদ নির্মিত হয়।
৬.গামামাহ মসজিদ : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে ঈদের সালাত পড়তেন। একবার তিনি এখানে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার সালাত পড়েছিলেন এবং তখনই বৃষ্টি হয়েছিল। মসজিদে নববির সাথেই এ মসজিদের অবস্থান।
৭.বিলাল মসজিদ : কুরবান রোডে অবস্থিত। মসজিদে নববির খুব কাছে অবস্থিত, খেজুর মার্কেট-এর পাশে। তবেই এটার সাথে বিলাল (রা.)-এর কোনো সম্পর্ক নেই।
৮.আবু বকর মসজিদ : এ স্থানে আবু বকর (রা.)-এর বাড়ি ছিল। পরবর্তীতে এখানে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এটি মসজিদে নববি সংলগ্ন।
৯.উসমান ইবন আফফান মসজিদ : এটি কুরবান রোডে অবস্থিত।
১০.উমার ফারুক মসজিদ : গামামাহ মসজিদের খুব কাছে অবস্থিত। মসজিদে নববি সংলগ্ন।
১১.আলী মসজিদ : গামামাহ মসজিদের খুব কাছে অবস্থিত। মসজিদে নববীর পশ্চিমে অবস্থিত।
১২.ইমাম বুখারি মসজিদ : মসজিদে নববীর উত্তরে অবস্থিত।
১৩.সালমান ফারসির কথিত বাগান : মসজিদে নববীর দক্ষিণে অবস্থিত খেজুর বাগান।
১৪.ইজাবা মসজিদ : মসজিদে নববির পূর্ব উত্তর কোণে অবস্থিত।
১৫.কেন্দ্রীয় খেজুর মার্কেট : মসজিদে নববির সন্নিকটস্থ বিলাল মসজিদ সংলগ্ন পাইকারী মার্কেট।
আল শাজারাহ মসজিদ : মদিনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে ১২ কি.মি. দূরত্বে এটি অবস্থিত। যুল হুলাইফাতে অবস্থিত মীকাত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা যাওয়ার পথে এ মসজিদে সালাত আদায় করতেন। এখানেই মদিনাবাসীদের ইহরাম বাঁধতে হয়।
আলহামদুলিল্লাহ। খুব অল্প সময়েই মদিনার অনেক ঐতিহাসিক স্থান দেখার সুযোগ হলো। যেগুলোর সাথে জড়িত আছে রাসুল (সা.)-এর স্মৃতি। এই জায়গাগুলোর উপর দিয়ে রাসুল (সা.)- হেঁটে গিয়েছেন, এটা ভাবতেই কেমন লাগে! নিজের মধ্যে আনন্দ ও শঙ্কা কাজ করে! না জানি নিজের অজান্তে কোনো ভুল করে ফেলি! শত শঙ্কা আর দ্বিধার ভিড়ে যেন বারবার হৃদয়ে ভেসে আছে রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বত। প্রতিটি মুহূর্তই যেন কাটাতে চায় রাসুল (সা.)-এর রওজা শরিফে। ফিদাকা ইয়া রাসুলুল্লাহ!
খুব সহজেই কেটে গেল একটি দিন। চোখের পলকেই সব শেষ হয়ে গেল। এদিকে যেন শেষ হয়না রাসুল (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো দেখা। মনে হয় জুড়ে থাকি রাসুল (সা.)-এর পুণ্যভূমির পদধুলি হয়ে। ইতোমধ্যে আসর পেরিয়ে মাগরিব হয়ে যায়। মাগরিবের নামাজের সময় দেখা হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী গোলাপগঞ্জের কৃতিসন্তান তরুণ লেখক ও সমাজকর্মী জাহেদ জারিফের সাথে। সে তাঁর পরিবারসহ উমরাহ পালন করতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে এসেছে। তাঁর সঙ্গে একটি দারুণ সময় কাটে। জাহেদ জারিফের ‘প্রবাসে গোলাপগঞ্জের চেনামুখ’ নামক একটি গ্রন্থ পাণ্ডুলিপি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। সে হিসেবে তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব আন্তরিকতার। সেদিন মাগরিব পরে এশার জন্য অপেক্ষা করি। এশার নামাজ পড়ে মনটা কেমন হয়ে যায়। আবার মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে হবে! মনটা কেমন যেন পড়ে থাকতে চায় রাসুল (সা.)-এর রওজার পাশে! ওই রাতেই মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা দিই এবং ঠিক সময়ে পৌঁছাই।
মক্কায় পৌঁছেই হোটেল উঠি। এমন সময় মনে পড়ছিল জসীম উদ দীন এর গান ---‘মনে বড় আশা ছিল যাবো মদিনায়/সালাম আমি করবো গিয়ে রাসুলের রওজায়’। ছোটবেলা থেকে গাওয়া এই সংগীতটির আবেগ-অনুভূতি যেন দ্বিতীয়বারের মতো পূরণ হয়ে গেলো। এর জন্য শুকরিয়া আদায় করতে হবে। অবচেতন মন শুকরিয়ায় নত হয়ে গেল। তাঁর কাছেই জীবনের একটিমাত্র আরজি--‘হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে হেদায়েত করেছ, আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো। তুমি যাদেরকে নিরাপদ রেখেছো আমাকে তাদের দলভুক্ত করো। তুমি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছো, আমাকে তাদের দলভুক্ত করো। তুমি আমাকে যা দিয়েছো, তাতে বরকত দাও। তুমি যে অমঙ্গল নির্দিষ্ট করেছো তা হতে আমাকে রক্ষা করো। কারণ তুমিই তো ভাগ্য নির্ধারণকারী। তোমার উপরে তো কেউ ভাগ্য নির্ধারণ করার নেই। তুমি যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছোম, সে কোনো দিন অপমানিত হবে না এবং তুমি যার সাথে শত্রুতা করেছো, সে কখনো সম্মানিত হতে পারে না। হে আমাদেও প্রভু! তুমি বরকতপূর্ণ ও সুমহান।’ (তিরমিজি : ৪২৬)
হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা পাপ করে নিজেদের ওপর সীমাহীন জুলুম করেছি। তুমি যদি ক্ষমা ও দয়ার দৃষ্টি না দাও তাহলে আমরা নির্ঘাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে উভয়জগতের কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে আখেরাতের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ার লাঞ্ছনা এবং আখেরাতের আজাব থেকে মুক্তি দান করুন। আমরা সেসব কল্যাণ কামনা করছি যা প্রিয় নবী (সা.) আপনার কাছে প্রার্থনা করেছেন এবং ওই সব অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চাচ্ছি- যেগুলো থেকে নবীজি আশ্রয় চেয়েছেন।
হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে পরিপূর্ণ ঈমান এবং অগাধ বিশ্বাস প্রার্থনা করছি। পরকালে তোমার প্রিয় নবীর সান্নিধ্য কামনা করছি। আমাদেরকে তোমার পথের দাঈ হিসেবে কবুল করো। তুমি যেসব আমল ও কথা পছন্দ করো- আমাদেরকে সেসব আমলের তাওফিক দাও।
ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে সাহায্য করো। তোমার রহমত থেকে আমাদেরকে নিরাশ করো না। তোমার প্রিয় বান্দাদের যা দিয়েছো আমাদেরকে তা দান করো। তোমার কাছে আমরা যাবতীয় কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং সমস্ত অকল্যাণ থেকে পানাহ চাচ্ছি।
হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, সৎচরিত্র ও স্বচ্ছলতা প্রার্থনা করছি। তোমার কাছে ক্ষমা, নিরাপত্তা ও সফলতা কামনা করছি। তোমার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাচ্ছি। যেসব আমল জান্নাতে যাওয়ার উসিলা হবে, আমাদেরকে সেসব আমলের তাওফিক দাও এবং যেসব আমল জাহান্নামে নিয়ে যাবে, আমাদেরকে তা থেকে বিরত রাখো।
হে আল্লাহ! আমাদের গোনাহসমূহ মাফ করুন, আমাদের চিন্তা ও পেরেশানি দূর করুন। আমাদের বিপদাপদ অপসারিত করুন, আমাদের জাগতিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করে দিন। যারা অসুস্থ তাদের পূর্ণ সুস্থতা দান করুন।
হে আল্লাহ! মুসলমানদের তুমি হেফাজত করো। কাফেরদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করো। আমাদেরকে দ্বীনের ওপর অটল-অবিচল রাখো। আমাদের সংশোধন করো, অন্তর থেকে হিংসা, বিদ্বেষ দূর করে দাও। পরস্পরে সম্প্রীতি দান করো। আমাদের অন্তরে তাকওয়ার সম্পদ ঢেলে দাও এবং অন্তরকে কলুষমুক্ত করো।
হে আল্লাহ! তুমি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তোমার জন্য কোনো কিছুই অসাধ্য নয়। তুমি আমাদের কাজ-কর্ম সহজ করে দাও। আমরা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তওবা করছি- আমাদের হাতগুলোকে রিক্ত করে ফিরিয়ে দিও না।
হে আল্লাহ! আমরা পাপী, তা স্বীকার করছি। লজ্জিত হয়ে তোমার দুয়ারে তওবার হাত প্রসারিত করেছি। দয়া করে তুমি আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দাও। গোনাহের সমুদ্র থেকে তুলে হেদায়েতের রাজপথে স্থান দাও। আমাদের মন্দকর্মগুলো নেকিতে পরিবর্তন করে দাও।
হে আল্লাহ! তোমার জিকির, শোকর ও ইবাদতের জন্য আমাদের কবুল করো। পুরো উম্মতকে হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখো। সমগ্র পৃথিবীতে হেদায়েতের আলো ছড়িয়ে দাও। সমগ্র পৃথিবী থেকে কুফর ও শিরকের নাপাকি দূর করে দাও। মানুষকে আঁধার থেকে আলোর ভূবনে পরিচালিত করো।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে নবীজির সুন্নত ও আদর্শের ওপর পরিচালিত করো। শতধা বিচ্ছিন্নতা থেকে উম্মতকে হেফাজত করো। উম্মতের ঈমান, আমল, চরিত্র ও জান-মালকে সংরক্ষণ করো। হে আল্লাহ! আমাদের উমরাহ পালন কবুল করো। উমরাহ পালনে আগত সকল মুসলমানকে কবুল করো। উমরাহ পালনে যত আমল হয়েছে সেগুলো কবুল করো।
হে আল্লাহ! যারা যে উদ্দেশ্য নিয়ে দোয়ায় অংশ নিয়েছে, প্রত্যেকের মাকসাদ পূর্ণ করো। যারা আমাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন, তাদের নেক নিয়ত পুরা করো। অসুস্থদের সুস্থতা দান করো, ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দাও, যারা মিথ্যা মামলায় পতিত হয়ে কষ্টের জীবন অতিবাহিত করছে তাদেরকে মুক্তির ব্যবস্থা করো।
হে আল্লাহ! যা কিছু প্রার্থনা করা হলো- তা কবুল করো। যা চাওয়া হয়নি, অথচ আমাদের প্রয়োজন তা আমাদের দান করো। আমাদের প্রয়োজন সম্পর্কে তুমি বেশি জানো, সুতরাং আমাদের সব প্রয়োজন তোমার গায়েবি খাজানা থেকে পূর্ণ করে দাও। আমাদের দোয়াগুলোকে কবুল করো। আমিন।
-----------------
বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল
মদিনা, সৌদি আরব।