আতহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরোনো কিছু গল্প
সিলেট এক্সপ্রেস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ৮:৫০ মিনিটশাহেদ আব্দুর রকীব :
(১)
আতহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলেজের রিইউনিয়ন হলো আজ। আজ বিকেলে বন্ধু মুরশেদের টাইমলাইনে রিইউনিয়ন আনন্দমিছিলের ভিডিও দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ফোন দিয়েছিলাম। জানালো যে আজকেই হচ্ছে প্রোগ্রামটা। মনটা খানিকটা খারাপ হলো। জানতে পারলে আব্বাকে (কবি মুহাম্মদ আব্দুর রকীব) নিয়ে যাবার চেষ্টা করতাম, তিনি অনেক বেশি খুশি হতেন।
আতহারিয়া স্কুলের গল্প আব্বার কাছে অনেক শুনেছি। মছকাপুর গ্রামে অবস্থিত স্কুলটির উদ্যোক্তা/প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক ছিলেন কোতোয়ালপুর/কটালপুর গ্রামের জনাব ইরমিছ আলী সাহেব। প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন শ্রীরামপুর গ্রামের মৌলভী আব্দুর রাজ্জাক সাহেব। মছকাপুর গ্রামের একজন দ্বীনদার (অলি) মানুষের নামে স্কুলটির নামকরণ করা হয়েছিলো।
একটা সময় স্কুল নিয়ে কোন না কোন কারণে বিরোধ তৈরী হয়ে যায়। গ্রামে গ্রামে বিরোধ। অচলাবস্থা তৈরী হয়। বিচার-বৈঠক-স্থানীয় প্রচেষ্টা কিছুতেই কোন সমাধান হয়নি। আসাম শিক্ষা ডিপার্টমেন্ট থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় কিন্তু তাতেও কোন সুরাহা হয়নি। (শিক্ষা ডিপার্টমেন্ট থেকে স্কুলটি সহায়তা পেতো)। ইরমিছ আলী সাহেব নিজের বাড়িতে নতুন দুটো স্কুল দাঁড় করিয়ে নিলেন। একটি বয়েজ স্কুল এবং অন্যটি গার্লস স্কুল।
অমন একটি পরিস্থিতিতে ১৯৫০/’৫১ সালের কোন এক সন্ধ্যায় আব্বা আরো দু’জন তরুণকে সঙ্গে করে ইরমিছ আলী সাহেবের কাছে গিয়েছিলেন তাঁকে সম্মত করানোর জন্য। একজন ছিলেন মছকাপুর গ্রামের মরহুম ডাক্তার নজরুল ইসলাম (নজীব আলী) সাহেব (আত্মীয় সম্পর্কে তিনি আব্বার চাচা হন) এবং পীরবাড়ির জনাব জিয়া উদ্দীন সাহেব। এঁরা দুজনই ইরমিছ আলী সাহেবের সরাসরি ছাত্র ছিলেন।
সেদিনের আগে ইরমিছ আলী সাহেবের সাথে আব্বার কখনো দেখাসাক্ষাৎ কিংবা পরিচয় ঘটেনি। একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে আব্বা তাঁকে জানতেন আর তিনিও আব্বাকে একজন তরুণ সমাজকর্মী হিসেবে চিনতেন, দুজনের পারষ্পরিক জানাশোনা এইটুক ছিলো। আব্বাকে তিনি সাদরে গ্রহণ করেছিলেন।
প্রথমদিন উনার সাথে আব্বার দীর্ঘসময় ধরে কথা হয়েছে কিন্তু তিনি অটল ছিলেন। দ্বিতীয়দিন আব্বা আবারো তাঁর বাড়িতে যান। এবার তিনি নরম হোন। বলেছিলেন, ঠিক আছে আপনারা তাহলে আবার শুরু করুন, আমি আর বাদ-বিসম্বাদে জড়াবো না। আব্বা তাঁকেই আবার স্কুলটির হাল ধরার জন্য অনুরুধ জানালে উত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন- এতোবেশি তিক্ততা ঘটে গেছে, এরপর আমার আর সেখানে কাজ করাটা ঠিক হবে না।
আব্বা স্কুলটির হাল ধরেছিলেন। আব্বার হাতেই সবাই দায়িত্বটা তুলে দিয়েছিলেন। যাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তাঁরাও আবার বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সহযোগিতার হাত। স্কুলটির জন্য তিনি স্বয়ং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান সংগ্রহ করে এনেছেন এবং একজন (অবৈতনিক) শিক্ষক হিসেবে ছাত্র পড়িয়েছেন। তিনি সেখানে ৬/৭ মাস সময় দিয়েছেন শিক্ষকতায়।
(২)
বছর বিশেক আগের আরেকটি ছোট্ট গল্প। বড়ভাইয়ের কাছ থেকে শুনা। দীর্ঘদিন পর আব্বা স্কুলটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। স্কুলের কাছে এলে গাড়ি থেকে তিনি নেমে গিয়েছিলেন। বড়ভাইকে বলেন, স্কুলটা একটু দেখে যাই, একটা সময় আমার কিছুটা সম্পৃক্ততা ছিলো এটাতে।
একটা ক্লাসে তিনি ঢুকেছিলেন। ক্লাসের টিচার ভদ্রলোক “উনি পরিদর্শনে এসেছেন” এরকম একটি বিদ্রুপাত্মক টিপ্পনি কেটে কথা বলেছিলেন পেছন ফিরে। আব্বা সেদিন কষ্ট পেয়েছিলেন। সেই টিচার ভদ্রলোকের দৃষ্টি অতোটা গভীরে যাবার কথা না – কীসের টানে ৭০/৭৫ বছরের এক বৃদ্ধ মাঝপথে গাড়ি থেকে নেমে একটি স্কুলের বাচ্চাদের দেখতে আসে…
*** সবশেষে সকল আতহারিয়ানের জন্য শুভেচ্ছা, অভিনন্দন।
লেখক কবি ও ব্যাংকার
শাহেদ আব্দুর রকীব
১৭.০১.২০২০