বিয়ের যতকথা
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ নভেম্বর ২০২২, ৯:১৬ মিনিট
জুয়েল সাদত
প্রথমে ভেবেছিলাম কাগজের বউ বা কাগজের স্বামী এরকম একটা ইন্ট্রো দিয়ে শুরু করব। তারপর দেখলাম বিষয়টা অনেক বড়। বর্তমানে বিয়েটাই কাগুজে চলে গেছে। আমেরিকায় যে সব বাংলাদেশীরা থাকেন তারা কাগজের বিয়ে যেটা কনট্রাক্ট ম্যারেজ নামে পরিচিত সেই বিষয়টা জানেন বা শুনে অভ্যাস্থ। ৮০ এর দশকে জার্মান সহ নানা দেশ থেকে বাংলাদেশীরা আমেরিকায় এসে দুটো মাধ্যমে লিগ্যাল হন। একটা ছিল ফার্মার হিসাবে বা কন্টাক্ট ম্যারেজ করে। কন্টাক্ট ম্যারেজটা ছিল কোন আমেরিকান বা অন্য যে কোন দেশের আমেরিকান সিটিজেন মেয়েকে টাকার বিনিময়ে চুক্তিমত বিয়ে করে লিগ্যাল হওয়া। সেটায় আবার কেউ একসাথে থাকতেন আবার কেউ থাকতেন না। একটা নির্দিষ্ট সময় পরে সেই মেয়েটির স্পাইজ হিসাবে আমেরিকার রেসিডেন্সিটা পেয়ে যাওয়া। এটাই ছিল কন্টাক্ট ম্যারেজ। সেক্ষেত্রে ঐ মেয়েটাকে গাড়ী বা এককালিন টাকা পরিশোধ করতে হত। এই মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশী না আমেরিকার অভ্যন্তরে শত শত হাজার হাজার বা লাখ লাখ ইলিগ্যাল লিগ্যাল হয়েছিলেন । কাগজহীন প্রবাসী আমেরিকার কাগজ করেছেন। যতটা সহজে বিষয়টা বলছি, বিসয়টা অনেক কঠিন ছিল বা এখনও আছে। অনেক সময় কন্টাক্ট ম্যারেজ করে অনেকেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চেয়ে মুসলিম হিসাবে কনভার্ট করেছিলেন ঐ মেয়টাকে, বাচ্চা ও নিয়েছিলেন। তারপর কাগজ হয়েছে সংসার হয়নি। আবার অনেক মেয়ে ড্রাগের নেশাখোর সে জেলে যায়, তাকে ছাড়িয়ে আনতে হয়, আনেক সময় যায় অনেকদিন পর কাগজ হয়। সেই কন্টাক্ট ম্যারেজ করে লিগ্যাল হয়ে তাকে ডিভোর্স দিয়ে, দেশে গিয়ে আবার বিয়ে করে স্ত্রী এনেছেন। তারাও আছেন সুখে শান্তিতে।। লিগ্যাল হবার এই সহজ পথটা অনেককেই পাড়ী দিতে হয়েছে।
(দুই)
ইংল্যান্ডে কন্টাক্ট ম্যারেজ করে লিগ্যাল হবার শতকরা হিসেব ১ শতাংশ এর অনেক নীচে। যারাই লিগ্যাল হয়েছেন লন্ডনে বিয়ে করে বা রেস্টুরেন্ট এর নানা সিস্টেম এ। ইদানিং আমেরিকায় ও ইংল্যান্ড এ স্টুডেন্ট ভিসা সহজতর করেছে তারা। এটাও একটা কৌশল,কলেজ ইউনিভারসিটি অর্থ সংকটে। আমেরিকায় যদিও স্পাউস নিয়ে আসার সুযোগ কম, একমাত্র হাইয়ার ক্লাসের গবেষনা বা পিএইচডি করতে আসলে স্পাইজ নিয়ে আসা যায়। ইংল্যান্ডে একজন বিবাহিত ছেলে তার স্ত্রী সন্তান ও একজন বিবাহিত মেয়ে স্বামী সন্তান নিয়ে আসতে পারবেন। যারা লন্ডনে আসছেন তারা রিয়েল স্টুডেন্ট বা কম বয়েসী তারা এই সিস্টেমটার অপব্যবহার করছেন। এখন মেয়েরা কন্টাক্ট এ ভুয়া স্বামী নিয়ে এম্বেসীতে যাচ্ছেন অপরদিকে ছেলেরা কন্টাক্ট এ ভুয়া বউ নিয়ে এম্বাসীতে উঠছেন। সিলেটে এই বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। এই অনৈতিক কাজটা লোভী পিতামাতা রা করে যাচ্ছেন। ইংল্যান্ড অবস্থানরত কারও পরামর্শ না নিয়ে কাজটা করছেন। ভিসাটা সহজ করেছে কারন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলো অর্থ সংকটে।
সিলেট থেকে আপনি আপনার মেয়েকে লন্ডন পড়তে পাঠাচ্ছেন। আরেকটি অপরিচিত পরিবারের ছেলের সাথে চুক্তি করে সাজানো স্বামী বানিয়ে কিছু টাকা নিচ্ছেন, মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করাবেন।। একটি ভুয়া কাবিন ও বিয়ের ছবি তুলা হচ্ছে।
এ রকম একটি অনৈতিক কাজে দু পরিবারের লোভ দেখার বিষয়।। লন্ডন পৌছে দুজন দু’ঠিকানায় যাবেন।।
লন্ডনে আন্ডার গ্রাজুয়েট পড়তে বছরে ১১ হাজার পাউন্ড লাগবে।। থাকতে ও আনুষঙ্গিক আরো ৫/৬ হাজার পাউন্ড।।
বাংলাদেশ থেকে এ টাকা কি আপনি দিতে পারবেন? পারবেন না। কারন আপনি এমনিতেই ৭/৮ লাখ খরছ করে ফেলেছেন ধার করে। ছেলেরা হয়ত ফুড ডেলিভারি দিয়ে কিছু পাউন্ড ম্যানেজ করতে পারবে।। তবে কলেজের টিউশন ফি দিতে পারবে না। পড়াশুনা হবে না।
যতই ঘনিষ্ঠজন থাকুক কেউ ৩০ দিনের বেশী বাসায় রাখবে না। রাখার মত তাদের আসলে জায়গা নাই । ২ বেডের ১ বাথরুমের বাসা। চাইলেও পারছে না।। আপনি সেটা সিলেট থেকে বুজতে পারবেন না। আপনি আপনার মেয়েকে এই কঠিন পরিস্থিতি তে ফেলবেন না।।এই ঘটনা ৮৫ শতাংশ লন্ডনের স্টুডেন্ট দের। “যা সহজে পাওয়া যায়, তাতে সমস্যা থাকে “। কাগজের বিয়ে নামে র এই অনৈতিক কাজে আপনি লোভে জড়াচ্ছেন কেন? বাংলাদেশের ইউনিভারসিটি তে পড়ে অনেকেই ভাল করছে।। আপনি অভিভাবক আপনি কোন নেশায় আপনার কোমলমতি সন্তানকে সমুদ্রে ফেলছেন। যে ছেলেটা এক গ্লাস পানি নিজ হাতে নিয়ে খায়নি সে মাইনাস ডিগ্রি তে গভীর রাতে ফুড ডেলিভারির জব করে বাই সাইকেলে , এক পিস পিজা খেয়ে ঘুমায়। বাবা মাকে বলে ভাল আছে।। কলেজে না গিয়ে বলে রীতিমত ক্লাস করে।। মেয়েরা কিভাবে আছে সেটা জেনে নিবেন।।
( তিন)
এক মালায় তিন বিয়ে। সিলেটের মেয়েরা মেধাবী, তাই তারা খুব সহজে স্টুডেন্ট ভিসা পায়, তাই স্পাউস হিসাবে ছেলেদের লম্ডনের নেবার জন্য চুক্তি হচ্ছে। সিলেটের একটি আধুনিক সেন্টারের মালিকের সাথে কথা হল, তিনি জানান এক রাতে তিনটি ফেইক বিয়ে ( কাগজের বিয়ে) হচ্ছে। তারা ৫০০০ হাজার নিচ্ছেন। একজন ফটোগ্রাফার, এক জোড়া মালা,এক বাস্ক মিস্টি , একজন কাজী ও ৭/৮ জন করে আত্বীয় স্বজন। সবই বিয়ের ছবির ফটো সেশন। বেশীর ভাগ ভুয়া বিয়ে হয় রাতের বেলা। সেন্টারের ঐ মালিক জানান, অন্য সেন্টারগুলো ৪০ হাজার চার্জ করে। তিনি মাত্র ৫০০০ হাজার নিচ্ছেন।
কাজী সাহেব সব কাগজপত্র ঠিক করে দেন, কনে শুধু কবুল বলেন না , তবে মেয়ে ও ছেলে জামাই বউ সেজে আসেন সেন্টারে রাতের বলে, মালা বদল,মিষ্টিমুখ করেন। বিয়ের রিয়েলিটির জন্য ছবি ওৃ্ ভিডিও সবই সম্পন্ন হয়ে থাকে। ভুয়া কাগজের বিয়ের জন্য এম্বেসীতে দেখানোর জন্য সেন্টারে সবই সম্পন্ন হয়ে যায়।
সেন্টারে আাসার আগে ছেলে মেয়েকে দেখেনি, বিয়ের ছবি স্যুট করার পর তারা এম্বেসীতে গিয়ে ভিসা ফেস করেন।
কতটুকু নীচে নামতে পারলে সিলেটের দুটো পরিবার এ রকম করতে পারে ভাবলে ই খারাপ লাগে। এ রকম ঘটনা শত শত ঘটছে, নানা সেন্টারে। একদিন একই মালায়, একই কাজী, একই ক্যামেরা ম্যান ৪/৫ টি বিয়ের ফটো স্যুট করেন। মেয়েরা পুরো বউ সাজেন, অনেকটা নাটকের মত ঘটনা। আগে আমরা রাজনৈতিক আশ্রয় পাবার জন্য জেল গেটে ভোরে ছবি তুলা,ভুয়া মিটিং এর ফটো স্যুট শুনেছি, দেখেছি। বর্তমানে লন্ডন যাবার এই কাগজের বিয়েটা আমাদের উদ্বেগ এর কারন হয়ে দাড়িয়েছে।
আমরা চাই অভিভাবক রা এই অনৈতিক কাজটা থেকে সরে আসবেন। সঠিক ছাত্র হিসেবে বিদেশের যাওয়া কঠিন নয়। তবে তা হতে হবে সততায় ও সঠিক মাধ্যমে। যে মেয়েরা লন্ডনে যাচ্ছেন, তারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ঐখানে। ছেলে মেয়েরা লন্ডনে কঠিন বাস্তবতায় বিব্রতকর অবস্থায়।
জুয়েল সাদত
ফ্লোরিডা