হারান কান্তি সেন :

কারো কারো মত- জন্মদিন আমার মনে থাকে না-ফেসবুক মনে করিয়ে দেয়; এমন কথা বলছি না!আসলে জন্মদিন আসার কয়েকদিন আগে থেকেই আমি অধির আগ্রহে অপেক্ষায় থাকি বিষয়টা নিয়ে এবং মনে করি জীবনের আরেকটি জন্মদিন আমার মুখোমুখি হচ্ছে সেটা কম বড় কথা নয়!!!তবে আমি যে প্রজন্মের আমাদের কারোর’ই জন্মদিন কোন ভাবেই পালন হতো না!এখন ফেসবুক নামক জনপ্রিয় মাধ্যম সব বয়সের মানুষের মাঝে এই জন্মদিন পালনের একটা অলেখা নীতি করে নিয়েছে!!!জন্মদিন আর বিবাহ দিন এখন এক শক্তিশালী শিল্পে(!) রূপ নিয়েছে!আমার মতে এই মধ্য বয়সে জন্মদিন পালন মানে মৃত্যুর পথে আরেকটি বছর এগিয়ে যাওয়া!কারণ পরম করুণাময় আমাদেরকে পৃথিবীতে একটা নির্দিষ্ট সময়ের দম দিয়ে পাঠিয়েছেন এবং সময় শেষ হলে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া সুনিশ্চিত!আমি যেহেতু মৃত্যুকে ভয় পাই তাইতো এগিয়ে আসা মৃত্যু’র দিনকে বরণ করার দিবস কেক কেটে পালন করার মত এত বোকা আমি নয়!!!
এবার জন্মদিনে কয়েকটি বিষয় আমায় অন্য রকমের আনন্দ দিয়েছে যা সত্যি অমূল্য (!) এবং তা একে একে উল্লেখ করছি-
(ক) ফেসবুক ফ্রেন্ড এবং পূর্ব পরিচিতা সুগায়িকা কাকলী দত্ত চক্রবর্তী আমাকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানতে গিয়ে আমার টাইম লাইনে লিখেন-“আমার মায়ের প্রিয় একজন মানুষ, আর প্রিয় হওয়ার কারণ পত্রিকা, আমার মা পত্রিকা পড়তে খুব ভালোবাসতেন, খুঁজে খুঁজে বের করতেন হা কা সে’র লিখা,খুব মন দিয়ে পড়তেন,,ভালো থাকুন সব সময়, শুভ জন্মদিন দাদা”!
আজ তার মা বেঁচে নেই!তিনি জীবিত থাকলে লেখক হিসেবে আমার সেরা প্রাপ্তি এই মায়ের চরণ ধুলি নিয়ে নিজেকে সার্থক করতাম!
(খ)আজ থেকে প্রায় ২৮/৩০ বছর আগে সিলেটের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জনাব লোকমান আহমদের মালিকানায় তাঁর বড় বাজার আবাসিক এলাকার বাসভবন থেকে প্রখ্যাত সাংবাদিক ইকবাল কবিরের সম্পাদনায় “দৈনিক আজকের সিলেট” বেরুতো।তখন শ্রদ্ধেয় কবির ভাইয়ের অনুরোধে এই পত্রিকায় আমি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে প্রতি সোমবার রম্য কলাম “হাতে হারিকেন” এবং প্রতি শনিবার “দৈনিক সিলেটের ডাক”-এ রম্য কলাম “গোল সমাচার ” লিখতাম!আমার এবারের জন্মদিনের শুভেচ্ছায় স্কুল জীবনের সহপাঠী-বন্ধু প্রিন্স সদরুজ্জামান সে’ই “হাতে হারিকেন” শব্দটি উল্লেখ করে আমায় আপ্লুত করেছেন!
(গ)আমার জন্মদিন ১০ জুলাই আসার অন্তত: সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে বিভিন্ন চ্যারিটি আমায় নোটিফিকেশন পাঠায় তাদের সংস্হায় সেবা খাতে দান করার জন্য নিজের আত্মীয় স্বজনের কাছে বার্তা পাঠানোর।এতে সাড়া দিয়ে আমি নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশের বিদ্যানন্দ পরিচালিত “এক টাকায় আহার”-কে বেছে নেই এবং এখানে উল্লেখযোগ্য দান করে আমায় আপ্লুত করেছেন কল্যানীয়া পল্লবী তালুকদার!

সবশেষ বলছি আমার এই জন্মদিনে সাক্ষাৎে, ফোনে,ম্যাসেঞ্জারে,ফেসবুকে,হোয়াটসআপে যারা কাছে ও দূরে থেকে আমায় শুভেচ্ছা ও আশির্ব্বাদে আপ্লুত করেছেন তাদের সবার কাছে আমি চির কৃতঞ্জ থাকবো!
এবার “ধান বানতে শিবের গীতের”-মত একটা বিষয় লিখছি ;আসলে হঠাৎ মনে আসলো তাই ভাবলাম এখন না লিখলে ভুলে গিয়ে হয়তো আর কোনদিন লিখা হবে না!আমি সাধারণত: লিখা শুরু করি নিজের আনন্দে এবং প্রথম প্রথম ভাবতাম এগুলো বোধহয় কেউ পড়ে না!!!তারপরও নিজের লিখা ছাপার অক্ষরে দেখে বেশ ভালো লাগতো!!!এরপর লক্ষ্য করলাম আমার লিখা যেদিন পত্রিকায় ছাপা হতো সেদিন বিভিন্ন বয়সের অনেকই পড়তেন এবং কয়েকদিন ধরে তারা এ সম্পর্কে আমায় মতামত দিতেন যা শোনে নিজেকে সার্থক মনে হতো!
তখন অনেকেই আমার নামের সাথে পরিচিত ছিলেন! কোন সামাজিক অনুষ্ঠান গেলে নতুন কারো সাথে পরিচিত হলে ওই সময় পত্রিকায় প্রকাশিত লিখা নিয়ে কেউ কেউ কথা বলতেন!!!তখন মনে মনে কৃতঞ্জতায় আবদ্ধ করতাম আমার লিখালিখির গুরু বিশেষ করে আমাকে যিনি রম্য রচনা লিখার জন্য প্রথমে উৎসাহিত করেছিলেন তিনি গল্পকার সেলিম আউয়ালকে!
তো ২০০৭ কিংবা ২০০৮ -এর কোন একদিন ভাটী অঞ্চলের গ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেছি!ওখানে সাহিত্যমোদি একদল কিশোর-কিশোরীর সাথে দেখা হলে যাদের কেউ কেউ পত্রিকায় আমার লিখাও পড়ে বা পড়েছে বলে জানালো! এদের একজন আমায় হঠাৎ জিঞ্জেস করে-” লেখার জন্য আপনি এখন পর্যন্ত কোন কোন পদক বা এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন??? “
উত্তরে বললাম আমি এখন পর্যন্ত লিখা-লিখির জন্য কোন পুরস্কার পাইনি!তারা আমার মুখের এমন কথায় অপ্রস্তুত ছিল!
তখনই কিছু না ভেবে এদের একজন বললো-“কেন???”
আমি ছোট্ট করে বললাম এ্যাওয়ার্ড বা পদক পাওয়ার মত এত বড় লেখক আমি এখনো হইনি!
আমার কথাটি শোনে তারা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেল!!!
সবার জীবনের প্রতিটি দিন হোক স্রষ্টার মমতায় অসীম আনন্দের!
(লেখার শিরোণামে আমি যে লাইনটি ব্যবহার করেছি তা হলো দারাশিকো পরিচালিত বাংলা চলচ্চিত্র ‘ফকির মজনু শাহ’-‘র গান যেটি লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার সুর করেছেন আলাউদ্দিন আলী এবং অত্যন্ত দরদী কন্ঠে গেয়েছেন রথীন্দ্র নাথ রায়।)

১৬ জুলাই’২৩
মিশিগান,USA