রাজনৈতিক দলগুলির কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল কমিটিতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন নারীউন্নয়ন ফোরাম ও অপরাজিতা নেটওয়ার্ক। মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান তারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মাজেদা রওশন শ্যামলী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন প্রসঙ্গটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজনৈতিক দলগুলো কেন্দ্র থেকে মফস্বল পর্যন্ত সকল কাঠামোয় নারীর অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব পর্যায়ে অবস্থান তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সবচেয়ে বড় সূচকগুলোর একটি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ অনুচ্ছেদ ৯০ (খ) তে বলা ছিল যে, রাজনৈতিক দলগুলির কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব ২০২০ সালের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। ইতিমধ্যেই ২০২২ সাল অতিক্রম করছি আমরা। তথাপি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোসহ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলই এই শর্ত পূরণে সক্ষম হয়নি।
এ সময় তিনি বেশ কিছু সূত্র থেকে সংগৃহিত তথ্যের উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২৪ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রয়েছে। বিএনপির সব পর্যায়ের কমিটিতে ১৫ ভাগ নারী সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পার্টি (জাপা)-তে নারী প্রতিনিধিত্ব¡ রয়েছে ২০ শতাংশ, আর আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপিতে এই হার ১৬ শতাংশ। অন্যান্য দলের মধ্যে সিপিবিতে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও জাসদে ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রয়েছে। এনপিপির ২০ শতাংশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ৬ শতাংশ, গণতন্ত্রী পার্টিতে ১৫ শতাংশ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টে ১ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রয়েছে। কর্নেল অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলিডিপির) কমিটিতে নারী নেতৃত্ব রয়েছে ২২ শতাংশ। কোনো দলেই প্রত্যাশিত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নেই।
তিনি বলেন, ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার ব্যাপারে প্রায় সব দলের দায়সারা অঙ্গীকারের পাশাপাশি কিছু দল সরাসরি এটির বিরোধিতাও করে আসছে। বাংলাদেশের নারীরা যখন এগিয়ে যাচ্ছে এবং নারী নেতৃত্বকে এগিয়ে নেয়ার জন্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাও যখন অব্যাহত রয়েছে, তখন এমন বিরোধিতা নারীদের আবার পিছিয়ে দেওয়ার সামিল।
তিনি আরও বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বিধান কার্যকর করার বিষয়টি ক্রমশই যেনো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে এই শর্ত পূরণের অঙ্গীকার করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে নিবন্ধন নিয়েছিল দলগুলো। নির্ধারিত সময়সীমার পর ইতোমধ্যে দীর্ঘ ২২ মাস পেরিয়ে গেলেও এই শর্ত পূরণে বিশেষ কারও তেমন তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
এ সময় তিনি রাজনৈতিক দলসমূহে ৩৩ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ব্যাপারে নতুন সময়সীমা বেঁধে দেওয়া, ২০২৫ সালের মধ্যে সকল রাজনৈতিক দলের সকল কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ (৩৩ শতাংশ) প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক দলের সম্পাদক মন্ডলীর পদ গুলোর মধ্যে যেকোন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী অর্ন্তভুক্ত কর, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়নে রাজনৈতিক দলের মূল কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণ ও অগ্রগতি নির্বাচন অফিস কর্তৃক নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৩৩ শতাংশ নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার শর্ত যুক্ত করা, রাজনৈতিক দলের কমিটিগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে সম্মেলনের আয়োজন ও উপজেলা এবং জেলার মূল কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর অর্ন্তভূক্তির উদ্যোগ এবং দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলকে সাহসী ও নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও মনোনয়ন বৃদ্ধিসহ মোট সাতটি দাবি উপস্থাপন করেন।
সম্পাদকঃ আব্দুল বাতিন ফয়সল, সহ-সম্পাদকঃ আব্দুল মুহিত দিদার
অফিসঃ সিলেট সিটি সেন্টার, রুম- ৯০৬ (এ), ৯ম তলা,জিন্দাবাজার, সিলেট।
মোবাইলঃ ০১৭১১৩৩৪৬৪১, ০১৭৩০১২২০৫১
email : syfdianews@gmail.com