বিদ্যুত অপচয়ের অজুহাতে মৌলভীবাজার শহর থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইক উচ্ছেদ বন্ধ করার দাবিতে মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজারের পৌর মেয়র বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। ২৮ জুলাই দুপুরে ইউনিয়নের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা সমবেত হয়ে মিছিল সহকারে চৌমুহনা এলাকা প্রদক্ষিণ করে পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি শহীদ সাগ্নিক, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, সহ-সভাপতি মোঃ গিয়াসউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক দুলাল মিয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিমউদ্দিন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ সোহেল আহমদ সুবেল এবং রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিটির নেতৃবৃন্দ। স্মারকলিপির অনুলিপি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক. পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর পেশ করা হয়। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় মানুষ হয়ে মানুষকে টেনে নেওয়ার বদলে ব্যাটারি ও মোটর চালিত এই রিকশায় শ্রমিকরা যেমন তুলনামূলক সহজে কম পরিশ্রমে যাত্রী পরিবহণ করতে পারছেন তেমনি যাত্রী সাধারণের কাছে স্বল্প খরচে আরামদায়ক পরিবহণ হিসেবে এই সকল রিকশা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। যার কারণে বর্তমানে দেশের অনেক জেলায় ব্যাটারি চালিত রিকশা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে; এমন কি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর, জুড়ী, বড়লেখা উপজেলাতেও ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান অবাধে চলছে, এমনকি অনেক উপজেলাতে পা-চালিত রিকশা প্রায় উঠেই গেছে। অথচ একই সময়ে মৌলভীবাজার শহর হতে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদের তৎপরতা চলছে। কিন্তু একই সাথে আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম নিরিহ, দরিদ্র, অবহেলিত রিকশা শ্রমিকদের রুটি রোজীকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে রিকশা উচ্ছেদের তৎপরতা চললেও ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান বিক্রিতে কোন রকম বাঁধা-নিষেধ নেই। যার কারণে এখনও অবাধে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান বিক্রি হচ্ছে, মহল বিশেষও এব্যাপারে নিরবতা পালন করছেন। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে এই রিকশাগুলো তো আমরা তৈরি করিনি; জীবনের শেষ সম্বলটুকু দিয়ে কিনে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্ঠা করছি। যদি এই রিকশা অবৈধই হয়ে থাকবে তাহলে কেন এগুলো আমাদের নিকট বিক্রি করা হলো বা এখনও কেন বিক্রি করা হচ্ছে? বিদ্যুত অপচয়ের জন্য শুধুমাত্র ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যানকে দায়ী করে উচ্ছেদ চালানো হলে শত শত রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় করোনা মহামারি ও সাম্প্রতিক বন্যায় বিপর্যস্ত নি¤œআয়ের জনগণ বর্তমানের দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতিতে দিশেহারা। এরকম সময়ে শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা না করে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত চরম অমানবিক। এখন বিদ্যুত সাশ্রয়ের কথা বলে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান চলতে দেওয়া হচ্ছে না। অতীতেও কখনো দূর্ঘটনার অজুহাতে, কখনো যানজটের অজুহাতে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ করার চেষ্ঠা হয়েছে। দূর্নীতি, সিস্টেম লস ও অব্যবস্থপনার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেও বিদ্যুত সাশ্রয় করা সম্ভব; একই সাথে অনুৎপাদনশীল খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো হলেও নিরীহ রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের জীবিকার উপর খড়্গ হস্ত হতে হবে না। তাই শত শত রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের জীবিকা রক্ষায় আমার অবিলম্বে এই তৎপরতা বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। স্মারকলিপিতে আরও দাবি করা হয় বর্তমান বাজারদরের সাথে তাল মিলিয়ে রিকশা ভাড়া পুণঃনির্ধারণ; যানজট নিরসনে যত্রতত্র অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং বন্ধ; যাত্রী ও শ্রমিকদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত রিকশা স্ট্যান্ড স্থাপন ; রিকশা শ্রমিকদের উপর সকল অন্যায় জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ ও রিকশা-ঠেলা-ভ্যান শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের রেশনিং ব্যবস্থা চালু, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভূক্ত করা এবং শাহমোস্তফা সড়ক ও শ্রীমঙ্গল সড়কের সংযোগস্থলে ট্রাফিক গোল চত্ত্বর নির্মাণ করা।