লন্ডন : রোবোটিক জীবনের অকৃত্রিম আনন্দ
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ নভেম্বর ২০২২, ৯:৪২ মিনিটবায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল :
১৬ নভেম্বর। বুধবার। দেখতে দেখতে ২৭ দিন কেটে গেল বিলতে। এই কয়েক দিন ছিলাম আমার প্রিয় নানা মনজুর রাজা চৌধুরীর বাসায়। তাঁর আন্তরিকতা ও ভালোবাসা এবং তাঁর সহধর্মিণী আমার নানির মমতা ছিল স্মৃতিময়। বৈষয়িক জীবনের প্রাণবন্ত সময় কাটিয়ে মায়াকে পেছনে ফেলতে হয়! এক দুর্বিনীত টান ছিন্ন করে সামনে এগুতে হয়। কিন্তু হৃদয়ের বন্ধনকে কখনো ছিন্ন করা যায়। নানা-নানির স্নেহ-মমতার মাঝে যেন সেই বিষয়টি বারবারই উঁকি দিয়েছিল।
বুধবার সকালেই চলে এসেছিলাম প্রিন্সিপাল মাওলানা শোয়াইব আহমদের মাদরাসায়। তাঁর মাদরাসার নাম মারকাজুল উলুম লন্ডন। তাঁর মাদরাসার ঠিকানা 1 Sandringham Rd, London E8 2LR. মাওলানা শোয়াইব আহমদ আমার একজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন বিশিষ্ট আলেমে-দ্বীন, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক। এছাড়া জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন
মাওলানা শোয়াইব আহমদের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা মারকাজুল উলুজ লন্ডনে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাঁর আন্তরিকতায়ই দাওয়াত গ্রহণ করি। ব্রিটেনের মুসলিম কমিউনিটিতে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে অসামান্য অবদান রাখার কারণে তাঁকে মিশরের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ মানসুরা ইউনিভার্সিটি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। উল্লেখ্য, মিশরের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ মানসুরা ইউনিভার্সিটি কর্তৃক প্রতি বছর বিশ্বের তিনজন বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্বকে সম্মানসূচক অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে থাকে।
মাওলানা শোয়াইব আহমদের মতো ব্যক্তিত্বের আন্তরিকতা ও ভালোবাসা আমাকে প্রাণিত করেছে। এছাড়া আমাকে মারকাজুল উলুমে প্রাণবন্ত আতিথেয়তা ও আন্তরিকতায় মাতিয়ে রাখেন মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল মজিদ, হাফিজ সাদিকুল ইসলাম, আশিক আলী। উপরোক্ত ব্যক্তিত্বের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে মাওলানা আব্দুল মজিদের ব্যতিক্রমধর্মী আবেগ-অনুভূতি আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে। তিনি একজন উদারমনা ব্যক্তিত্ব। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তাঁর উদ্যোগ শুনে আমি খুবই অভিভূত হই। তাঁর সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সামাজিক কাজেও তিনি বেশ দরদ নিয়ে কাজ করছেন। আমার মনে হল, মাওলানারা যদি ইমামতি ছাড়াও সমাজসেবায় নিয়োজিত হন, তবে সমাজের মানুষ দ্বীনের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাঁদের ভালোবাসা আমাকে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করে রেখেছে।
মারকাজুল উলুমেই বিশ্রাম নিচ্ছি এমন সময় সংহতি সাহিত্য পরিষদের সভাপতি কবি, ছড়াকার ও নাট্যকার আবু তাহের ভাই এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এহিয়া ভাইয়ের ফোন! তাঁদের সৌজন্যে ডিনারের আয়োজন, এমন প্রিয়জনদের আমন্ত্রণ তো ফেলা যায় না! তাই তো সেখান থেকে চলে যাই ইস্ট সাসেক্সের হেস্টিংসে। সেখানকার একটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট বে স্পাইসে আমাদের সাক্ষাৎ হলো। সেখানে যাওয়ার পথে গাড়িতে এবং রেস্টুরেন্টে
সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো। আবু তাহের ভাইয়ের সৌজন্যে নৈশভোজের আয়োজন হয়। তারপর আবার চলে আসি মারকাজুল উলুম মাদরাসায়।
বুধবারের কার্যক্রম শেষ হয় হাসি খুশি আর সাহিত্য আড্ডার মাধ্যমে। মাদরাসায় রুমে বসে বিশ্রাম নিচ্ছি। আর আমার মনে পড়ছে, মার্গারেট লরেন্সের একটি কথা। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের জীবনে যা আছে তা নয় তবে আমাদের সাথে যারা আছে তারা গুরুত্বপূর্ণ।’ সত্যিই জীবন সংগ্রামে যারা আমার সঙ্গে আছেন, তারাই আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সৃষ্টিকর্তার অপরিসীম নেয়ামত যে, বিলেতে এসে সেইরকম গুরুত্বপূর্ণ মানুষের ভালোবাসায় প্রতিনিয়তই স্নিগ্ধ হচ্ছি। এই ভালোবাসার ঋণ কেবল ভালোবাসাই হতে পারে!
————————
বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল
ইস্ট লন্ডন, যুক্তরাজ্য।