হাওরের মাটি শহরে এনে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন একটি অসাধু সিন্ডিকেট।
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৪৩ মিনিট
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন সুনামগঞ্জ শহরের অদূরে দেখার হাওরের একাধিক স্পট থেকে মাটি পরিবহণ করে শহরে নিয়ে আসছে অসংখ্য ট্রাক। শহরের বিভিন্ন পাড়ামহল্লার মালিকানাধীন নিচু জমি ভরাটে কাজে লাগানো হচ্ছে এসব মাটি । মাটি বোঝাই এসব ট্রাক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবাধে চলাচল করায় শহরে তৈরী হচ্ছে যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারিও সাধারণ বাসিন্দারা। সুনামগঞ্জের বোরো ফসল ও জীববৈচিত্রের আঁধার দেখার হাওরে অবাধে চলেছে মাটি বিক্রি। হাওরে খাস খতিয়ানভুক্ত কান্দা ও অনাবাদি জমি কেটে ঢামট্রাক দিয়ে আনা হচ্ছে শহরে। এসব মাটি বিক্রি হচ্ছে । নগরায়নের নামে হাওর থেকে মাটি এনে শহরে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর, জলাশয়, খালসহ নিচু জমি। আর এই মাটির ব্যবসা করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন একটি অসাধু সিন্ডিকেট।
গ্রাম থেকে শহর পর্যায়ে রয়েছে মাটি বিক্রির এজেন্ট। আর এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক বা একাধিক প্রভাবশালী। এক্সেভেটর মেশিনের মাধ্যমে হাওরের বিভিন্ন স্থানে মাটি উত্তোলন ও ঢামট্রাকের মাধ্যমে পরিবহন করে শহরে বিক্রির বিষয়টি প্রকাশ্যে চলতে থাকলেও অবৈধ এই মাটির ব্যবসা বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। মাটিবোঝাই ট্রাক চলাচলের সময় মাটি পড়ে সড়কের সৌন্দর্য্য নষ্ট করছে। সড়কের উপরে মাটির প্রলেপ সৃষ্টি হওয়ায় বৃষ্টিবাদলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। অপর দিকে মাটি কাঁটার নামে অবাধে হাওরে কান্দা ও উুঁচু স্থান কেটে কৃত্রিম গর্ত তৈরী করায় পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে হাওরের ভৌগলিক চিত্র। ফসলি জমির ধানের মাড়াই, শুকানোসহ প্রক্রিয়াকরণ কাজে যে কান্দা ব্যবহার হয়ে আসছিল তা কেটে ফেলায় সমস্যায় পড়ছেন কৃষকরা। আপদকালীন সময়ে যেসব উঁচু জমি কৃষকরা ব্যবহার করতেন তা কেটে নিয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সদর উপজেলার গোবিনপুর, বাহাদুরপুরসহ দেখার হাওর সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কাটছে স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এসব মাটি শহরে নিয়ে বিক্রি করছে তারা। মাটির ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী । যাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতে পারেননা কেউই। মাটির ব্যবসা করে রাতারাতি মোটা অঙ্কের টাকার মালিক বনে যাচ্ছেন তাদের অনেকেই। নিজস্ব এজেন্টের মাধ্যমে প্রতি ট্রাক মাটি ২০০০-৩০০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে বলে জানা যায়। গোবিনপুর গ্রামের মহিম তালুকদার বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাক দিয়ে মাটি শহরে প্রবেশ করছে কেউ কথা বলছে না। এসব মাটি কই যাচ্ছে এমন প্রশ্নও করছে না। মাটি পড়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে মাটির আলাদা স্তর তৈরী হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনা ঘটবে । এর দায় তখন কে নিবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘সারা হাওরের উঁচু জায়গা শেষ করি দিরায়। মেশিন দিয়ে মাটি কাইট্টা এই মাটি শহরে বিক্রি করা হইতেছে। মহিনুর মেম্বার, কালা সুহেলসহ শহরের একাধিক মানুষ এই মাটির ব্যবসার নেতৃত্ব দের। কেউ কিচ্ছু কয় না।
হাওরের মাটি শহরের বিক্রির ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নানের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও ফোনকল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে, মাটি কাটার বিষয়টি সরেজমিনে খোঁজ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা ভূমি অফিসার মো. এমদাদুল হক শরীফ।