লন্ডনের কাঙ্গাল : “এক মালায় তিন বিয়ে”
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ নভেম্বর ২০২২, ৮:৪২ মিনিটজুয়েল সাদত :
রাত ৯ টা, সিলেটের মিরের ময়দান এলাকার একটি অভিজাত হোটেলে জড়ো হতে থাকেন তিন জোড়া বর কনের পরিবার। ৯ টা, সাড়ে ৯ টা ও রাত ১০ টায় সময় দেয়া থাকলেও। সবাই ৯ টার মধ্যে আগে পিছে পৌছান। অভিজাত হোটেলের সবাই প্রস্তুুত। অন্য জায়গায় ৩০/৪০ হাজার দাবী করলেও, এই হোটেলটায় ফ্লাট রেট ৫০০০ টাকা। খাওয়া দাওয়া নেই, শুধু একটি বিয়ের স্টেজ। ফেইক বিয়ের ফটো স্যুট। সিলেট শহরের সবাই ঘরে ফিরছেন, শুনসান নীরবতা। লন্ডনে ছেলে মেয়ে পাঠানোর অনৈতিক কাজে ব্যাস্থ ৬ টি পরিবার। তিন পরিবারের বর কনে সব মিলিয়ে ২০ জনের মত।
ফোটোগ্রাফার ও কাজী সাহেব যথাসময় উপস্থিত। সবচেয়ে বড় কাজটি করেন ফেইক বিয়ের ফটোগ্রাফার যিনি। তিনি ৫ থেকে ১০ হাজরে কাজটা করে দেন। রিয়েল বিয়ের ছবি তুলে দেন, এমন ভাবে কাজটা করে দেন বুঝার উপায় নেই, সেটা অভিনয়।
কাজী সাহেব অরিজিনাল রেজিস্টারি বই নিয়ে আসেন, ১০ / ১৫ হাজারের নীচে কাজটা করেন না। মালা বদল, মিষ্টি মুখ ও দু পরিবারের যৌথ ছবি তুলা হয়। একটি কাজ হয় না, সেটা হল কনে কবুল বলেন না ।।
এক জুটির মালা দিয়ে তিনটি বিয়ে সম্পন্ন হয়। মনে হচ্ছে আমি জুয়েল মিথ্যা বলছি, আপনি ভুল। যেরকম লিখছি, সেরকমই।
তিন পরিবার তিন প্যাকেট মিষ্টি আনলেও এক প্যাকেটে ও এক জোড়া মালায় এক ঘন্টায় তিনটি ফেইক বিয়ে হয়ে গেল।। ঐ হোটেলের বা সেন্টারে কর্তব্যরত কর্মীদের কাছে জিনিসটা খুব স্বাভাবিক তাই, তাদের কোন কৌতুহল নেই। তারা এরকম দেখছে সব সময়।
সেন্টারের মালিকের সাথে কথা হল, কেন এ সুযোগ দিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এদের আটকানো যাবে না। তাদের অনেক টাকা বাচানোর জন্য জায়গা ভাড়া দিলাম ৫ হাজারে। অন্য জাশগায় এর.
চেয়ে ৬ গুন দিতে হবে। তারা যে কাজটা করছে, সেটা অনৈতিক। লন্ডনে গিয়ে এরা কঠিন বাস্তবতা বুঝবে।
রাত তখন সোয়া দশটা ৩ টি সিএনজি ও ২ টা প্রাইভেট কার দাড়ানো গেটে। সেই সেন্টার থেকে সকলকে নিয়ে চলে যায়, যার যার গন্তব্য। কাজী সাহেব ও ফটোগ্রাফার এর টীম, দুটো মোটরসাইকেল এ চলে যান।
সেন্টারের রেজিস্টারি খাতায় ৫ হাজার করে ১৫ হাজার, ফেইক বিয়ে লিখে রাখেন ম্যানেজার।
স্টুডেন্ট ভিসায় স্পাইজ নিয়ে লন্ডন চলে আাসার একটি ধাপ শেষ। তারপর ভিসা আনতে বর কনে ঢাকা যান, সব খরছ কন্টাক্ট এ যাওয়া ছেলের পরিবারের ।। তারপর ভিসা ও হয়ে যায় সহজেই।
ছেলে স্পাউস হিসাবে ওপেন কাজ করতে পারবে, তার পরিবার চালানোর জন্য। এটাই সুযোগ। এসুযোগ টা নিচ্ছেন। বা গোপনে ফ্রান্স, ইতালী চলে যাবে।
তারপর কিছুটা গোপনে টিকেট কেটে পরিবার পরিজন, পাড়া পরশি জানার আগেই সিলেট ছাড়েন । বেশী জানলে অসুবিধে ।।
লন্ডনে পৌছার পর, বর কনে আলাদা ভাবে যার যার গন্তব্য চলে যান এয়ারপোর্ট থেকে । তাদের আর তেমন দেখা হবার সুযোগ কম । পরদিন চুক্তিমত সব টাকা ট্রান্সফার হয়ে যায় মেয়ের বাবার একাউন্টে।
এ এক অনৈতিক খেলার প্রতিযোগিতায় অভিভাবকরা।
লন্ডনে আন্ডার গ্রাজুয়েট পড়তে বছরে ১১ হাজার পাউন্ড লাগবে।। থাকতে ও আনুষঙ্গিক আরো ৫/৬ হাজার পাউন্ড।।
বাংলাদেশ থেকে এ টাকা কি আপনি দিতে পারবেন? পারবেন না। কারন আপনি এমনিতেই ৭/৮ লাখ খরছ করে ফেলেছেন ধার করে।।
ছেলেরা হয়ত ফুড ডেলিভারি দিয়ে কিছু পাউন্ড ম্যানেজ করতে পারবে।। তবে কলেজের টিউশন ফি দিতে পারবে না। পড়াশুনা হবে না।
যতই ঘনিষ্ঠজন থাকুক কেউ ৩০ দিনের বেশী বাসায় রাখবে না ।আপনি আপনার মেয়েকে এই কঠিন পরিস্থিতি তে ফেলবেন না। এই ঘটনা ৮৫ শতাংশ লন্ডনের স্টুডেন্ট দের।
“যা সহজে পাওয়া যায়, তাতে সমস্যা। “