স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ী
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ৮:৪৭ মিনিট
স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে নিরাপত্তাহীনতা ও মামলা মোকদ্দমায় জর্জরিত এক ব্যবসায়ী। শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন নগরীর শিবগঞ্জ মজুমদারপাড়ার মৃত সামসুদ্দিন খন্দকারের পুত্র মো. আহসানুল করিম খন্দকার মিলু। তাঁর স্থায়ী নিবাস মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাক্ষণবাজার ইউনিয়নের নাসিরাবাদ গ্রামে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন ১৯৯৭ সালের ১১ জুন সামাজিকভাবে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে তাঁর মামাতো বোন কুলাউড়া উপজেলার দিলদারপুর গ্রামের আব্দুল কাদির চৌধুরীর মেয়ে নাজমিন আরা চৌধুরী শিল্পীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সুন্দরভাবেই সংসার জীবন অতিবাহিত করতে থাকেন এবং এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়। ছেলে খন্দকার শামীম ওয়াদির বয়স এখন ২৪ এবং মেয়ে জারিন তাসনিম অবনীর বয়স ১৮ বছর।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০২০ সালে তার স্ত্রীর সাথে মোবাইলে মিস কলের মাধ্যমে পরিচয় ঘটে কুলাউড়ার বরমচাল মাধবপুর গ্রামের মৃত আফতাব উদ্দিনের পুত্র ট্রাভেলস ব্যবসায়ী ফয়েজ উদ্দিন আহমদের। বর্তমানে ফয়েজ উদ্দিন সিলেট নগরীর সুরমা টাওয়ারে এডুকেশন কাউন্সিল নামে একটি ফার্ম পরিচালনা করছেন। যোগাযোগের একপর্যায়ে আমার স্ত্রীর সাথে ফয়েজের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। বিষয়টি নিয়ে স্ত্রীর সাথে প্রায়ই ঝগড়া হতো। ছেলেমেয়েরাও তাদের মাকে বুঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় এবং তাদের সাথেও ঝগড়া হতো। বিষয়টি একপর্যায়ে খারাপের দিকেই যেতে থাকে। আমার স্ত্রী সংসারে অমনোযোগী হয়ে উঠে এবং সকলের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে।
মিলু জানান বিষয়টি নিয়ে আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদসহ পারিবারিক বৈঠক হয়। তারা তাকে বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ২০২০ সালে কোরবানী ঈদে আমার স্ত্রী ছেলে মেয়েকে বেড়ানোর কথা বলে তার পিত্রালয়ে নিয়ে যায়। এরপর থেকে সে আর বাসায় আসতে চায়না। আমি ও আমার আত্মীয়স্বজন অনেক চেষ্টা করেও তাকে আনতে পারিনি। এভাবে সে প্রায় ৬/৭ মাস তার পিত্রালয়ে থাকে। এ সময় আমার ছেলে চলে আসলেও মেয়েকে সে জোরপূর্বক রেখে দেয় এবং অদ্যবধি মেয়ের কোন খোঁজ-খবর পাচ্ছিনা।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার স্ত্রী যাওয়ার সময় প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা নিয়ে যান। ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই সে তালাকনামার একটি নোটিশ পাঠায়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে আরেকটি নোটিশ পান। এভাবে তালাক শুনানীর তিনটি নোটিশ পান সিটি করপোরেশন থেকে। তিন তারিখেই তিনি উপস্থিত থাকলেও তাঁর স্ত্রী শিল্পী আসেননি। আমি জানতে পাই ফয়েজ উদ্দিনের সাথে সে সংসার শুরু করে দিয়েছে। মিলু বলেন, ফয়েজ উদ্দিনকে সাথে নিয়ে তাকে হয়রানী করতে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করছে শিল্পী। এমনকি র্যাব অফিসে আমার নামে কাল্পনিক মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। একইভাবে এসএমপির শাহপরাণ রহ. থানায় এবং কুলাউড়া থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন ফয়েজ উদ্দিন ও তার ভাই মুহিতুর রহমান চৌধুরী (রিপন)।
সংবাদ সম্মেলনে মিলু জানান বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েও তাঁর কোন ক্ষতি করতে না পেরে ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর এসএমপির শাহপরাণ রহ. থানায় গিয়ে শিল্পী এবং ফয়েজ তার বিরুদ্ধে একটি ননজিআর মামলা দায়ের করে। তারা থানার সাবেক ওসি আনিছুর রহমানকে ম্যানেজ করে অভিযোগটি লিপিবদ্ধ করায়। একপর্যায়ে ওসি তাঁর ছেলেকে ফোন করে থানায় যেতে বলেন। থানায় গেলে ওসি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং ২ মাসের মধ্যে সিলেট ছেড়ে চলে যেতে বলেন। তখন এই অভিযোগটি তদন্ত করেন থানার এসআই মো. ইবাদুল্লাহ। তিনি আমাকে ও আমার ছেলেকে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত রিপোর্ট পাঠান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান সংসারে থাকাকালিন তাঁর স্ত্রীর নামে গালফ লেডিস টেইলার্স এন্ড বুটিকস নামে একটি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দ্নে। উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে তার স্ত্রী পূবালী ব্যাংক লিমিটেড চৌকিদেখী শাখা, ইউসিবিএল শিবগঞ্জ এবং এনআরবি ব্যাংক সিলেট শাখায় হিসাব খুলেন। এই হিসাববগুলোতেই তিনি এবং তার স্ত্রী সকল লেনদেন শুরু করেন। সেই সুবাধে তাঁর মালিকানাধীন ঢাকার খিলগাওয়ে অবস্থিত তাঁর বাসার ১৬২ মাসের ভাড়া ৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং ঢাকায় তাঁর নামীয় ফ্ল্যাট বিক্রির ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা উক্ত একাউন্টেই রাখা হয়। এভাবে তাঁর প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা তাঁর স্ত্রী এবং ফয়েজ উদ্দিন আত্মসাৎ করেন। টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে সিলেটের মেট্রাপলিটন ম্যাজিষ্টেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় নাজমিন আরা চৌধুরী শিল্পী, ফয়েজ উদ্দিন আহমদ, আব্দুল কাদির চৌধুরী এবং মুহিবুর রহমান চৌধুরীকে। মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন আদালত। তিনি অভিযোগ করেন এই মামলাটি দায়ের করার পর থেকেই তারা তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি এবং হুমকি ধমকি দিচ্ছে। তাদের অব্যাহত হুমকির কারণে ১৬ অক্টোবর শাহপরাণ রহ. থানায় তিনি একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সিলেটের প্রশাসনের সকল মহলের কাছে নিরাপত্তার জন্য সহায়তা ও ফয়েজ চক্রের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান।